চিকিৎসকেরা ছুটি দিলেও গ্রামে একঘরে হওয়ার আশঙ্কায় এনসেফ্যালাটিসে আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে ফিরিয়ে আসতে রীতিমত ভয় পাচ্ছেন পরিবারের লোকজন। ওই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ সুস্থ না হলে রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন না বলে রোগীর পরিবারের লোকজন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছেন। আসলে রোগটা যে ছোঁয়াচে নয়, সে বিষয়ে গ্রামগঞ্জে সে ভাবে প্রচার না-হওয়ার কারণেই সর্বত্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে নানান মহল থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। সরব হয়েছেন রাজনৈতিক নেতারাও।
ফালাকাটার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা বাম আমলের কয়েক দফার মন্ত্রী যোগেশ বর্মন বলেছেন, “নির্বাচনের সময় যে ভাবে ঘন ঘন রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার করে আজ এই মারণ রোগ থাবা বসালেও কেন কোনও রকম প্রচার করা হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। শুধু মশার জন্মানো রোধ করা নয়, রোগটি যে ছোঁয়াচে নয় তা নিয়ে প্রচার হচ্ছে না।” ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারীর দাবি, “ইতিমধ্যে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ পঞ্চায়েত সমিতি এবং প্রধানদের নিয়ে আমি বৈঠক করে সচেতনতা প্রচার করার জন্য বলেছি। প্রয়োজনে যাতে সে কাজে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে যুক্ত করানো হয় তা বলা হয়েছে।”
তবে প্রচার করার বৈঠকই যে সার তা স্পষ্ট হয়েছে বিধায়কের দলের দখলে থাকা জটেশ্বর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের কথাতেই। আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ব্লকের ধুলাগাঁও গ্রামে বছর আটষট্টির বৃদ্ধ প্রভাত রায়কে গ্রামে ফেরানো ব্যাপারে সমস্যা নিয়ে এলাকার তৃণমূলের উপপ্রধান জীবন মিত্র বলেন, “আমরা সে ভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার অবশ্য করিনি। তবে আশা কর্মীরা তো বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসছেন। তা ছাড়া মাইকে রোগ সম্পর্কে প্রচার তো হচ্ছে। তাছাড়া এ ধরনের বৈঠক করলে লোকজন খুব একটা আসেন না বলে বসিনি। তাঁদের সঙ্গে লোকজনকে বুঝিয়ে ভুল ভাঙাতে আজ বুধবার আমি গ্রামে যাব।”
গত ২৪ জুলাই প্রভাতবাবুকে বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে দিন থেকে তাঁর জ্বরের পাশাপাশি কথাবার্তাও বন্ধ হয়ে যায়। ২৬ জুলাই তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। সে দিন থেকে প্রভাতবাবু সেখানে চিকিসাধীন রয়েছেন। তবে এখনও তিনি সুস্থ নন। তিনি লোকজনকে চিনতেও পারছেন না বলে তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার চিকিৎসকেরা তাঁকে বাড়ি নিয়ে শুশ্রূষা করার জন্য পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছেন। প্রভাতবাবুর ছোট ছেলে ও স্ত্রী মেডিক্যাল কলেজে তাঁর দেখভাল করছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ শোনার পর ছোট ছেলে অনুপম গ্রামের বাড়িতে দাদা নিরুপমকে ফোন করেন। সে সময় তিনি জানিয়ে দেন, “বাবাকে পুরোপুরি সুস্থ করে না আনা হলে গ্রামে আমাদের অসুবিধা হবে।”
১৮ কিলোমিটার দূরে ফালাকাটায় রোজ এসে টিউশন দেন নিরুপম। ধুলাগাঁও গ্রামের ঘরের দাওয়ায় বসে তিনি বলেন, “লোকজন বাবাকে নিয়ে আলোচনা করছেন। তাঁকে যে মশা কামড়াবে তা যদি অন্য কাউকে কামড়ায় তা হলে সে থেকে অনেকের মধ্যে রোগটা ছড়াবে বলেও অনেকে বলাবলি করছেন। আমি জানি তাতে রোগ ছড়ায় না। স্বাস্থ্য দফতরের থেকে দুয়েক বার মাইকে মশা মারার জন্য প্রচার করা হলেও রোগটি যে ছোঁয়াচে যে নয় তা বলা হয়নি।” এরপরে তিনি বলেন, “তা ছাড়া বাবা তো সুস্থও হয়নি। আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্যই বাড়ি আনতে বারন করেছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy