আধুনিক চিকিত্সা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনতে বর্ধমান জেলার দু’টি জায়গায় মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আসানসোল ও কালনায় তিনশো শয্যার এই দুই হাসপাতাল গড়া হবে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। সেখানে প্রচলিত বিভাগগুলির পাশাপাশি নানা আধুনিক বিভাগও থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে মোট ৬টি এমন হাসপাতাল গড়া হবে। তার মধ্যে এই জেলায় দু’টি। আসানসোলের হাসপাতালে বর্ধমান ছাড়াও বীরভূম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার রোগীরা সুবিধা পাবেন। তেমনই কালনার হাসপাতালে লাগোয়া নদিয়া, হুগলির বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ পরিষেবা পাবেন।
আসানসোল ও কালনায় আগে একটি করে মহকুমা হাসপাতাল ছিল। পরে আসানসোল স্বাস্থ্য জেলা গড়ার পরে এখানকার হাসপাতালটিকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। সে কাজ শেষ হলেও বহু জটিল রোগের চিকিত্সার জন্য রোগীদের বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের উপরেই নির্ভর করতে হবে বলে চিকিত্সকদের মত।
থাকবে যা যা
• ৩০০ শয্যার হাসপাতাল।
• দশ তলা ভবনের ভাবনা।
• থাকছে সিসিইউ, আইসিইউ-সহ নানা বহুমূল্য যন্ত্রপাতি।
• খরচ সাধ্যের মধ্যে, বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
• থাকবে প্লাস্টির সার্জারির মতো নতুন বিভাগও।
আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে একাধিক বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। কিন্তু কালনায় তেমন ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। এ দিকে কিছু বেসরকারি হাসপাতালে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে অনেক সময়েই। এ বার দুই জায়গাতেই একটি করে মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে কম খরচে আধুনিক চিকিত্সার সুযোগ করে দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের এক আধিকারিক জানান, অর্থ দফতরের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। তবে এখনও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।
তিনি বলেন, “ভবন-সহ অন্য আনুষঙ্গিক পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। এর পরে তা পেশ করা হবে অর্থ দফতরে। তার পরেই বাজেট বরাদ্দ করা হবে।”
ঠিক কবে নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে তা এখনও পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে আসানসোলের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনিকাঞ্চন সাহা জানান, আসানসোলের নার্সিং হস্টেলের সামনে নতুন হাসপাতালের ভবন গড়া হবে বলে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দশ তলা ভবন গড়া হবে। সাধারণ হাসপাতালের যাবতীয় চিকিত্সার সুযোগ তো এই নতুন হাসপাতালগুলিতে থাকবেই। তার সঙ্গে যে সমস্ত বিভাগ বর্তমানে অন্য সরকারি হাসপাতালে নেই (যেমন প্লাস্টিক সার্জারি), তেমন নতুন নতুন বিভাগ গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া আধুনিক সিসিইউ, আইসিইউ-সহ বহুমূল্য যন্ত্রপাতি থাকবে। আসানসোলের হাসপাতালটি কোথায় গড়া হবে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হলেও কালনার কোথায় হাসপাতাল গড়ে উঠবে তা এখনও ঠিক হয়নি।
বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “আসানসোল, কালনা, কাটোয়ায় আধুনিক হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়া হয়ে গেলে বিশেষ করে দুঃস্থ বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।”
তবে মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালানোর মতো লোকবল সব সময় মিলবে কি না, সে নিয়ে কিছুটা সংশয়ে চিকিত্সকদের একাংশ। তাঁদের মতে, বেসরকারি হাসপাতালে ভাল পারিশ্রমিক সত্ত্বেও খুব ভাল চিকিত্সকেরা বেশি দিন থাকতে চান না। এই ধরনের হাসপাতালে যে ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, তার জন্য দরকার বিশেষজ্ঞ কর্মী। তাঁদের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটে থাকে। এ সমস্ত কিছুর জন্য সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল মাঝে-মধ্যেই সমস্যায় পড়ে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
কিছু চিকিত্সক অবশ্য রাজ্যের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। দুর্গাপুরের এক বেসরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের কর্তা তথা চিকিত্সক সত্যজিত্ বসু যেমন বলেন, “স্বাস্থ্য হল রাজ্যের বিষয়। রাজ্য সরকার যদি এ ভাবে এগিয়ে আসে তাহলে দারুণ ব্যাপার। বহু মানুষ উপকৃত হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy