Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চিকিৎসার খরচ পাচ্ছেন না জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা

ধূপগুড়ির বাসিন্দা শঙ্করী দেবনাথ এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সিসিইউ’তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ইতিমধ্যেই শঙ্করীর ওষুধ কিনতে ও এমআরআই করাতে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা তার পরিবারকে অন্তত ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।

এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হলেও হুঁশ নেই। মহানন্দার পাড় এলাকায় অবাধে ঘুরছে রোগের বাহক শুয়োর। বুধবার শিলিগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হলেও হুঁশ নেই। মহানন্দার পাড় এলাকায় অবাধে ঘুরছে রোগের বাহক শুয়োর। বুধবার শিলিগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

ধূপগুড়ির বাসিন্দা শঙ্করী দেবনাথ এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সিসিইউ’তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ইতিমধ্যেই শঙ্করীর ওষুধ কিনতে ও এমআরআই করাতে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা তার পরিবারকে অন্তত ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।

একই পরিস্থিতি সুপ্রিয়া রবিদাসদেরও। তাঁর ছেলে বিশ্বজিৎ রবিদাসও এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালের সিসিইউ’তে ভর্তি রয়েছেন। বিপিএল পরিবারের বাসিন্দা সুপ্রিয়া দেবী ছেলের চিকিৎসার জন্য চেয়েচিন্তে এরমধ্যেই দশ হাজার টাকা খরচ করেছেন।

সরকারি ভাবে ওই রোগীদের সমস্ত খরচ বহন করা হবে বলে জানানো হলেও বাস্তবে কিন্তু এই রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সমস্ত রোগীকেই নিজেদের অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এরজন্য ক্ষোভও বাড়ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর পরিবারের লোকরা যদি খরচ করেও থাকেন পরে তাঁরা সেই টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন।

হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বিজয় থাপা বলেন, ‘‘চিকিৎসার খরচ হাসপাতালের তরফেই দিয়ে দেওয়া হয়। কেউ না পেয়ে থাকলে দফতরে যোগাযোগ করলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতি দেখতে যান শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের তরফেই চিকিৎসার খরচ দেওয়া হবে। রোগীর পরিবার টাকা খরচ করে থাকলে তার হিসাব দেখালেই হবে। তারা ওই টাকা ফেরত পাবেন।’’

কর্তৃপক্ষের ওই দাবি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন রোগীদের পরিবারের লোকেরাই। শঙ্করী দেবনাথের দাদা বিপদবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার খরচ মিলছে না। কষ্ট করে আমাদেরকেই টাকা জোগাড় করতে হচ্ছে। এখনও রোগী বেহুঁশ হয়ে রয়েছে। কোথা থেকে খরচ জোগাব বুঝতে পারছি না।’’ ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন শঙ্করীদেবী।

কোচবিহারের বাসিন্দা বিশ্বজিৎও ২৫ জুন থেকে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি। তাঁর মা সুপ্রিয়া দেবী বলেন, ‘‘বুকে ব্যাথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। এখন হুঁশ নেই। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার খরচ মিলছে না। ওই খরচ পরে পাওয়া যাবে বলে কেউ জানাননি।’’ ধার দেনা করে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি।

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত ধূপগুড়ির বাসিন্দা মণি বিশ্বাস। তাঁর মেয়ে জানান, ঝর্না বিশ্বাস জানান, তাঁদেরও অনেক ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে অন্তত ১২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনের রক্তে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছে। বাকিদের খিঁচুনি জ্বর, বমি, বেহুঁশ হয়ে যাওয়ার উপসর্গ থাকলেও জীবাণু ধরা পড়েনি। তাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা সিসিইউ’তে ভর্তি রয়েছেন।

এ দিকে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারপাড়ার বাসিন্দা প্রবাল রায়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেলের পরে এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে সুকুমার বর্মণ নামে আরও এক রোগীকে ভর্তি করানোর হয়েছে। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছ থেকে জেনেছি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল এবং জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে জেলার দশ জন রোগী এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE