কথা বলতে বলতে গলা বুজে আসছিল অনেকের। অর্ধেক বলার পরে অনেকেই প্রেক্ষাগৃহে হাউহাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। কেউ অকালে ছেলেকে হারিয়েছেন, কেউ মেয়েকে, কেউ আবার স্ত্রী, শ্যালক বা জামাইবাবুকে।
একটাই অভিযোগ তাঁদের চিকিৎসায় অবহেলা। ডাক্তারবাবুদের গাফিলতিতেই তাঁদের জীবন অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষোভ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে। তাঁদের কথায়, ইচ্ছাকৃত ভাবে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের আড়াল করার চেষ্টা হয় কাউন্সিলে। তাই বছরের পর বছর মামলা চলতে থাকে। অভিযোগকারী বিচার পান না।
রোগীর আত্মীয়দের নিয়ে গড়া সংগঠন ‘পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’-এর ১৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার রোটারি সদনে এক আলোচনাসভায় একত্র হয়েছিলেন এমন অনেকে, যাঁরা চিকিৎসা-বিভ্রাটে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। সংগঠনের প্রধান, প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা বললেন, “দোষী ডাক্তারদের শাস্তি দিতে স্বাস্থ্য দফতর এবং রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের আগ্রহই নেই।”
অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি রাজীব গণচৌধুরীর দাবি, “আমাদের ১২টি পেনাল কমিটি মাসে চারটি বৈঠক করে। কাউন্সিল মিটিং হয় মাসে দু’টি। পুরোদমে কাজ হচ্ছে।” তাঁর অভিযোগ, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে অসংখ্য কেস জমে ছিল। সেগুলো শেষ করতেই প্রাণান্তকর অবস্থা। ২০০৫, ২০০৬ সালের কেস মেটাতে হচ্ছে এখন। একাধিক চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিলও হয়েছে।
এমন দাবিতে কোনও আশ্বাস দেখছেন না অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ, তাপস মিদ্যা বা শেফালি লাহিড়ীরা। ২০১০-এ চিকিৎসক শেফালিদেবীর মেয়ে হার্নিয়া অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। বাড়ির লোক অস্ত্রোপচারের পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করে, কথা বলে ফিরে যান। ভোরে হাসপাতাল থেকে ফোনে জানানো হয়, ‘মাল্টিপল অর্গ্যান ফেলিওর’-এ মারা গিয়েছেন তিনি। শেফালিদেবীরা জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারের পরেই শরীরের ভিতরে প্রচণ্ড রক্তপাত হচ্ছিল। কিন্তু কোনও ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশ্যালিস্ট রাতে ওখানে ছিলেন না বলে সেটা ধরাই যায়নি। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে সেই মামলা এখনও চলছে কাউন্সিলে। শেফালিদেবীর আক্ষেপ, “এখনও ওঁরা আমাকে ধৈর্য ধরতে বলছেন!”
আইনজীবী তাপস মিদ্যার শ্যালকের পায়ে ক্যানসার সারাতে তিন-তিনটি হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি নিয়েও চিকিৎসা করেনি বলে অভিযোগ। মৃত্যুর আগে তাঁর বায়োপ্সি রিপোর্ট পর্যন্ত দেয়নি একটি নামী হাসপাতাল। চিকিৎসক অমরেন্দ্রনাথ ঘোষের চিকিৎসক-কন্যা অরুণিমা ডাই টেস্ট করাতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। অমরবাবুর অভিযোগ, “বয়স, ওজন অনুযায়ী অরুণিমার দেহে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়নি। ওর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা না-করেই টেস্ট করা হয়েছিল।” অভিযোগ জানাতে গিয়ে কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য ভবনে তাঁকে হেনস্থা হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ ওই চিকিৎসকের।