ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়েছিল ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। দোকানের সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘‘এখানে ৬০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ মেলে।’’ কিন্তু ন্যায্য মূল্যের দোকানের ওষুধের ‘মান’ নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ চিকিৎসকদের। কল্যাণী জহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের বিশ্বাস, ও সব ওষুধে রোগ সারে না। রোগ-মুক্তি ঘটে বাইরের দোকানের নামী ব্র্যান্ডের ওষুধে। ফলে তাঁরা ওষুধের সরাসরি নাম লিখছেন। কিন্তু ঘটনা হল, ওষুধের নাম লিখতে হয় জেরেনিক নামে। চিকিৎসকদের এই চালাকিতে সমস্যায় পড়ছেন দরিদ্র রোগীরা।
মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার পর জেএনএম হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। নদিয়া তো বটেই পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদ, হুগলি থেকেও রোগীরা চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসছেন। সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবা মেলার ঘোষণার পর রোগীরা অনেক বেশি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। কিন্তু জেএনএমে ভর্তি হওয়ার পর রোগীদের ভিন্নতর অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে সে ভাবে বিনা পয়সায় কোনও ওষুধই মিলছে না, এমনই দাবি রোগীর পরিজনদের। চিকিৎসকদের লেখা ওষুধ-ইঞ্জেকশন কম পয়সায় মিলছে না ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানেও। কেন? হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, চিকিৎসকরা জেনেরিক নামে ওষুধ লিখছেন না। আর ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে কেবলমাত্র জেরেনিক নামের ওষুধই মেলে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন, হাসপাতালে স্টোরে ব্র্যান্ডের ওষুধ রাখলে হয় তো সমস্যার সমাধান হবে। মাস তিনেক আগে কলেজের তহবিল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ব্র্যান্ডের ইঞ্জেকশন-ওষুধ কেনা হয়। কিন্তু তারপরেও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, স্টোরের ওষুধ স্টোরেই পড়ে রয়েছে। চিকিৎসকেরা চালাকি করে স্টোরে যে ব্র্যান্ডের ওষুধ নেই, সেই ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখছেন। জেনেরিক নামের ধার ধারছেন না। ফলে রোগীদের তা বাইরের দোকান থেকে মোটা টাকায় কিনতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের ডেকে সাবধান করা হয়েছিল। তারপরে সব বিভাগের চিকিৎসকরা জেরেনিক নামে ওষুধ লিখছেন। কিন্তু রোগ সারেনি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশের। দিনকয়েক আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিসিন বিভাগের তিন চিকিৎসককে জেনেরিক নামে ওষুধ লেখার জন্য বেতন কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি, ওই চিকিৎসকেরা জানান, কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী তাঁদের বাইরের দোকানে মেলে, এমন ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখতে বাধ্য করছেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই দাবির ভিত্তি খুঁজে পাননি বলে জানা গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের সুপার স্নেহপ্রিয় চৌধুরীর মুখ খুলতে চাননি। জেএনএম-এর রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘এই ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। ওই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’ কিন্তু কবে? সেই আশাতেই দিন গুনছেন রোগীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy