Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
নলহাটিতে আক্রান্ত এলাকায় নমুনা সংগ্রহ করলেন স্বাস্থ্যকর্মীরা

জ্বরের প্রকোপ দুই ওয়ার্ডে, জানতেনই না পুরপ্রধান

পুরসভা হয়েছে ২০০০ সালে। সে সময় শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার মধ্যে যোগ হয়েছিল পুসভার মধ্যে। কিন্তু ১৪ বছর পরেও এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি নালা, পানীয় জলের ব্যবস্থা গ্রামের মতোই থেকে গিয়েছে। এ রকম চিত্র তৃণমূল পরিচালিত নলহাটি পুরসভার ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের।

(বাঁ দিকে) এলাকায় জ্বরের প্রকোপ হওয়ার পনেরো দিন পরে মাঠে নামল পুরসভা। জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিত্‌সক। —নিজস্ব চিত্র

(বাঁ দিকে) এলাকায় জ্বরের প্রকোপ হওয়ার পনেরো দিন পরে মাঠে নামল পুরসভা। জ্বরে আক্রান্ত শিশুকে পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিত্‌সক। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share: Save:

পুরসভা হয়েছে ২০০০ সালে। সে সময় শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকার মধ্যে যোগ হয়েছিল পুসভার মধ্যে। কিন্তু ১৪ বছর পরেও এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি নালা, পানীয় জলের ব্যবস্থা গ্রামের মতোই থেকে গিয়েছে। এ রকম চিত্র তৃণমূল পরিচালিত নলহাটি পুরসভার ১২ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের।

যথাযথ পরিষেবা তো মিলছে না, তার ওপর দিন পনেরো ধরে ওই দুই ওয়ার্ডের পাহাড়ি, শিউড়া, নতুনগ্রাম এলাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিলেও প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের লোকেদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। স্বাস্থ্য দফতরের লোকেদেরও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। নলহাটি ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কালোবরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফাইলেরিয়া নিবারণের কাজে স্বাস্থ্য কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন। সে জন্য একটু সমস্যা হয়েছে। তবে আজ বুধবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত একটি এলাকায় গিয়ে ৫০ জনের দেহের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবেন ওই কর্মীরা।” পুরপ্রধান রাজেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ অবশ্য বলেন, “এলাকায় জ্বরের কথা সোমবার প্রথম জানতে পারি। জানার পর এলাকায় মশা মারার জন্য কীটনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

তবে একটি আড়াই বছরের শিশু মৃত্যুর খবর পেয়েই মঙ্গলবার থেকে নড়েচড়ে বসেছে পুরকর্তৃপক্ষ। এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, মশা মারার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা শুরু হয়েছে পুরসভার তরফ থেকে। তবে সাবিনা খাতুন নামে ওই শিশুর মৃত্যু জ্বরের কারণে না কি অন্য কোনও অসুখে হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। নলহাটি ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কালোবরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দিন পনেরো থেকে ওই তিনটি এলাকা থেকে জ্বরে আক্রান্ত এক-দু’জন করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই সমস্ত রোগীরা ভাইরাল ফিভার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দিন পনেরো যাবত ওই তিন এলাকা থেকে প্রায় ১৫০ জনের মতো রোগী হাসপাতালে চিকিত্‌সা করিয়ে চলে গিয়েছেন। তে ব দিন তিনেক থেকে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি দেখা গিয়েছে।”

নলহাটি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত ১০ জন রোগী ভর্তি আছেন। নলহাটি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক চিকিত্‌সক অনঘ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই। সে জন্য নলহাটি এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত কিছু রোগীর শরীরে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে জন্য তিন দিন বা চার দিন জ্বরে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষার জন্য বলা হয়েছে। পরীক্ষায় একটি এলাকার অন্তত ১১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে সন্দেহে তাঁদের রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রামপুরহাট হাসপাতালে পাহাড়ি, সিউড়া, নতুনগ্রাম এলাকা থেকে সাত জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে বলে জানান নলহাটি ১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কালোবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শিউড়া, পাহাড়ি, নতুনগ্রাম এলাকাগুলিতে পুরসভা থেকে ব্লিচিং, মশা মারার প্রতিষেধক স্প্রে করা হচ্ছে। এলাকাগুলি ঘুরে দেখা গেল, নিকাশি নালা বলে কিছু নেই। বাড়ির গোয়াল ঘরের পাশে শিশুরা মেঝেতে শুয়ে আছে। পুরসভা তরফে দাবি করা হয়েছে, পুরকর্মীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সহযোগিতার অভাবে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয় না। পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা সালাউদ্দিন শেখ, নকির শেখদের অভিযোগ, “পানীয় জল সব দিন ঠিক মতো পাওয়া যায় না। এমনকী পুরসভা থেকে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের সংযোগ দেওয়া হলেও জল পাওয়া যায় না। স্বাস্থ্যকর্মীরা কেবলমাত্র পোলিও খাওয়ানোর দিন এলাকায় আসেন। অন্য সময় দেখা পাওয়া যায় না।” দুপুরে পাহাড়ি গ্রামে দেখা যায় মুজিবর শেখের বাড়িতে ন’জন জ্বরে আক্রান্ত। বাড়ির প্রৌঢ়া নামিরুল বিবি বললেন, “দিন পনেরো থেকে জ্বরে ভুগছি। মাঝে নলহাটি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ওষুধ খাওয়ার পর ভাল থাকছি। ফের জ্বর আসছে। জ্বরের সঙ্গে গাঁটে ব্যাথা।”

অন্য দিকে, সোমবার দুপুরে আড়াই বছরের শিশুটিকে নলহাটি ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যায়। কী কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে তা স্বাস্থ্য দফতরের অজানা। তবে শিশুটির বাবা সাইফুদ্দিন শেখ বলেন, “শুক্রবার থেকে মেয়ে জ্বরে ভুগছিল। নলহাটিতে এক চিকিত্‌সককে দেখানো হয়েছিল। ওষুধ খেয়ে দু’দিন ভাল ছিল। রবিবার সকালে জ্বরে আক্রান্ত আমার স্ত্রীকে নলহাটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করার সময় মেয়েকেও হাসপাতালে নিয়ে চিকিত্‌সককে দেখাই। চিকিত্‌সক মেয়েকে পরীক্ষা করে ভালো আছে বলে জানিয়ে দেন। কিন্তু কোনও রকম রক্ত পরীক্ষা করতে বলেননি। রবিবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে স্ত্রী ও মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসি। পরের দিন সকালে মেয়েটার জ্বর ভালো হচ্ছে না দেখে নলহাটিতে একজনের কাছে জন্ডিসের ওষুধ নিয়ে নিয়ে আসি। বাড়িতে আসার পথে মেয়েটার আবার শরীর খারাপ করলে হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিত্‌সক মৃত বলে জানিয়ে দেন।” পুরপ্রধানের দাবি, “নিকাশি নালা বা জঞ্জাল সাফাই নিয়মিত করা হয়। পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহের পাইপ মাঝপথে ফুটো করে দেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে জল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fever nalhati municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE