এই ভাবেই অন্ধকারে বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল।—নিজস্ব চিত্র।
টানা চার দিন ধরে বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন রোগী থেকে শুরু করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ সকলেই। হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালের জেনারেটর। সকলেই ভেবেছিলেন, রোজদিনের মতো হয়তো লোডশেডিং। কিন্তু বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না আসায় খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারা যায় যে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়াতেই এমন বিপত্তি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘটনার পর থেকে বহুবার বিদ্যুৎ দফতর ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে যোগাযোগ করা হলেও আখেরে কোনও লাভ হয়নি। শনিবার পর্যন্ত কোনওরকমে জেনারেটর চললেও রবিবার সকাল থেকে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের উপর প্রায় চার লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কখনও কখনও সংখ্যাটা আরও বেড়ে যায়। ফলে এরকম একটা অবস্থায় বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যায় পড়েন রোগীরা। শনিবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন চৈতন্যপুরের পারভিনা বিবি। রবিবার সকালে তিনি প্রসব করেন। পারভিনার বাড়ির লোকজন বলছেন, “সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। হাসপাতালের ভিতরে তেমন আলো নেই। এদিকে বিদ্যুৎ নেই সেই বৃহস্পতিবার থেকে। বন্ধ হয়ে রয়েছে জেনারেটরও। এরকম অবস্থায় আমরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম।” পারভিনা একা নন, এরকম উদ্বেগে ছিলেন অনেক রোগীই। কার্যত অন্ধকারের মধ্যেই রোগী দেখা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, ইঞ্জেকশন দেওয়া, স্যালাইন বদলানোর মতো কাজ সবই করতে হয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা সমস্বরে জানাচ্ছেন, “এই গরমে, অন্ধকারে হাসপাতালে যে কী করে আছি তা আমরাই জানি। এর থেকে নরকও বোধহয় ভাল।” নওদার কেদারচাঁদপুরের সামশুর রহমান বলেন, “জল-কাদা ভেঙে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। কিন্তু চিকিৎসা হল না।” কেন? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নেবুলাইজার বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে অপেক্ষার পরেও ফিরে যেতে হয়েছে কাপাসডাঙার সাহাজাদা বিবিকে। বেলডাঙার মতো এরকম গুরুত্বপূণর্র্ গ্রামীণ হাসপাতালে এরকম অবস্থা কেন? হাসপাতালের সুপার দেবদত্ত বড়াল বলছেন, “কী করব বলুন? এই অবস্থার মধ্যে আমরাও খুব সমস্যায় পড়ে গিয়েছি। বারবার বিদ্যুৎ দফতর ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। হাসপাতালে জেনারেটর থাকায় সেটা কোনওভাবে শনিবার পর্যন্ত চালানো গিয়েছিল। কিন্তু রবিবার থেকে ভোগান্তি চরমে ওঠে।” ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, “এই অবস্থায় চিকিৎসা করাটা খুবই ঝুঁকির। একটা অঘটন কিছু ঘটে গেলে তার দায়টা কিন্তু এসে পড়বে আমাদের উপরেই। তাছাড়া হাসপাতাল অন্ধকারে থাকাটা একটা নিরাপত্তারও বিষয়।” হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে পড়েছিল ইসিজি, এক্স-রে ও রক্তপরীক্ষা। ফলে হাসপাতালের বহু রোগীকেই বাইরে থেকে ওই পরীক্ষা করাতে হয়েছে। হাসপাতালের শয্যায় বসে নওদার আমিনা বিবি বলছেন, “হাসপাতালে এমনিতেই বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। তার উপরে এই সব পরীক্ষাও বন্ধ থাকায় বিস্তর টাকা খরচ হয়ে গেল।” বিদ্যুৎ দফতরের বহরমপুরের ডিভিসনাল ম্যানেজার সুকান্ত মণ্ডল বলেন, “আমাদের অংশের মেরামতি শেষ। বাকি এংশের কাজ শেষ হয়ে গেলেই সমস্যা মিটে যাবে।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার অরুনাভ দত্ত বলেন, “কাজ চলছে পুরোদমে। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy