Advertisement
১১ মে ২০২৪

ডায়েরিয়া সামলাতে নাকাল হাসপাতাল

দু’সপ্তাহ ধরে রায়গঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শিশুদের মধ্যে ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগে গড়ে ১০ জন করে শিশু ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকেরই বয়স ৬ মাস থেকে দেড় বছর। শিশুবিভাগে চাপ বাড়ছে। শয্যা না থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
Share: Save:

দু’সপ্তাহ ধরে রায়গঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শিশুদের মধ্যে ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের শিশু বিভাগে গড়ে ১০ জন করে শিশু ডায়রিয়া রোগের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকেরই বয়স ৬ মাস থেকে দেড় বছর। শিশুবিভাগে চাপ বাড়ছে। শয্যা না থাকায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রায়গঞ্জের বাহিন, মাড়াইকুড়া, কমলাবাড়ি, বীরঘই ও বরুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা।

অনেক ক্ষেত্রে একই বেডে দু’টি শিশুকে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। এমনকি, আইসোলেশন ওয়ার্ডের আটটি শয্যাতেও ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত শিশুদের কোথায় রেখে চিকিৎসা করানো হবে, সে নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের সুপার অনুপ হাজরা। তিনি জানান, আইসোলেশন ওয়ার্ড-সহ শিশুবিভাগে মোট ৩২টি শয্যা রয়েছে। গত দু’সপ্তাহে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বেডের অভাবে মাঝেমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একই শয্যায় দু’টি করে শিশুকে ভর্তি রেখে কোনওমতে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

তাতেও চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুদের অন্যান রোগে আক্রান্ত শিশুদের সঙ্গে রাখা যায় না। তাঁর দাবি, পরিকাঠামোর অভাবে শিশুবিভাগের তিন জন চিকিৎসক ও চার জন নার্সের পক্ষে সুষ্ঠভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিশুবিভাগটিকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রাসবিহারী দত্ত জানান, তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নারায়ণচন্দ্র পাল জানান, ডায়েরিয়ার লক্ষণ নিয়ে যে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগই রোটা ভাইরাস ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত। নারায়ণবাবু জানান, শীতের শুরুতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণেই শিশুরা ওই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাঁর কথায়, ওই ভাইরাস রুখতে শীতের মরসুমে শিশুদের সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, জল ফুটিয়ে খাওয়ানো, পরিষ্কার পোশাক পরানো, পরিষ্কার জায়গায় রাখা ও পরিষ্কার পোশাক পরে ও হাত ধুয়ে শিশুদের কোলে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “এই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের অন্তত এক সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে শিশুবিভাগে বেডের অভাব থাকায় আমরা দু’তিন দিন পরে সুস্থ হলেই শিশুদের ছুটি দিতে বাধ্য হচ্ছি।

অভিভাবকদের অভিযোগ, এক বছরের শিশুদের হাসপাতাল থেকেই বিনা খরচে সব ওষুধ সরবরাহ করা হলেও এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের অনেক ওষুধই হাসপাতাল থেকে মিলছে না। রায়গঞ্জের মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা হাসিমা বিবির দেড় বছরের ছেলে গত চারদিন ধরে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের শিশুবিভাগে ভর্তি। তিনি বলেন, “স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। হাসাপাতাল থেকে অনেক ওষুধ মিলছে না। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে বাধ্য হচ্ছি।”

হাসপাতাল সুপার অনুপবাবু জানান, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে শিশুদের বেশ কিছু ওষুধ সরবরাহের অভাবে সাময়িক সমস্যা দেখা দিয়েছে। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dayariya district hospital raiganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE