Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
মানিকতলা

দুরবস্থা ব্লাড ব্যাঙ্কের, রাজ্যকে ভর্ৎসনা ন্যাকোর

অভিযোগ উঠছিল অনেকদিন থেকেই। এ বার দিল্লিতে ‘জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ (ন্যাকো) আয়োজিত দু’দিনের বৈঠকে মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য-কর্তাদের তুলোধনা করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও ন্যাকোর অফিসারেরা। আগামী ছ’মাসের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন না হলে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ককে দেওয়া ‘পূর্বাঞ্চলের মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক’-এর তকমা কেড়ে নেওয়া হবে বলেও শাসিয়েছেন তাঁরা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

অভিযোগ উঠছিল অনেকদিন থেকেই। এ বার দিল্লিতে ‘জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ (ন্যাকো) আয়োজিত দু’দিনের বৈঠকে মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের অবস্থা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য-কর্তাদের তুলোধনা করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও ন্যাকোর অফিসারেরা। আগামী ছ’মাসের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন না হলে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ককে দেওয়া ‘পূর্বাঞ্চলের মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক’-এর তকমা কেড়ে নেওয়া হবে বলেও শাসিয়েছেন তাঁরা।

গত জানুয়ারি মাসে ওই ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিস্থিতি দেখতে এসেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক প্রতিনিধি দল। এর নেতৃত্বে ছিলেন দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান কবিতা চট্টোপাধ্যায়। ফিরে গিয়ে তাঁরা একটি রিপোর্ট দেন। ব্লাড ব্যাঙ্কের ছবি তুলে নিয়ে যান তাঁরা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ২২ ও ২৩ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে কবিতা চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও ন্যাকোর অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর (রক্ত নিরাপত্তা) শোভিনি রাজন, কেন্দ্রীয় রক্তসঞ্চালন পর্ষদের কর্তারা ও স্বাস্থমন্ত্রকের কর্তারা ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্য রাজ্যের রক্ত নিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধিদের সামনেই

স্লাইড শো-য়ে মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কের ভিতর ও বাইরের ছবি দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের ভর্ৎসনা করেন ন্যাকোর কর্তারা।

ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন ওই বৈঠকে উপস্থিত পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা (রক্ত নিরাপত্তা) অরবিন্দ বালা। তাঁর বক্তব্য, “ওঁদের সমালোচনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিক, কিন্তু ওঁদেরও বোঝা উচিত এত বড় ব্লাড ব্যাঙ্ক, প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়, সেখানে সব কিছু মসৃণ ভাবে চলে না। কোনও সংস্থাই সর্বাঙ্গীন সুচারু ভাবে চলে না। ত্রুটি থাকে। কিন্তু ওঁরা শুনতে রাজি নন।” অরবিন্দবাবুর আরও বক্তব্য, “অন্য রাজ্যের সামনে যে ভাবে ওঁরা হেনস্থা করলেন, সেটা ভাল ভাবে নিইনি। ন্যাকোকে বারবার বলা সত্ত্বেও ওরাও তো সময়মতো টেকনিশিয়ান দেয় না, ব্লাডব্যাগ-ব্লাডকিট পাঠায় না। ওদের মানিকতলা সম্পর্কে অভিযোগ থাকলে আমাদের আলাদা ভাবেও জানাতে পারত।”

মানিকতলায় পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “আমরা গিয়ে তাজ্জব হয়ে দেখি, রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুণমান বজায় রাখার কোনও চেষ্টাই নেই! রক্তদান শিবির থেকে আনা রক্তের ব্যাগ ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্তূপাকার হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। অনেক রেফ্রিজারেটর খারাপ, চার দিকে নোংরা। রক্ত সংক্রামিত হওয়ার সব সম্ভাবনা সেখানে মজুত।”

সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো সংগ্রহীত রক্তের মান পরীক্ষার জন্য থাকা কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি কাজ করছে না। রক্তের বাধ্যতামূলক অনেক পরীক্ষা ও ক্রসম্যাচিং মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে হচ্ছে। ফলে ভুলের অবকাশ থাকছে।”

ন্যাকোর এক কর্তার বক্তব্য, “রক্তদান শিবির থেকে সংগ্রহীত অর্ধেকের বেশি রক্ত থেকেই উপাদান পৃথকীকরণ হচ্ছে না। এমনকী, অনেক সময়ে প্লাজমা তৈরির পরে তা সংরক্ষণের অভাবে ফেলে দেওয়া হচ্ছে এবং বাতিল রক্ত জীবাণুমুক্ত না করেই মেডিক্যাল বর্জ্য হিসেবে বাইরে চলে যাচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ কানে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গকে এ বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছি।” ন্যাকো সূত্রের খবর, এত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে অধিকর্তা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার বা কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার জন্যও রাজ্য সমালোচিত হয়েছে।

সে দিনের বৈঠকে উপস্থিত ‘পশ্চিমবঙ্গ ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ বলেন, “এতদিন দিল্লির বৈঠকে সেখানকার কর্তারা রক্তের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের কাজের, সাফল্যের উদাহরণ দিতেন, এ বার সকলের সামনে পশ্চিমবঙ্গের নিন্দা করে তাঁরা মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত মডেলের কথা বলেন। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছিল।” এ ব্যাপারে রাজ্য রক্তসঞ্চালন পর্ষদের সচিব গৌতম ঘোষ বলেন, “কর্মসংষ্কৃতির সমস্যা অনুভূত হচ্ছে। রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্তা ও সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তার কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

scolding nacco parijat bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE