প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং অন্য পরিকাঠামোর অভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ধুঁকছে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটগুলি (এসএনসিইউ)। অথচ শুক্রবার বিধানসভায় বাজেট-প্রস্তাবে সেই এসএনসিইউ-কেই সাফল্যের তালিকার প্রায় শীর্ষে রাখলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সংখ্যাতত্ত্বের মারপ্যাঁচে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, শিশুস্বাস্থ্য রক্ষায় রাজ্য অন্যদের চেয়ে এগিয়ে।
ক্ষমতায় আসার পরে গত চার বছরে ৬৬টি এসএনসিইউ তৈরির কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য। ২০১৩ সালের মধ্যে ৩১টি এসএনসিইউ চালু হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে আরও ২৭টি চালু হয়ে যাবে। হয়েছে ১২টি। স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, আগ বাড়িয়ে এনএনসিইউ ঘোষণা করে বিপদে পড়েছে রাজ্য। কারণ, এর পরিকাঠামো তৈরি করা যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মী। এক বার বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক নেওয়া হচ্ছে। তার কিছু দিনের মধ্যে চিকিৎসকেরা এসএনসিইউয়ের চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষায় গঠিত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের কর্তারা অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, আগের আমলে কার্যত কিছুই ছিল না। এখন কাজ ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। আগামী মার্চের মধ্যে মোট ৪৭টি এসএনসিইউ চালু হবে বলে টাস্ক ফোর্সের আশ্বাস। কিন্তু নামে ইউনিট চালু হলেও তার পরিকাঠামোর কী হবে, সেই বিষয়ে দিশা দেখাতে পারেননি তাঁরা।
এসএনসিইউ নিয়ে এত অভিযোগের মধ্যেও অর্থমন্ত্রীর সাফল্যের দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে স্বাভাবিক ভাবেই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “যা বলার বিধানসভায় মন্ত্রী বলেছেন। এই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।”
এ দিনের বাজেটে আটটি স্বাস্থ্যজেলা গড়ার সাফল্য দাবি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্যজেলা হয়েছে নামকাওয়াস্তে। তাতে পরিস্থিতি কিছুই বদলায়নি। ২০১৪ সালের মধ্যে ৪০টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার। এখনও তার একটিও কাজ শুরু করেনি। এ দিনের বাজেটে সেই সব হাসপাতাল তৈরির সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৫-১৬ করা হয়েছে। যে সব মেডিক্যাল কলেজ গড়ার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলির কোনওটি এখন মাঝপথে, কোনওটি তৈরির কাজ শুরুই হয়নি। মেডিক্যালে আসন দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২৯০০ করা হয়েছে বলে ঘোষণা হয়েছে। বাস্তবে যে সব কলেজে আসন বাড়ানো হয়েছিল, পরিকাঠামোর ঘাটতির কারণে তার অধিকাংশই আটকে দিয়েছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)। ফলে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতির যে দাবি এ দিন অর্থমন্ত্রী করেছেন, তার বেশির ভাগটাই ‘ভুয়ো’ বলে মত স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বড় অংশের।
ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান নিয়েও সাফল্যের বহু খতিয়ান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী। বলা হয়েছে, ৯৫টি ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু আছে। আরও ২১টি খুব শীঘ্রই চালু হবে। কিন্তু কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারের এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ন্যায্য মূল্যের বহু দোকানেই জেনেরিক নামের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্র্যান্ডের ওষুধ কিনতে ঢালাও প্রেসক্রিপশন করছেন সরকারি ডাক্তাররা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy