এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিরাম নেই। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত মারা গেলেন আরও চার জন। ৭ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল অন্তত ৮০ জনের। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বার করা হচ্ছে একটি দেহ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত দশম শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা মণ্ডল। মাঝেমধ্যেই শরীরে খিঁচুনি দেখা দিচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে মাথাব্যথা এবং বমিও। জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাটের বাসুনিয়াপাড়ার বাসিন্দা ঝুমার দাদার মেয়ে আড়াই বছরের প্রিয়াও মঙ্গলবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত। তারও শরীরে একই উপসর্গ দেখা দিয়েছে। খিঁচুনি দিয়ে জ্বর সেই সঙ্গে মাথা ব্যথা এবং বমি। এনসেফ্যালাইটিস সংক্রমণের এই তিন উপসর্গ দেখা দিলেই হাসপাতাল বা সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, বাসুনিয়া পাড়ার মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা সে কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, “হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই।”
বাসুনিয়া পাড়ার পাশেই বড় কামাত গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দা মালতী বর্মনও জ্বরে আক্রান্ত। মালতি দেবীর স্বামী গোপালবাবু ত্রিপুরা পুলিশের কর্মী। বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ নেই। গত রবিবার স্থানীয় এক হাতুড়ে চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ খেলেও জ্বর কমেনি। এ দিন বিছানায় শুয়ে মালতিদেবী বললেন, “আগে দু’একবার ওষুধ খেলেই জ্বর কমে যেত। এবার তেমন হচ্ছে না। সঙ্গে মাথা ব্যথাও চলছে। জানি না কবে কমবে।”
ঘরেই রোগীরা।—নিজস্ব চিত্র।
এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ বেড়ে চলায় গত সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গ জুড়ে ‘হাই-অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। কোনও বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত রোগী থাকলে, তাঁকে হাসপাতালের ‘ফিভার ক্লিনিকে’ নিয়ে যাওয়াও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং ব্লক প্রশাসনের দায়িত্ব বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। কিন্তু মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকী এলাকায় কত জন জ্বরে আক্রান্ত, তার কোনও পরিসংখ্যানও প্রশাসনের কাছে নেই বলে অভিযোগ। ঝুমা, মালতিদেবীদের মতো মণ্ডলঘাট এলাকাতেই শতাধিক বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বেশিরভাগেরই রক্তের নমুনা পরীক্ষা হয়নি বলে অভিযোগ। মণ্ডলঘাট থেকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের দূরত্ব বড় জোর ২৫ কিলোমিটার। জ্বরের সঙ্গে মাথা ব্যথা বা বমির উপসর্গ দেখা দিলে যে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে সে কথা গ্রামে যথাযথ ভাবে প্রচার করা হয়নি বলে অভিযোগ।
জ্বরের শুশ্রূষা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে।
নিয়ম অনুযায়ী গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মহিলাকর্মীদের মাধ্যমে জ্বরের ওষুধ বিলি করার কথা থাকলেও, মণ্ডলঘাট এবং লাগোয়া এলাকার রোগীরা সেই ওষুধও পাননি বলে অভিযোগ। সম্প্রতি কলকাতার ট্রপিকাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ দল জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন। গ্রামের বাসিন্দারা জ্বরে আক্রান্ত হলেই দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে নির্দেশ মেনে কতটা কাজ হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশাসনের আধিকারিকরাই সন্দিহান। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ের অভাবেই গ্রাম এলাকাগুলিতে জ্বরে আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও শ্রদ্ধা সুব্বার কথায়, “বাসিন্দাদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর কাজ স্বাস্থ্য দফতরের করার কথা। আমরা সচেতনতা প্রসারের কাজ করব। বৃহস্পতিবার থেকে মণ্ডলঘাট সহ বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে সচেতনতার কাজ শুরু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy