Advertisement
০৭ মে ২০২৪
আর জি কর

বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে রোগীদের উপরে ‘চাপ’, হচ্ছে তদন্ত

হাসপাতালে ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাইরের বেসরকারি জায়গা থেকে পরীক্ষা করাতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। এমনই অভিযোগ উঠল আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে। কর্তৃপক্ষের কাছে একের পর এক লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৮
Share: Save:

হাসপাতালে ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বাইরের বেসরকারি জায়গা থেকে পরীক্ষা করাতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। এমনই অভিযোগ উঠল আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের একাংশের বিরুদ্ধে।

কর্তৃপক্ষের কাছে একের পর এক লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা। কোনও অভিযোগে লেখা, উল্টোডাঙার একটি বিশেষ জায়গা থেকে রক্তপরীক্ষা না করালে ডাক্তারবাবুরা রোগীকে ছুঁয়েও দেখবেন না। কোনও অভিযোগপত্রে আবার লেখা হয়েছে, মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা তাঁদের বলে দিয়েছেন শ্যামবাজারের একটি নির্দিষ্ট সেন্টার থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও সিটি স্ক্যান না করালে তাঁরা দু’দিন রোগীকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে বাধ্য করবেন।

যে সব রোগীর আত্মীয়েরা অভিযোগ করেছেন তাঁদের এক জন দমদম ক্যান্টনমেন্টের অনিন্দিতা হালদার। তাঁর কথায়, “আমার প্রতিবেশী মায়া সেনকে আরজিকরে ভর্তি করতে এসে অভাবনীয় অভিজ্ঞতা হল। অর্থোপেডিক্সের ডাক্তারবাবুরা খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন, এসএন ব্যানার্জি রোডের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে সিটি স্ক্যান, এমআরআই না করলে রোগীকে তাঁরা চিকিৎসা না করেই ছেড়ে দেবেন। আমি প্রতিবাদ করলে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা হয়। রোগীকে আর সেখানে ভর্তি করার সাহস পাইনি।” উত্তর ২৪ পরগনার নেতাজি উদ্যান এলাকার বাসিন্দা গোপাল ভৌমিক ভর্তি ছিলেন মেডিসিন বিভাগে। তাঁর স্ত্রী নিয়তি ভৌমিক অভিযোগ করেছেন, “চিকিৎসকেরা হুমকি দিয়ে বলেন, হয় উল্টোডাঙার এক সেন্টারে রক্তপরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হবে নয়তো রোগীকে জোর করে ছুটি করানো হবে। আমি গরিব মানুষ এত টাকা দিয়ে বেসরকারি জায়গা থেকে কী করে পরীক্ষা করাব?”

অধ্যক্ষ, সুপার, ডেপুটি সুপার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের কাছে গত এক মাসের মধ্যে এ রকম অন্তত ৭টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ার পরে সম্প্রতি দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফার্মাকোলজির অধ্যাপক অনুপ দাস এবং প্যাথলজির অধ্যাপিকা শাশ্বতী মজুমদারকে নিয়ে গঠিত ওই কমিটি অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনুপ দাস পরে বলেন, “জোর করে বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো, ওষুধ কেনানো এবং সেই কথা না শুনলে দুর্ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ এসেছে। আমরা ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেব।”

‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’র (আরএসভিওয়াই) আওতায় থাকা রোগীদের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিখরচায় হওয়ার কথা। আরজিকর-এ আরএসভিওয়াই স্কিমের নোডাল অফিসার অরুণ চক্রবর্তী বলেন, “শুধু সাধারণ রোগীদেরই নয়, আরএসভিওয়াই স্কিমে থাকা রোগীদেরও ভয় দেখিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক থেকে হাজার হাজার টাকার পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে আমার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশনের খেলা চলছে। সব অভিযোগ অধ্যক্ষকে জমা দিয়েছি।” অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল এ ব্যাপারে বলেন, “এই ধরনের জুলুম করলে যে কড়া শাস্তি হতে পারে এটা সবাই জানেন, তা সত্ত্বেও করলে বুঝতে হবে তাঁরা বেপরোয়া। আমাদের হাতে লিখিত অভিযোগ না থাকলে এই অপরাধীদের ধরতে অসুবিধা হত, এখন যখন লিখিত কাগজ এসে গিয়েছে তখন কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা ধরা পড়বেন আশা করছি।” এ দিন হাসপাতালের অর্থোপেডিক, মেডিসিন ও সার্জারির বিভাগীয় প্রধানদের ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যক্ষ।

মেডিসিন বিভাগের প্রধান অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই রকম যে হচ্ছে আমাকে কেউ জানায়নি।” আর অর্থোপেডিক্সের প্রধান দিলীপ পালের কথায়, “আমাদের হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা এইচআইভি পরীক্ষা হয় না বলে মাঝেমাঝে ডাক্তারদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাইরে থেকে শুধু এইচআইভি পরীক্ষা করতে বলা হয়। এক্স-রে মেশিনও অনেক সময়ে খারাপ থাকে বলে বাধ্য হয়ে রোগীকে বাইরে থেকে করানো হয়। কিন্তু এ ছাড়া কিছু হয় বলে শুনিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

r g kar parijat bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE