অবশেষে ঘুম ভাঙল পুরসভাগুলির! পুর এলাকার কোনও বাসিন্দার মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি কি না, সেই বিতর্কে না গিয়ে তারা মশাবাহিত ওই রোগ প্রতিরোধে রাস্তায় নামল।
বরাহনগর পুরসভা ডেঙ্গি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি মশা মারতে কামানও দাগা শুরু করেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে বৈঠক করেন চেয়ারপার্সনের সঙ্গে। তার পর থেকেই দফায় দফায় পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী, কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ঘরে ঘরে যে ভাবে জ্বর ছড়াচ্ছে তার জন্য রক্তপরীক্ষা শিবির শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে রক্তপরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হবে। কয়েকটি ল্যাবরেটরির সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা হয়েছে।’’ পুরসভার এক কর্তার মন্তব্য, এত যে জ্বর হচ্ছে তার কারণটা জানা জরুরি। তার জন্যই ঢালাও রক্তপরীক্ষার এই ব্যবস্থা। অপর্ণাদেবী জানান, স্বাস্থ্য দফতর থেকে কিছু লিফলেট দেওয়া হয়েছে, সেগুলি বাড়ি বাড়ি বিলি করা হবে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সচেতনতা সংক্রান্ত ফ্লেক্স টাঙানো হচ্ছে।
বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত বৃহস্পতিবার দুপুরে বিধাননগরের সমস্ত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল ও দুটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই পুরসভা ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে তাদের কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে বলে সব্যসাচীবাবু জানিয়েছেন। তিন বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেব।’’
এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান গোপা পাণ্ডেও। তিনি বলেন, ‘‘নাগেরবাজারের কাছে দাস ভিলা এলাকার একটি আবাসন থেকে ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু পুরসভার কর্মীরা ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করতে গেলে অনেক সময় তাঁদের আবাসনে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না।’’ দমদম এলাকাতেও ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি। সেখানকার এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এনএস-১, আইজিএম এবং আইজিজিএম- এই তিন ধরনের পরীক্ষা থেকেই ডেঙ্গি নিশ্চিত হচ্ছে এমন রোগী দমদম, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, রাজারহাটের মতো জায়গা থেকে বেশি আসছেন।’’
সোমবারই বরাহনগরের দুই বাসিন্দা অর্পিতা চক্রবর্তী ও নমিতা সামন্তর মৃত্যু হয়। অর্পিতার ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা ডেঙ্গি এবং নমিতার মৃত্যুর কারণে লেখা হয় এনএস-১ পজিটিভ। দুই পরিবারের তরফেই বলা হয়, ডেঙ্গিতে ওই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুরসভা ডেঙ্গিতে মৃত্যুর কথা স্বীকার না করায় বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘বিতর্ক কেন হবে। ডেঙ্গু হচ্ছে না এটা তো বলছি না। তবে ডেঙ্গি হয়েছে কি না তা জানার জন্য যে রক্তপরীক্ষার দরকার সেটা করার পরে বললে তো কোনও আপত্তির নেই। কিন্তু অনেকেই শুধু এনএস-১ পজিটিভ হলেই তা ডেঙ্গি বলে দিচ্ছেন। এটাতেই আমাদের আপত্তি।’’
কয়েক দিন আগে বাগুইআটির পাঠশালা এলাকার বাসিন্দা গৌতম সাহা জ্বর নিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলেও তিনি মারা যান। তাঁর রক্তপরীক্ষার রিপোর্টে এনএস-১ পজিটিভ এসেছিল। কিন্তু গৌতমবাবু ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন কি না তা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর ডেথ সার্টিফিকেট নিগমের কাছে আসেনি। তাই কোনও মন্তব্য করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy