Advertisement
E-Paper

বিরল অস্ত্রোপচারে তৈরি হল তরুণীর স্ত্রী-অঙ্গ

স্বাভাবিক জরায়ু রয়েছে। রয়েছে জরায়ুমুখ বা সার্ভিকস-ও। কিন্তু জন্ম থেকেই যোনির কোনও অস্তিত্ব ছিল না মেয়েটির। ফলে আর পাঁচটি মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি সে। মাসিক ঋতুস্রাবও হত না তার। শুধু ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই মাসের নির্দিষ্ট একটা সময়ে পেটে অসহ্য ব্যথা হত। সে যে অন্যদের মতো নয়, সে কথাটা কাউকে খুলে বলতেও পারত না মেয়েটি।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪ ০৭:৫৩

স্বাভাবিক জরায়ু রয়েছে। রয়েছে জরায়ুমুখ বা সার্ভিকস-ও। কিন্তু জন্ম থেকেই যোনির কোনও অস্তিত্ব ছিল না মেয়েটির। ফলে আর পাঁচটি মেয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি সে। মাসিক ঋতুস্রাবও হত না তার। শুধু ১৩-১৪ বছর বয়স থেকেই মাসের নির্দিষ্ট একটা সময়ে পেটে অসহ্য ব্যথা হত। সে যে অন্যদের মতো নয়, সে কথাটা কাউকে খুলে বলতেও পারত না মেয়েটি। বাড়ির লোকেরা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরপর তিন বার কৃত্রিম উপায়ে তার ভ্যাজাইনা তৈরির (রিকনস্ট্রাক্ট) চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তিন বারই সেই চেষ্টা বিফল হয়। কেন চেষ্টা বিফল হচ্ছে, তার কোনও ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত উত্তর কলকাতার এক বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে চতুর্থ বারের চেষ্টায় মেয়েটির যোনি তৈরি করতে সক্ষম হলেন চিকিৎসকেরা। আপাতত ২৫ বছরের ওই তরুণী সম্পূর্ণ সুস্থ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন তো বটেই, এমনকী সন্তান ধারণ করতেও আর কোনও অসুবিধা রইল না তাঁর।

চিকিৎসক মহলের মতে, জন্মগত ত্রুটি দূর করে একটি মেয়েকে সুস্থ জীবন দেওয়ার এই অস্ত্রোপচার সব অর্থেই প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ এমন বহু ক্ষেত্রে সামাজিক বা পারিবারিক লজ্জার অজুহাতে বহু মেয়ে ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে পারেন না। তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকেন তাঁরা। এমন একটি বিকল্প পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে যে ফেরা সম্ভব, সেই বার্তাটিও সকলের কাছে পৌঁছনো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং পলি চট্টোপাধ্যায় এই অস্ত্রোপচারটি করেছেন। অভিনিবেশবাবু বলেন, “সামনে ইউরিনারি ব্লাডার এবং পিছনে মলদ্বার। এই দুয়ের মাঝখানে যোনি থাকার কথা। জন্মগত ভাবেই এই মেয়েটির তা ছিল না। যোনি না থাকায় তার ঋতুস্রাবও হত না। প্রতি মাসে পেটের মধ্যে ওই রক্ত জমে থেকে অসহ্য ব্যথা হত। ডিম্বাশয়ে অজস্র সিস্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমরা হিস্টেরোল্যাপারোস্কোপিক প্রক্রিয়ায় যোনি সৃষ্টি করেছি। মেয়েটির এখন স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন বা সন্তানের মা-ও হতে কোনও বাধা থাকবে না।”

এর আগে তিন বার মেয়েটির যোনি গঠনের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু জরায়ু মুখ পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি চিকিৎসকেরা। এর পরে পরিবারের তরফে বিষয়টি গোপন করেই মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। বিবাহিত জীবনে বাধা সৃষ্টি করে তার এই জন্মগত সমস্যা। তখনই চতুর্থ বার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের লোকেরা। অভিনিবেশবাবু জানান, একটি ক্যামেরার মাথায় সরু কাঁচি লাগিয়ে জরায়ু পর্যন্ত পথটি কাটতে কাটতে ভিতরে ঢোকা হয়েছে। একে বলে ভ্যাজাইনোস্কোপ। অস্ত্রোপচারের পরে জরায়ু থেকে যোনি পর্যন্ত পথটা যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সে জন্য ভিতরে একটি ক্যাথিটার ঢুকিয়ে রাখতে হয়। পথটি প্রশস্ত হওয়ার পরে ওই ক্যাথিটার বার করা হয়। তিনি বলেন, “সামান্য কাটাছেঁড়ায় অস্ত্রোপচারটি হয়েছে। মেয়েটি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। ব্যথাও সহ্য করতে হয়েছে সামান্যই।”

প্রতি পাঁচ হাজার মহিলার মধ্যে এক জনের যোনির গঠনগত কিছু সমস্যা থাকে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কারও কারও আংশিক যোনি তৈরি হয়। কারও বা জরায়ুর সঙ্গে যোনির পথটি বন্ধ থাকে। কিন্তু এই তরুণীর ক্ষেত্রে শরীরের ভিতরে বা বাইরে যোনি বা যোনিপথের অস্তিত্বই ছিল না। অথচ জরায়ু এবং ডিম্বাশয় ছিল। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মাসের নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত জমা হত যোনির নির্দিষ্ট জায়গায়। তার পরে তা বেরোতে না পেরে জরায়ু এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের মাধ্যমে পিছনের দিকে পেটের গহ্বরে ফিরে যেত। ফলে তৈরি হত নানা শারীরিক জটিলতা। এখন মেয়েটি সে সব থেকে মুক্তি পেয়েছে। তার স্বাভাবিক ঋতুস্রাবে আর বাধা নেই।

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর জানিয়েছেন, একটি মেয়েকে স্বাভাবিক নারীত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার এই অস্ত্রোপচার সব অর্থেই অভিনন্দনযোগ্য। তিনি বলেন, “ল্যাপারোস্কোপি ছাড়াও ‘ওপেন সার্জারি’র মাধ্যমেও যোনি তৈরি করা যায়। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরে পথটা যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য নানা ধরনের প্লাস্টিকের ছাঁচ বা তুলো ভরা কনডোমের মতো জিনিস ভিতরে কিছু দিন ভরে রাখতে হয়।” স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুদীপ্তা চৌধুরী জানিয়েছেন, তিন বার ব্যর্থ হওয়ার পরে চতুর্থ বার সফল হওয়ার অর্থ বিষয়টি খুবই জটিল ছিল। মেয়েটিকে এই শহরের চিকিৎসকেরা স্বাভাবিক জীবন দিলেন, এটা সব অর্থেই প্রশংসার যোগ্য।”

rare surgery reconstrution hospital calcutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy