Advertisement
E-Paper

বেশি নমুনা পাঠালে শাস্তির হুমকিতে বিভ্রান্তি

জীবাণু পরীক্ষার সবেধন নীলমণি কেন্দ্র বেলেঘাটার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস বা নাইসেড। সেই একমাত্র কেন্দ্রেই সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষার জন্য থুতু-কফের নমুনা আসছে রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম থেকে। এই অবস্থায় নাইসেডের উপরে চাপ কমাতে হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রিত ভাবে অর্থাৎ বাছাই করে নমুনা পাঠানোর নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য ভবন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭

জীবাণু পরীক্ষার সবেধন নীলমণি কেন্দ্র বেলেঘাটার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস বা নাইসেড। সেই একমাত্র কেন্দ্রেই সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষার জন্য থুতু-কফের নমুনা আসছে রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম থেকে। এই অবস্থায় নাইসেডের উপরে চাপ কমাতে হাসপাতালগুলিকে নিয়ন্ত্রিত ভাবে অর্থাৎ বাছাই করে নমুনা পাঠানোর নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য ভবন। শুধু তা-ই নয়, নির্বিচারে নমুনা পাঠালে শাস্তির হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

সোয়াইন ফ্লু নিয়ে এমনিতেই বিভ্রান্তির অন্ত নেই। তার উপরে স্বাস্থ্য ভবনের এ-হেন নির্দেশে বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নতুন করে বিভ্রান্ত। রোগীর ভিড় বাড়ছে বলেই তাঁদের বেশি বেশি নমুনা পাঠাতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, নমুনা বাছাইয়ে হাসপাতালগুলিতে যে-চিরাচরিত স্ক্রিনিং পদ্ধতি (কাদের থুতুর নমুনা পাঠানো হবে, তাদের চিহ্নিত করা) মানা হয়, তা ১০০ শতাংশ ঠিক নয়। তাই কোনও রোগীই যাতে বাদ না-পড়েন, সেই জন্য যত বেশি সম্ভব নমুনা পাঠিয়ে দেওয়া হয় নাইসেডে। ডাক্তারদের প্রশ্ন, কোন নমুনা পাঠানো হবে আর কোনটা নয়, সেই বাছাইটা হবে কী ভাবে? নমুনা পাঠানো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ মানতে গেলে রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করেন বহু চিকিৎসক।

এর মধ্যেই বিভ্রান্তি বেড়েছে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মধ্যে। বিভিন্ন স্কুল নির্দেশ জারি করেছে, ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট মাস্ক পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। এতেই অভিভাবকেরা বিভ্রান্ত। কারণ, মাস্ক নিয়ে তো বিভ্রান্তি কম নয়! নিম্ন মানের মাস্ক বাজারে ছেড়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মুনাফা লুটছে। আবার স্বাস্থ্য ভবন সূত্রেই বলা হচ্ছে, রাজ্যে নির্দিষ্ট মানের মাস্কের যথেষ্ট সরবরাহ নেই। তা হলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য তা পাওয়া যাবে কী ভাবে? আক্রান্তদের আত্মীয়স্বজন এবং যে-সব চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী সোয়াইন ফ্লু-র রোগীদের চিকিৎসা করছেন, তাঁদের ওই মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার বক্তব্য, কারও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে অযথা আতঙ্ক ছড়ায়। স্কুলের ছেলেমেয়েদের মাস্ক পরানো বাধ্যতামূলক করার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তাঁরাই স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশিকা জারি করবেন।

তবে মাস্কের তুলনায় থুতু-কফের নমুনা বাছাই নিয়ে বিভ্রান্তিটাই বেশি তীব্র। নমুনা পাঠানোর ব্যাপারে বুধবার ঠিক কী বলেছে স্বাস্থ্য ভবন?

রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানান, বিভিন্ন হাসপাতাল অযথা প্রচুর নমুনা পাঠাচ্ছে। যে-সব উপসর্গ খুঁটিয়ে দেখার পরে তবেই নমুনা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে, অনেকে তা মানছে না। মঙ্গলবারেই যেমন ৪৯টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র ন’টিতে সোয়াইন ফ্লু-র ভাইরাস মিলেছে। “এটা চলতে পারে না। কারা অতিরিক্ত নমুনা পাঠাচ্ছে, দু’তিন দিনের মধ্যেই সেটা চিহ্নিত হয়ে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব,” হুঁশিয়ারি দিয়েছেল স্বাস্থ্যসচিব।

স্বাস্থ্য ভবনের এই সিদ্ধান্তে অনেক চিকিৎসকই ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, সময় থাকতে রাজ্যে দ্বিতীয় কোনও পরীক্ষা কেন্দ্র খুলতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। এখন তার মাসুল গুনতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। যথেষ্ট সংখ্যায় পরীক্ষা কেন্দ্র থাকলে তো নমুনা নিয়ে তাঁদের এমন আতান্তরে পড়তে হত না! সোমবার স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রপিক্যাল বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষা কেন্দ্র খুলতে ৪-৫ মাস লেগে যাবে। ফলে সব চাপ পড়ছে নাইসেডের উপরে। তা সামলাতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে। ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের অনুযোগ, এই অবস্থায় উপায়ান্তর না-দেখেই নমুনা সংগ্রহের উপরে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। আর ভুগতে হচ্ছে ডাক্তারদেরই। বেশি নমুনা পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে শুনে তাঁদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল এবং আইডি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, সোয়াইন ফ্লু হয়েছে আশঙ্কা করে প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ পরীক্ষা করাতে আসছেন। তাঁদের অনেকের মধ্যেই উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে। যথাসম্ভব যাচাই করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সংখ্যাটা খুব কম থাকছে না। ওই চিকিৎসকদের প্রশ্ন, যাঁদের মধ্যে উপসর্গ অপেক্ষাকৃত কম, পরে তাঁদের অনেকের কফ-থুতু পরীক্ষা করে সোয়াইন ফ্লু-র জীবাণু মিলেছে। তা হলে ঝুঁকি নেওয়া যাবে কী ভাবে? “এর পরেও স্বাস্থ্য দফতর যদি জোর করে, সে-ক্ষেত্রে কফের নমুনা সংগ্রহ করা উচিত বুঝেও অনেক রোগীকে বাদ দিতে হবে আমাদের। এতে ক্ষতি রোগীদেরই,” বলছেন ডাক্তারেরা।

আইডি হাসপাতালের এক কর্তা জানান, রাজ্যের ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল’ মেনেই কাজ হচ্ছে। বহির্বিভাগ থেকে কারও থুতুর নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। “সোয়াইন ফ্লু-র উপসর্গ দেখে যাঁদের ভর্তি করা হয়েছে, তাঁদের থুতুর নমুনাই পাঠাচ্ছি,” বললেন আইডি-কর্তা।

বিসি রায়ের এক চিকিৎসক বলেন, “আমাদের হাসপাতালে রোজ কয়েকশো রোগী বহির্বিভাগে আসছেন সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষা করতে। সেই ভিড় থেকে বেছে গুরুতর অসুস্থ ৫০-৬০ জনকে ভর্তি করিয়ে শুধু তাঁদের কফের নমুনা নাইসেডে পাঠাচ্ছি। এর থেকে কম করব কী করে?”

নমুনার স্রোতে নাইসেডের ভেসে যাওয়ার দাখিল! সামাল দিতে বেসরকারি হাসপাতালকে জীবাণু যাচাইয়ে যুক্ত করা হচ্ছে না কেন?

স্বাস্থ্যসচিব মঙ্গলবার বলেছিলেন, বেসরকারি কোনও হাসপাতাল নমুনা পরীক্ষা করতে চাইলে তাদের স্বাগত। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল এগিয়ে আসা সত্ত্বেও সরকার তাদের সাহায্য নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। অ্যাপোলো গ্লেনেগ্লসের সিইও রূপালি বসু বলেন, “আমাদের উন্নত ল্যাবরেটরি আছে। কর্মী আছে। সব দিক থেকে আমরা প্রস্তুত। রাজ্যে একটি মাত্র কেন্দ্রে পরীক্ষা হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। স্বাস্থ্য দফতরকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা এই পরীক্ষা চালু করতে চাই। কিন্তু সেই প্রস্তাবের জবাবই আসেনি।”

রাজ্য বা দেশের বাইরে থেকে যাঁরা আসছেন, হাওয়া পরিবর্তনের কারণে তাঁদেরও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ দিন কিরানি মার্টিন নামে ১৯ বছরের এক অস্ট্রেলীয় তরুণীর সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়েছে। বেড়াতে আসা ওই তরুণী জ্বর-সর্দিকাশি নিয়ে তিনি বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তাঁকে নমুনা পরীক্ষার সুপারিশ-সহ আইডি-তে পাঠানো হয়েছিল। আইডি-র অধ্যক্ষ বলেন, “ওই তরুণী কিছুতেই ভর্তি হতে চাইছিলেন না। কিন্তু বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ালে অন্য বহু মানুষের শরীরে উনি এই রোগটা ছড়াতে পারেন। তাই অনেক বুঝিয়ে আমরা ওঁকে ভর্তি করে নিয়েছি।”

এ দিন আরও ন’জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়েছে। তাঁদের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের এক বাসিন্দা-সহ সাত জন কলকাতার সরকারি ও বেসরাকরি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি দু’জনের এক জন হাওড়া এবং অন্য জন হুগলির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

swine flu spit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy