Advertisement
E-Paper

মেডিক্যাল পরীক্ষায় নতুন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন

একরাশ ক্ষোভ নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বললেন, “কিছুই বদলাল না। রাতে মোটরবাইকে চেপে আমার কোয়ার্টার্সে এসে নম্বরের জন্য শাসিয়ে গিয়েছে ছেলেরা।” এনআরএসের এক শিক্ষক চিকিৎসকের কথায়, “স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাকে ধরে নম্বর বাড়ানোর জন্য আমার উপরে চাপ তৈরি করছে দুই ছাত্র।” ন্যাশনাল মেডিক্যালের এক শিক্ষক চিকিৎসক আবার অভিযোগ করলেন, “হাসপাতাল থেকে ফেরার সময়ে রাস্তায় এক ছাত্র প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে গিয়েছে যাতে তাদের কোনও ভাবেই ফেল না করানো হয়।”

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৭

একরাশ ক্ষোভ নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বললেন, “কিছুই বদলাল না। রাতে মোটরবাইকে চেপে আমার কোয়ার্টার্সে এসে নম্বরের জন্য শাসিয়ে গিয়েছে ছেলেরা।” এনআরএসের এক শিক্ষক চিকিৎসকের কথায়, “স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাকে ধরে নম্বর বাড়ানোর জন্য আমার উপরে চাপ তৈরি করছে দুই ছাত্র।” ন্যাশনাল মেডিক্যালের এক শিক্ষক চিকিৎসক আবার অভিযোগ করলেন, “হাসপাতাল থেকে ফেরার সময়ে রাস্তায় এক ছাত্র প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে গিয়েছে যাতে তাদের কোনও ভাবেই ফেল না করানো হয়।”

এই বিপত্তির কারণ, পরীক্ষার্থীরা খোলাখুলি জেনে যাচ্ছেন কোন মেডিক্যাল কলেজে কোন শিক্ষক-চিকিৎসক তাঁদের খাতা দেখছেন! এই অবস্থায় কতটা নিরপেক্ষ ভাবে খাতা দেখা সম্ভব, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে। আর বিতর্কের কেন্দ্রে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ৮টি মেডিক্যাল কলেজ।

পরীক্ষকদের যাতে কেউ প্রভাবিত করতে বা চাপ দিতে না-পারেন, তাই ২০১৪-১৫ বর্ষ থেকে নতুন নিয়ম চালু করেছেন রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ৮টি এবং জেলার ৯টি মেডিক্যাল কলেজের জন্য নিয়ম একটু আলাদা। এর মধ্যে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় এমবিবিএসের অন্তর্বর্তী পরীক্ষার খাতা দেখার নিয়মে পরীক্ষকদের প্রভাবিত করার পথ খোলাই রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ একাধিক অধ্যক্ষ ও ছাত্রছাত্রীর।

নিয়ম অনুযায়ী এত দিন এমবিবিএসের অন্তর্বর্তী পরীক্ষার থিওরি পেপারের জন্য কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার পড়ুয়ারা অন্য মেডিক্যাল কলেজে যেতেন। কিন্তু খাতা দেখা হত নিজেদের কলেজে। জেলার ক্ষেত্রে পরীক্ষা ও খাতা দেখা দু’টোই হত নিজের কলেজে। দুই নিয়মেই খাতা দেখার ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ, প্রভাব খাটিয়ে বা ভয় দেখিয়ে নম্বর বাড়ানোর মতো ঘটনা ঘটত বলে অভিযোগ।

এর পরেই ঠিক হয় জেলার ছাত্রছাত্রীরা নিজের কলেজে থিওরি পেপার পরীক্ষা দিলেও তাঁদের খাতা আসবে স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। তা হলে কারা খাতা দেখছেন, তা জানতে পারবেন না পড়ুয়ারা। এই নিয়মকে সব স্তর থেকেই স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু গোল বাধে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নিয়ে। সেখানে ঠিক হয়, ছাত্রছাত্রীরা যে মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে থিওরি পরীক্ষা দেবে, সেখানেই খাতা দেখা হবে তাঁদের।

বিতর্ক উঠছে এখানেই। কারণ, এ ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা জেনে যাচ্ছেন তাঁদের খাতা কোথায় দেখা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ক্ষেত্রেও পরীক্ষকদের প্রভাবিত করা বা ভয় দেখিয়ে নম্বর বাড়ানোর পথ খোলাই থাকছে। তা হলে নতুন নিয়মে লাভ কী হল? প্রশ্ন উঠেছে, জেলার মতো কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খাতা দেখার ব্যবস্থা হল না কেন?

রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, “কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির ক্ষেত্রে আগে নিজেদের ছাত্রদের খাতা নিজেদের কলেজে দেখায় যতটা স্বজনপোষণ বা অনিয়ম হত, এখন তা কমেছে।” কিন্তু পড়ুয়ারা কেন জানতে পারবেন কারা তাঁদের খাতা দেখছেন? উপাচার্যের জবাব, “কাজ করতে দিন। আর একটি কথাও বলব না।”

স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার কান্তাপ্রসাদ সিংহ অবশ্য মেনে নিয়েছেন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের খাতা দেখার ব্যবস্থায় গলদ রয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “মূলত লোকবল এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গার অভাবে জেলার পাশাপাশি কলকাতার খাতা দেখার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ফলে প্রক্রিয়াটি ত্রুটিমুক্ত থাকছে না।” তবে তিনি জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে কিছুটা জমি এসেছে। সেখানে নতুন ভবন তৈরি হলে জায়গার অভাব মিটবে। ততদিন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলির খাতার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের নামের বদলে ‘বার কোড’ দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা হচ্ছে। ফলে কোথায় খাতা দেখা হচ্ছে জানা থাকলেও কোনটা কার খাতা, তা জানা যাবে না। কিন্তু আদৌ কত দিনে এই ব্যবস্থা চালু করা যাবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

parijat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy