Advertisement
E-Paper

‘মুদ্রারাক্ষসের’ পেটে মিলল ৫৯টি কয়েন ও সাতটি চুম্বক

রোগাপাতলা ছোটখাটো চেহারার আব্দুল কালাম সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে এসেছিলেন পেটে ব্যথা নিয়ে। এক্স-রে করে ডাক্তারবাবুরা দেখলেন, কালামের পাকস্থলীতে বেশ বড়সড় কোনও জিনিস রয়েছে। অপারেশন টেবিলে রোগীর পেট কেটে তাঁরা তাজ্জব! বেরিয়ে আসছে একের পর এক মুদ্রা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫১
পেট থেকে বেরোনো সেই সব মুদ্রা।—নিজস্ব চিত্র।

পেট থেকে বেরোনো সেই সব মুদ্রা।—নিজস্ব চিত্র।

রোগাপাতলা ছোটখাটো চেহারার আব্দুল কালাম সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে এসেছিলেন পেটে ব্যথা নিয়ে। এক্স-রে করে ডাক্তারবাবুরা দেখলেন, কালামের পাকস্থলীতে বেশ বড়সড় কোনও জিনিস রয়েছে। অপারেশন টেবিলে রোগীর পেট কেটে তাঁরা তাজ্জব! বেরিয়ে আসছে একের পর এক মুদ্রা। এক টাকার, দু’টাকার, পাঁচ টাকার! সেগুলি পেটের মধ্যে ছ’-সাতটি শক্তিশালী চুম্বকের গায়ে আটকানো! গুণে-গুণে ৫৯টি মুদ্রা বার করেন চিকিত্‌সকেরা, সঙ্গে ৭টি চুম্বক।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর যাদবপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে বছর পঁয়তাল্লিশের আব্দুল কালাম এখন ভাল আছেন। কিন্তু তাঁর মন খুব খারাপ। কান্নাকাটি করেছেন। বিশ্বরেকর্ডটা এ যাত্রায় আর হল না। কত যত্নে একটু-একটু করে পেটের মধ্যে মুদ্রা জমাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন, ১০০টি মুদ্রা জমে গেলেই সবাইকে জানাবেন। বিখ্যাত হয়ে যাবেন। পেটের ব্যথাটা সব স্বপ্নে জল ঢেলে দিল।

লাজুক স্বভাবের কালাম অন্য রকম কিছু করে বিখ্যাত হতে চেয়েছিলেন। জানিয়েছেন, সাধারণ চটকল কর্মী হয়ে গতানুগতিক জীবন আর ভাল লাগছিল না। তিনি গাইতে পারেন না, নাচতে পারেন না, আঁকতে পারেন না, আর্থিক সঙ্গতি নেই, শরীরে জোরও নেই। বাড়ি বা কাজের জায়গা— কোথাও লোকে তাঁকে পাত্তা দেয় না। মাস তিনেক আগে এক রবিবার বিদ্যুত্‌ খেলে গিয়েছিল মাথায়। পেটে টাকা জমালে কেমন হয়? মলত্যাগের সময়ে কয়েন বেরিয়ে যেতে পারে, সেই আশঙ্কাও হয়েছিল। বহু ভেবেচিন্তে প্রথমে জল দিয়ে কয়েকটি চুম্বক গিলে ফেলেন। তার পরে কয়েন খাওয়া শুরু।

যে চিকিত্‌সক তাঁর অস্ত্রোপচার করেছেন সেই মৃত্যুঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “পরিকল্পনাটা জব্বর ফেঁদেছিলেন ভদ্রলোক। অনেকটা সফলও হয়ে গিয়েছিলেন। পাকস্থলী খুলে দেখলাম, প্রায় সমস্ত কয়েন চুম্বকের মধ্যে গোছা হয়ে আটকে রয়েছে।” মৃত্যুঞ্জয়বাবুর কথায়, “এক্স-রে করে দেখা গিয়েছিল, বেশ বড়সড় কিছু একটা তাঁর তলপেটে আটকে রয়েছে। টানা ১২ দিন ধরে দু’বেলা ওই রোগীকে জোলাপ জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। কিন্তু চুম্বক আর ধাতব মুদ্রা মিলে এতটাই ভারী তালের মতো হয়েছিল যে, এত জোলাপেও তা পেট থেকে বেরোয়নি।” অস্ত্রোপচারের পরে চিকিত্‌সকেরা দেখেন, চুম্বকের গায়ে মুদ্রা আটকে এত ভারী হয়ে গিয়েছে যে, পাকস্থলী ঝুলে তলপেটের নীচের দিকে চলে এসেছে। পাকস্থলীর গায়ে বড় ক্ষত।

হাসপাতালের শয্যায় বসে কালাম বলেন, “এর আগে দু’বার মলের সঙ্গে দু’টো কয়েন বেরিয়েছিল। আমার বিশ্বাস ছিল, শেষ পর্যন্ত বাকি কয়েন পেটে আরও কিছুদিন চুম্বক দিয়ে আটকে রাখতে পারব। কিন্তু হল না।”

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল জানান, নিজেকে যেনতেন ভাবে আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা প্রতিপন্নের একটা তাড়না সমাজে চেপে বসেছে, যা বিপজ্জনক। তাঁর কথায়, “এই ধরনের মানুষ এক দিকে বাস্তবজ্ঞানশূন্য, অন্য দিকে ঘোর বস্তুবাদী। দামি জিনিস শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে এঁরা নিজেরা দামি হতে চান।”

আবার মনোবিদ প্রশান্ত রায়ের ব্যাখ্যা, “অনেক সময়ে বহু মানুষ সকলের কাছে অবহেলিত হয়ে এমন ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন, যাতে সবাইকে তাক লাগানো যায়।”

তবে আব্দুল কালামের কোনও মানসিক সমস্যা আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যতিক্রমী এই রোগীর একটা নামও দিয়েছেন চিকিত্‌সকেরা। মুদ্রারাক্ষস!

parijat bandyopadhyay coins magnets abdul kalam mudrarakshasa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy