Advertisement
১৬ মে ২০২৪

ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর রেকর্ড গড়ল জেলা

গত তিন বছরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের। চলতি বছরে মাঝামাঝি সময়েই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এক ধাক্কায় ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০! এমনটাই ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুরে। শুধু এটাই নয়, আগে ম্যালেরিয়া দেখা যেত সাধারণত ঝাড়গ্রাম মহকুমা এলাকাতেই। সব থেকে বেশি হত বিনপুর-২ ব্লক অর্থাৎ বেলপাহাড়িতে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

গত তিন বছরে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের। চলতি বছরে মাঝামাঝি সময়েই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এক ধাক্কায় ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০! এমনটাই ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুরে। শুধু এটাই নয়, আগে ম্যালেরিয়া দেখা যেত সাধারণত ঝাড়গ্রাম মহকুমা এলাকাতেই। সব থেকে বেশি হত বিনপুর-২ ব্লক অর্থাৎ বেলপাহাড়িতে। এখন তা জেলার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ছে। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে উদ্বেগ তো বাড়বেই। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সক্রিয়।”

এ মাসেই ম্যালেরিয়ায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন শালবনি ব্লকের কর্ণগড় গ্রামের প্রতিমা হাজরা (২৮) ও মেদিনীপুর সদর ব্লকের হাতিহলকা গ্রামের মোক্তার খান (৪২)। হাতিহলকা, জোয়ারহাটি, রামগনর এলাকায় এখনও ১২ জন ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত। জেলা উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান ঘটানস্থলে যান। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাঁরা সকলেই ওড়িষার কালাহাণ্ডিতে কাজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে জ্বর বাধিয়ে জেলায় ফেরেন। তারই জেরে ওই এলাকায় ম্যালেরিয়া হয়েছে। আবার জুন মাসে খড়্গপুর-২ ব্লকের পপরআড়া গ্রামেও ম্যালেরিয়াতে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যক্তির। তিনিও অবশ্য ওড়িষাতে কাজে গিয়ে ম্যালেরিয়া নিয়ে এসেছিলেন।

তবে কর্ণগড়ের প্রতিমাদেবী বাইরে কোথাও যাননি। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “এটা ঠিক যে সকলেই বাইরে গিয়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিয়ে এসেছেন এমন নয়। জেলাতে থেকেও ম্যালেরিয়া হচ্ছে। তাই আমরা এই ধরনের খবর পেলেই দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করছি। সকলকে মশারি খাটিয়ে শোওয়ারও পরামর্শ দিচ্ছি।” হাতিহলকা, জোয়ারহাটি, রামনগর এলাকাতেও স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে মশারি দেওয়া হবে বলেও স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।

আগেও হঠাৎ কোথাও ম্যালেরিয়া হলে স্বাস্থ্য দফতরের তৎপরতা দেখা গিয়েছে। মশারি দেওয়া হয়েছে, এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে স্প্রে করা হয়েছে, যাতে মশার জন্ম না হয় সে জন্য জমা জল ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন পর ফের আবার একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। আগে সব থেকে বেশি হত বেলপাহাড়িতে। ২০১১ সালে জেলায় ১৫৫৩ জন ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। যার মধ্যে বেলপাহাড়িতেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯০১ জন, ২০১২ সালে জেলার ১৭৮৩ জন আক্রান্তের মধ্যে বেলপাহাড়িতে ছিল ১২৮০ জন, ২০১৩ সালেও জেলার ৭৪৭ জনের মধ্যে বেলপাহাড়িতে ৪০০ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর চলতি বছরে ৪৩৯ জনের মধ্যে ২৯২ জনেরই বেলপাহাড়িতে।

তবে বিগত তিন বছরে বেলপাহাড়িতে মৃত্যু হয়েছিল মাত্র একজনের। বাকি তিনজনের দু’জন গোপীবল্লভপুর ১ ও একজন ঘাটাল ব্লকের। আর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়েই জেলায় যে দশজনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে বেলপাহাড়ির চারজন রয়েছেন। বাকি ছ’জনের মধ্যে একজন বিনপুর ১ অর্থাৎ লালগড়ের, দু’জন শালবনির, একজন গড়বেতা ১ ব্লকের, একজন মেদিনীপুর সদর ও অন্য জন খড়্গপুর ২ ব্লকের।

অর্থাৎ, বেলপাহাড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা জেলার শীর্ষে থাকার পাশাপাশি এ বার মৃত্যুতেও এগিয়ে যাচ্ছে। কেন? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলপাহাড়ি এলাকায় ওষুধের অতি ব্যবহারে সাধারণ ক্লোরোকুইন কাজ করে না। ওখানে আর্টিসুনেট কম্বিনেশন থেরাপি-র (এসিটি) প্রয়োজন হয়। সব সময় সে ওষুধ থাকে না। আবার থাকলেও সচেতনতার অভাবে রোগীরা তা নিতে আসেন না।

বেলপাহাড়িতে ফের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি ও তারই সঙ্গে জেলা জুড়ে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়া এবং মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন। কারণ, বর্তমানে সাধারণ ম্যালেরিয়া নয়, জেলায় প্লাসমোডিয়াম ফালসিফেরাম হচ্ছে বেশি। যা অনেক বেশি ক্ষতিকারক। দ্রুত পদক্ষেপ না করলে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। তারই সঙ্গে ক্লোরোকুইন ইতিমধ্যেই বেলপাহাড়িতে কাজ করছে না। ফলে এসিটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। সারা জেলাতে যাতে এই ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে।

তাই ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি মশারি দেওয়া ও সচেতনতা শিবির করারও পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও গ্রামে ১ হাজার মানুষের মধ্যে ৫ জনের জ্বর হলেই যেন স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়। আর জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি বা বমি ভাব, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শরীরে দাগ দেখতে পাওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিলে (১ হাজারে ২ জনের এমন হলেও) সঙ্গে সঙ্গে যেন স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত সেই এলাকায় পৌঁছে স্বাস্থ্য দফতর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পদক্ষেপ করবে। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ, যে কোনও জ্বরেই ম্যালেরিয়া হতে পারে। তাই অগ্রাহ্য না করে সকলেই যেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। এভাবেই জেলায় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে চাইছে স্বাস্থ্য দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

malaria record death suman ghosh medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE