ছয়টি দেহ রাখার জায়গা রয়েছে। সেখানে নানা এলাকা থেকে উদ্ধার অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত পঞ্চাশটি দেহ স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে। কখনও ওই সংখ্যা ৭০ পেরিয়ে যায়। চারটি কুলিং মেশিনের একটি বিকল। গরমে ঘরের মেঝে থেকে বাইরে গড়িয়ে আসা গলা দেহ থেকে নিসৃত তরলে ভনভন করে মাছি। জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালের মর্গের এমনই হাল। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘নরক’। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অসহ্য হলেও সেখানে দাঁড়িয়ে নাকে রুমাল চেপে ময়না তদন্তের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। দূষণ এতটাই যে সামনে বিরাট খোলা মাঠ থাকলেও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে আশপাশের হস্টেলের ছেলেমেয়েরা দিনরাত ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। চিকিৎসক থেকে আবাসিক প্রত্যেকের অভিযোগ, বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে। ফার্মেসি কলেজ হস্টেলের আবাসিক শান্তনু মণ্ডল, সুমন বিশ্বাস, শুভজিৎ পাল বলেন, “হস্টেলে ৬০ জন আবাসিক। দুর্গন্ধের জন্য কেউ জানলা খুলতে পারে না। সমস্যার কথা জানানো হলেও লাভ হয়নি।”
‘নরক’ প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার সুশান্ত রায় বলেন, “মর্গ দেখাশোনার দায়িত্ব রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের। এখান থেকে দূষণ ছড়ানোর কথা আমরা প্রতি মাসে চিঠি করে ওই দফতরকে জানাচ্ছি। তবে তাতে ফল মেলেনি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ দেহ মর্গে পৌঁছে খবর পাঠালে চিকিৎসক ময়নাতদন্তের জন্য সেখানে যান। এ জন্য রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর ৫০০ টাকা দেয়। তাও ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বকেয়া ছিল। কয়েক দফায় চিঠি পাঠানোর পরে ২৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। ওই জট কাটাতে ফের ২০১৩-২০১৪র টাকা বকেয়া।
যদিও বকেয়া টাকার চেয়েও চিকিৎসকদের এখন মাথাব্যথা বেশি মর্গের পরিবেশ নিয়ে। হাসপাতালের পিছনে মর্গের পাশে রয়েছে ফার্মেসি, নার্সিং এবং চিকিৎসকদের হস্টেল। এক চিকিৎসক বলেন, “দুর্গন্ধের জন্য ঘরে থাকতে পারি না। ওখানে দাঁড়িয়ে কী করে কাজ করতে হয় সেটা ভাবুন।” স্বাস্থ্যকর্মী প্রদীপ বাঁশফোড় জানান, ছয়টি দেহ রাখার মতো ব্যবস্থা আছে মর্গে। সেখানে পঞ্চাশটির বেশি দেহ থাকছে। ঘরের সাটার তোলা যায় না।
সমস্যার কথা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও জানেন। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “মর্গের সমস্যার কথা জানি। ইতিমধ্যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি জেলাশাসক দেখছেন।” জলপাইগুড়ির জেলাশাসক পৃথা সরকার বলেছেন, “এই সমস্যা এড়াতে পঞ্চাশটি দেহ রাখা যাবে এমন ব্যবস্থাসম্পন্ন মর্গ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। অশ্রুমতি হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জমি-সহ দু’টি জমি দেখা হয়েছে। ভোটের পর কাজ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy