মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে মেনিংগো এনসেফ্যালাইটিস। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি। অভিযোগ, তড়িঘড়ি চিকিৎসকদের সেই দাবিকে ধামাচাপা দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। সব রকমের পরীক্ষা করার পর এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মেনিংগো এনসেফ্যালাইটিসের উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা মানতে নারাজ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের দাবি, ওই সার্টিফিকেটে ভুল করে মেনিংগো এনসেফ্যালাইটিসের উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্বাস্থ্যকর্তারা এনসেফ্যালাইটিসের কারণ ধামাচাপা না দেওয়ার চেষ্টা না করে বরং এলাকায় এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারের কাজ শুরু করুক।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে নাকাশিপাড়া থানার পশ্চিম জগদানন্দপুরের বাসিন্দা পরিতোষ ঘোষ (৪২) প্রচণ্ড জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে বেথুয়াডহরী গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হয়ে ওই হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি হন। কতর্ব্যরত চিকিৎসকেরা তাঁর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি মারা যান। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসক মৃত্যুর কারণ হিসেবে মেনিংগো এনসেফ্যলাইটিস লেখেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। অভিযোগ, মৃত্যুর কারণ ধামাচাপা দিতে তাঁরা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে থাকেন।
হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রী হালদার বলেন, “চিকিৎসকেরা প্রথমে ভেবেছিলেন যে মেনিংগো এনসেফ্যালাইটিসে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায় যে, আগে একটি দুর্ঘটনায় ওই ব্যক্তির মাথায় আঘাত লেগেছিল। তারপর থেকেই মাঝেমধ্যেই তাঁর খিঁচুনি হত। এ বারও জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হওয়ায় চিকিৎসকরা ভুল বুঝেছেন।” আরও এক ধাপ এগিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অধীপ ঘোষ বলেন, “ভাল করে খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওই ব্যক্তির মৃত্যু মেনিংগো এনসেফ্যলাইটিসে হয়নি। চিকিৎসকরা ভুল করে সেটা লিখে ফেলেছেন।” তাহলে ঠিক কী কারণে মৃত্যু হল ওই ব্যক্তির? সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর অবশ্য দিতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা।
পরিতোষবাবু নাকাশিপাড়া থানায় দীর্ঘদিন ধরে মৃতদেহ বহনের কাজ করতেন। গত বুধবার থেকে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বেথুয়াডহরী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পরে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন।
পরিতোষবাবুর শ্বশুর অজিত ঘোষ বলেন, “রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান যে জামাই এনসেফ্যলাইটিসে আক্রান্ত। এখন কেউ যদি অন্য কথা বলেন তা হলে আমরা মানব কেন?” তিনি আরও বলেন, “জামাই দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়েছিল বছর দশেক আগে। কিন্তু তার জন্য কোনও দিন খিঁচুনি হতে দেখিনি।”
এর আগে কল্যাণীতে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। তিনি জ্বর নিয়ে এসেছিলেন অসমের গুয়াহাটি থেকে। কিন্তু পরিতোষবাবু সম্প্রতি জেলার বাইরে যাননি বলে পরিবারের দাবি। তাহলে তিনি কীভাবে আক্রান্ত হলেন? তারও কোনও সদুত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy