ঘটনা ১: গত ডিসেম্বরে এক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়ে হাঁটুর নীচের হাড় ভাঙে বেনাচিতির অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চিকিৎসকরা দেখেন, হাড় যে ভাবে ভেঙেছে তাতে তা জোড়া দেওয়া মুশকিল। শেষ পর্যন্ত কৃত্রিম হাড় (জি-বোন) লাগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। যদিও ওই কৃত্রিম হাড় পুরোপুরি আসলের মতো কাজ দিতে পারে না।
ঘটনা ২: গত অগস্টে ডাম্পারের ধাক্কায় উরুর হাড় ভাঙে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের মোটরবাইক আরোহী রাহুল রায়ের। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর পা থেকে ভাঙা হাড়ের টুকরো বার করে, তা পরিশুদ্ধ করে ফের লাগিয়ে দেওয়া হয়। হাতের কাছে অস্থি-ব্যাঙ্ক থাকলে, সেখান থেকে হাড় প্রতিস্থাপনে আরও ভাল ফল পাওয়া যেত বলে মত অস্থি বিশেষজ্ঞদের।
দুর্ঘটনায় হাড় ভাঙা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ভাঙা হাড় মেরামত করা সব সময় সম্ভব হয় না ডাক্তারদের পক্ষে। তবে হাতের কাছে যদি ব্যবহার করার মতো হাড়, হাড়ের ‘টিস্যু’ বা ‘টেন্ডন’ মজুত থাকে, দুর্ঘটনাগ্রস্তের অঙ্গহানির আশঙ্কা অনেকটা কমানো যেতে পারে বলে মনে করছেন অস্থি বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও চণ্ডীগড়ে ইতিমধ্যেই এমন ব্যাঙ্ক হয়েছে জানিয়ে তাঁরা সওয়াল করছেন, এ রাজ্যে একটি অস্থি-ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার জন্য।
সম্প্রতি দুর্গাপুরে আয়োজিত অস্থি বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘ওয়েস্টবেঙ্গল অর্থপেডিক অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্মেলনে ফের সামনে এল অস্থি-ব্যাঙ্কের বিষয়টি।
অস্থি-ব্যাঙ্ক কী?
অস্থি বিশেষজ্ঞ তপন মৈত্র, নবারুণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, হাড়ের টিস্যু সংগ্রহ করা যায় হাঁটু ও হিপ-জয়েন্ট প্রতিস্থাপনের সময়। যা পরে অন্য রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। কেটে বাদ দেওয়া অঙ্গ থেকেও হাড় সংগ্রহ করা যেতে পারে। সেই হাড় বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে অস্থি-ব্যাঙ্কে।
সম্মেলনে যোগ দিয়ে মুম্বই-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রাজেশ মালহোত্র বলেন, “মোটরবাইকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরবাইক দুর্ঘটনা। অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকরা হয়তো দেখলেন, কোনও হাড় টুকরো হয়ে গিয়েছে। তা বদলানো দরকার। কিন্তু তার কোনও উপায় নেই। সেই সময় বোঝা যায়, অস্থি-ব্যাঙ্কের উপযোগিতা কতখানি।”
অস্থি বিশেষজ্ঞ নবারুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কখনও বোন-সিমেন্ট, কখনও জি-বোন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সেগুলো কৃত্রিম বিকল্প। আসল হাড় নয়। অস্থি ব্যাঙ্ক থাকলে এ সমস্যা হত না।”
বেঙ্গালুরুর অস্থি বিশেষজ্ঞ শান্তারাম শেট্টির মতে, “অস্থি-ব্যাঙ্ক নিয়ে খুব একটা ভাবনা-চিন্তা এখনও সে ভাবে হয় না। অথচ, কার্যক্ষেত্রে তা জরুরি।” ‘ওয়েস্টবেঙ্গল অর্থপেডিক অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক দেবদত্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, এমন একটি ব্যাঙ্ক গড়ার ব্যাপারে তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে দরবার করেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাজ হয়নি।
রাজ্যে এ ধরনের ব্যাঙ্ক হলে, তা দুর্গাপুরে গড়া হোক বলেও দাবি তুলেছেন একাধিক চিকিৎসক। তাঁদের বক্তব্য, দুর্গাপুরে জাতীয় সড়ক চার লেন হওয়ায় যানবাহনের গতি অনেক বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়েই তুলনায় শ্লথগতির সাইকেল, রিকশা এবং মোটরচালিত ভ্যান-এর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। ফলে, দুর্ঘটনাও বাড়ছে।
দুর্গাপুর হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী জানান, ওই হাসপাতালে মাসে গড়ে ২০ জন পথদুর্ঘটনায় জখম হয়ে ভর্তি হন। তাঁদের অর্ধেকই দ্বিচক্রযানে দুর্ঘটনার শিকার। অন্য দিকে, দুর্গাপুরের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি ধরলে মাসে গড়ে ৫০ জন দ্বিচক্রযান দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকেও রাজ্য সরকারের কাছে এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠানো হয় বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। বিষয়টি দেখার কথা রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার। তবে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এমন প্রস্তাবের কথা তাঁর জানা নেই। তবে তিনি বলেন, “এ ধরনের প্রস্তাব পেলে, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy