সোয়াইন ফ্লু নিয়ে এ বার গোড়া থেকেই কোনও ধরনের প্রচার করেনি রাজ্য সরকার। ফলে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে যেমন ধন্দ রয়েছে, ঠিক তেমনই ওই সব উপসর্গ দেখা দিলে কী কী করা উচিত সে নিয়েও কোনও স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়নি। এর পরিণাম যে কত মারাত্মক হতে পারে, এ বার একে একে তারই নমুনা মিলছে।
দিন কয়েক আগে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লুয়ের উপসর্গ থাকা দুই চিকিৎসক ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা করেছেন। পরে তাঁদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সেই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য জুড়ে। সেই তোলপাড় স্তিমিত হওয়ার আগেই সোমবার ফের বিপত্তি।
এ দিন মোট ১২ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা চার বছরের একটি শিশুও রয়েছে। ভক্তিনগরের বাসিন্দা চার বছরের ওই মেয়েটিকে গত শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। এ দিন স্বাস্থ্য ভবন থেকে জানানো হয়, তার রিপোর্ট পজিটিভ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে খবর পৌঁছনোর পরে জানা যায়, শিশুটি আগেই হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরই নিয়ম করেছিল, সোয়াইন ফ্লুয়ের উপসর্গ দেখা দিলে সেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠাতে হবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত রোগী হাসপাতালেই থাকবেন। যদি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তা হলে রোগীর ছুটি। আর পজিটিভ এলে হাসপাতালে ভর্তি রেখে ওষুধের কোর্স শেষ করে তবেই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্যের এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই সেই নিয়ম অমান্য করায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ভক্তিনগর এলাকাটি শিলিগুড়ি পুর এলাকার মধ্যে হলেও জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে। হাসপাতালে ভর্তি ওই শিশুর থুতুর নমুনা সংগ্রহ করার পর পরিবারের লোকেরা শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে নিজেদের দায়িত্বে বাড়িতে নিয়ে যান বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, পরিবারের লোকেরা নিতে চাইলেও হাসপাতাল শিশুটিকে ছাড়বে কেন? স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, যে সব রোগীর থুতুর নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে তাঁদের হাসপাতাল বা কোনও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর কথা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “শিশুটিকে কেন আইসোলেশন ওয়ার্ডে না রেখে পরিবারের লোকের কথাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখা হচ্ছে। সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীদের নির্দিষ্ট ওষুধের কোর্স রয়েছে। তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখেই চিকিৎসা করার কথা।” এ দিনও কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে এক মধ্যবয়স্ক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২১। সব মিলিয়ে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১৩। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে জানিয়েছেন, এর মধ্যে ২২৭ জন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে এখনও ভর্তি রয়েছেন ৭৫ জন। এ দিন যে ১২ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, তাঁদের দু’জন উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। চার বছরের শিশুটি ছাড়া অন্য জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের নার্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy