শয্যা অপ্রতুল, তাই ঠাঁই মেঝেতে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
মোম জ্বেলে ‘ফিভার ক্লিনিকে’ রোগী দেখলেন ৩ চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার সকালে লোডশেডিংয়ের জেরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে ওই বিপত্তি ঘটে। অসহ্য গরমে পাখা না-চলায় চিকিৎসকদের পাশাপাশি কাহিল হতে হয় রোগী এবং তাঁদের পরিবরের লোকদেরও। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনিক ভবনের নীচের তলায় বহির্বিভাগে টিকিট কাউন্টারে রোগীদের ভিড়। ভিতরে ফিভার ক্লিনিকে জ্বরের রোগীরা সার দিয়ে বসে। এমন সময় হঠাৎ আলো নিভে যায়। মাথার উপরে ঘুরতে থাকা পাখা থেমে যায়। বন্ধ হয় টিকিট কাউন্টারের কম্পিউটার। এতে বিপাকে পড়েন রোগী এবং তাদের পরিবারের লোকজন। অসহ্য গরমে কান্নাকাটি জুড়ে দেয় জ্বরে কাবু শিশুরা। পরিস্থিতি দেখে বারোপাটিয়া গ্রামের মহেন্দ্র বর্মনের মতো রোগীর বাড়ির লোকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অবস্থা বুঝে এক স্বাস্থ্যকর্মী তড়িঘড়ি চিকিৎসকদের টেবিলের উপরে মোম বাতি জ্বেলে দেন। এর পরে ওই আলোতেই শুরু হয় রোগী দেখা।
গুমোট গরমে মোমবাতি জ্বেলে রোগী দেখার কাজ চললেও কম্পিউটার বন্ধ হয়ে থাকায় কাউন্টার থেকে টিকিট দেওয়া যায়নি। জ্বরে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের লোকদের ঠায় দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ আসার অপেক্ষায় থাকতে হয়। আধ ঘণ্টা এ ভাবে চলার পর সাড়ে এগারোটা নাগাদ আলো জ্বলে। পাখা ঘুরতে শুরু করে। শুরু হয় টিকিট দেওয়া। তখনকার মতো হাফ ছাড়েন রোগী ও তাদের পরিবারের লোকেরা। তাঁদের একাংশ জানতে চান, সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে জেনারেটর নেই কেন? স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে তার উত্তর মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, শুধু বহির্বিভাগে কেন লোডশেডিং হয়ে গেলে গোটা প্রশাসনিক ভবন অন্ধকারে ডুবে যায়? দীর্ঘদিনের ওই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে কবে জেনারেটার আসবে সেটা তাঁদের জানা নেই।
বহির্বিভাগে চিকিৎসকের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পড়ে যান এক রোগিণী।
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বিশ্বরূপ বসাকের ছবি।
অন্য দিকে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কলেজে মেডিসিন সাধারণ বহির্বিভাগে চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চলে যাওয়ায় এ দিন অনেক রোগীকেই নাকাল হতে হয়েছে। এ দিন বেলা ১টা থেকে মেডিসিনের সাধারণ বহির্বিভাগে চিকিৎসক ছিলেন না। বাগডোগরার বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত মেয়ে পূজা শীলকে নিয়ে ওই বিভাগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েছিলেন নিখিলবাবু-সহ অন্য রোগীরা। চিকিৎসক নেই দেখে তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। বেড়া দেড়টার পর অসুস্থ পূজা চিকিৎসকের ঘরেই লুটিয়ে পড়েন। পাশের বিভাগ থেকে এক জন চিকিৎসক গিয়ে দেখে তখনই তাকে ভর্তির পরামর্শ দেন। বেলা ২টা পর্যন্ত ওই বিভাগে চিকিৎসক না এলে পাশের বিভাগের চিকিৎসকই বাকি রোগী দেখেন। সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “বহির্বিভাগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসক না থাকা দুর্ভাগ্যজনক। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
হাসপাতালের নিয়ম মতো ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে দেখাতে রোগীরা টিকিট করাতে পারেন। রোগী থাকলে বেলা ৪টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ খোলা থাকে। অথচ এনসেফ্যালাইটিস পরিস্থিতিতেও বহির্বিভাগে চিকিৎসক না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বহির্বিভাগে ফিভার ক্লিনিক খোলা হলেও সাধারণ বিভাগেও জ্বর নিয়ে অনেক রোগী যাচ্ছেন। সেখানে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী আসছেন। তার মধ্যে একাংশ জ্বর নিয়ে। চিকিৎসকরা দেখার পর মনে করলে রোগীদের সেখান থেকে ফিভার ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। ফিভার ক্লিনিকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের শিক্ষার্থী দু’জন চিকিৎসক বসছেন। তারা এনসেফ্যলাইটিস সন্দেহ করলে সিনিয়রদের কাছে পাঠাচ্ছেন। এ দিন বহির্বিভাগে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ধূপগুড়ির অসীমা অধিকারী, শিলিগুড়ির বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তীরা। অসীমার আত্মীয়া সুজয়া বর্মন বলেন, “এনসেফ্যালাইটিসে কত লোক মারা যাচ্ছেন। কত অসুস্থ চিকিৎসা করাতে আসছেন। তাদের নাজেহাল হতে হবে কেন তা বুঝতে পারছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy