৩০ দিন থেকে বেড়ে হল এক বছর।
‘জননী শিশু সুরক্ষা’ যোজনায় এ বার জন্ম থেকে ১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সরকারের। আগে যা ছিল এক মাস পর্যন্ত। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বাড়ানো ও শিশু মৃত্যু কমানোর লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।
চলতি মাস থেকে জননী সুরক্ষার এই নতুন মেয়াদ শুরু হয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষকে তা জানাতে আশাকর্মীদের মাধ্যমে, ফ্লেক্স-পোস্টার-ব্যানারে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র-ব্লক-অফিসের মাধ্যমে প্রচার চালানো হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “মূলত, শিশু মৃত্যু রোধেই এই প্রকল্পে নিখরচায় চিকিৎসা পরিষেবার সময় বাড়িয়েছে সরকার। আমরা তা সফল করতে সব ধরনের পদক্ষেপ করব।”
জননী শিশু সুরক্ষা যোজনা শুরু হয়েছিল ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে। প্রথম দিকে প্রচারের অভাবে অনেকেই এই পরিষেবার সুযোগ নিতে পারেনি। ফলে শুরুতেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য মিলেছিল, এমন দাবি করা কঠিন। ক্রমে গাঁ-গঞ্জের মানুষ প্রকল্পের কথা জানতে পারেন। পুরনো প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী, অন্তঃসত্ত্বাকে প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে নিখরচায় অ্যাম্বুল্যান্স মিলবে। প্রসূতিকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হলেও নিখরচায় মেলে অ্যাম্বুল্যান্স। সাধারণ ভাবে প্রসব হলে ৪৮ ঘণ্টা ও সিজার হলে ৭ দিন মায়ের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দেবে সরকার। হাসপাতালে খাওয়া, ওষুধ, রক্ত, ইসিজি, ইউএসজি বা অন্য কোনও পরীক্ষা করালেও খরচ লাগবে না। সেই সঙ্গে নবজাতকের ৩০ দিন বয়স পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ দেবে সরকার। নতুন নির্দেশিকায় মায়ের ক্ষেত্রে একই পরিষেবা থাকলেও শিশুর ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ বছর। ১ বছরের মধ্যে শিশু অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে, ওষুধ দেওয়া, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সব খরচ সরকারের।
লক্ষ্য শিশু মৃত্যুর হার কমানো
পশ্চিম মেদিনীপুরে শিশুর জন্ম-মৃত্যুর পরিসংখ্যান
প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব
প্রসবকালীন মৃত্যু
এক বছরের মধ্যে শিশু মৃত্যু
২০০৯-১০
৮৬৮৫৪
৮২
২৩৩৪
২০১০-১১
৮৪৭১৩
৫৭
১৯৩৬
২০১১-১২
৯১২৬০
৪৫
১৫৪১
২০১২-১৩
৮৪১৩৭
৫৬
১৬৯৩
২০১৩-১৪
৬৩১৫০
৩৭
১২৮২
(ডিসেম্বর পর্যন্ত)
এই বৃদ্ধির কথাটি জানা নেই অনেকেরই। মেদিনীপুর শহরের মোমিনমহল্লার বাসিন্দা ইয়াসমিন বিবির কথায়, “বাচ্চা হওয়ার সময় নিজেদের খরচে ভাড়া গাড়িতে পৌঁছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর জেনেছিলাম চাইলেই অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যেত!” ওই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর প্রশ্ন, “বাচ্চার যে ১ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ লাগবে না বলেছে, তা কী করে জানব? এই সে দিন তো ছেলে অসুস্থ হল। চেম্বারে গিয়ে ডাক্তার দেখালাম। রক্ত পরীক্ষা করতে দিল। খরচ করে তাও করলাম। এটা আগে জানলে হাসপাতালেই যেতাম।”
এক্ষেত্রে দু’টি সমস্যা রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। একটি প্রচার ও দ্বিতীয় হল অ্যাম্বুল্যান্স। সাধারণ মানুষ না জানতে পারলে পরিষেবার সুযোগ নিতে পারবেন না। এ বার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করলেও অনেকে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে তা কাজে লাগাতে পারবে না। এই সমস্যা মেটাতে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা প্রচারের পাশাপাশি এই কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সকেও কাজে লাগাতে পারে। প্রকল্পের জেলা আধিকারিক তথা উপ-জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গীর কথায়, “সাধারণ মানুষের কাছে এই পরিষেবা পৌঁছে দিতে আমরা সব দিক দিয়েই নজর রাখছি। সব রকম পদক্ষেপও করা হচ্ছে। আমরা চাই, যাতে কোনও শিশুর মৃত্যু না হয়।”
তবে এটা ঠিক যে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগের পাশাপাশি মানুষের সচেতনতাও অনেকটাই বেড়েছে। তাই গত ৫ বছরের নিরিখে দেখা যাচ্ছে, শিশু মৃত্যুর হারও কমে প্রায় অর্ধেক হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের আশা, এই ধরনের প্রকল্প চালু হওয়ায় শিশু মৃত্যু আরও কমবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy