Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল

সাত বছরেও হয়নি ট্রমা সেন্টার

সাত বছর কেটে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে ভবন। বহু টাকার যন্ত্রপাতিও এসেছে। কিন্তু খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু হয়নি আজও। এ বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জেলায় এসেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সরকার খড়্গপুরে ট্রমা ইউনিটের কাজ করছে। বাস্তবে অবশ্য দেখা যাচ্ছে ট্রমা ইউনিটের যন্ত্রপাতিতে ধুলোর স্তর পুরু হচ্ছে।

ট্রমা কেয়ার ইউনিটের ভবন বন্ধই পড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

ট্রমা কেয়ার ইউনিটের ভবন বন্ধই পড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচি
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

সাত বছর কেটে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে ভবন। বহু টাকার যন্ত্রপাতিও এসেছে। কিন্তু খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু হয়নি আজও। এ বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জেলায় এসেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সরকার খড়্গপুরে ট্রমা ইউনিটের কাজ করছে। বাস্তবে অবশ্য দেখা যাচ্ছে ট্রমা ইউনিটের যন্ত্রপাতিতে ধুলোর স্তর পুরু হচ্ছে।

২০০৬ সালে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ট্রমা ইউনিট চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। বাম আমলেই ভবন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। কেন্দ্র প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করলে শুরু হয় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। ২০০৯ সালে ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কেনা হয় বেশ কিছু চিকিৎসার সরঞ্জামও। তারপর আর কাজ এগোয়নি। মাঝেমধ্যে শুধু চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে। হাসপাতালের সুপার দেবাশিস পাল জানান, ওই ট্রমা ইউনিটের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জেনারেল ডিউটি অফিসার, নার্স ছাড়াও জেনারেটর প্রয়োজন। এগুলি পাওয়া গেলেই কাজ চালু করা যাবে।

রেলশহর খড়্গপুরের পুব-পশ্চিমে মুম্বইগামী ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং উত্তর-দক্ষিণে ওড়িশাগামী ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক রয়েছে। এর বাইরে গোটা শহর জুড়েই রয়েছে বিস্তৃত রেলপথ। ফলে, সড়ক বা রেলপথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রাথমিকভাবে আহতদের আনা হয় মহকুমা হাসপাতালে। শুধু খড়্গপুর শহর নয়, গোটা মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরাই এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। তবে এত চাপ নেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় আশঙ্কাজনক রোগীদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল অথবা কলকাতায় রেফার করা হয়। যাতায়াতের পথে অনেকের মৃত্যুও হয়। এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই ট্রমা ইউনিট চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ট্রমা ইউনিটের জন্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার দামের প্রায় ৫টি মনিটর, দু’টি অপারেশন টেবিল, ২৬টি শয্যা (এর মধ্যে ৬টি আইটিইউ-এর)-র বন্দোবস্ত হয়েছে। আইটিইউ চালানোর জন্য অক্সিজেন লাইন ও জেনারেটরের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। তবে সব থেকে বড় সমস্যা হল চিকিৎসক-নার্স-কর্মীর বন্দোবস্ত না হওয়া। এই ট্রমা ইউনিটের জন্য আলাদা করে তিন জন সার্জেন, তিন জন অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, তিন জন অ্যানাস্থেটিস্ট, চার জন জেনারেল ডিউটি অফিসার ও ২৫ জন নার্স প্রয়োজন। সেই সঙ্গে একজন করে এক্স-রে ও ল্যাব টেকনিশিয়ান দরকার। এই মুহূর্তে অবশ্য এক জন সার্জেন ও এক জন নার্স ছাড়া আর কেউ নেই। তবে হাসপাতালে কর্মরত অর্থোপেডিক, সার্জেন ও অ্যানাস্থেটিস্টদের অন্তত কয়েকজন পাওয়া গেলেই এই ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু করা যাবে বলে জানিয়েছেন সুপার। তাঁর কথায়, “হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক কম রয়েছেন। এক-দু’জন করে বাড়িয়ে দিলে ট্রমা ইউনিট চালু করা যেতে পারে। তবে সাত জন জেনারেল ডিউটি অফিসার চাই। আর জেনারেটর আবশ্যিক।”

কতদিনে শূন্যপদ পূরণ করে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু হবে, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। চলতি বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের ‘রিজিওনাল অফিসার অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার’ ঘুরে গিয়েছেন এই হাসপাতাল থেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁরা দিল্লিতে এই ট্রমা চালুর জন্য চিকিৎসক-কর্মীর অভাবের কথা জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু তারপরে কেটে গিয়েছে চার মাস। কাজ এগোয়নি।

কিছু দিন আগেই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে খড়্গপুর মহকুমার কেশিয়াড়ি ও নারায়ণগড়ে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার এই জেলায় ৬টি মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল করছে। প্রসঙ্গক্রমে খড়্গপুরে ট্রমা কেয়ার ইউনিটের কাজ হচ্ছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপরে ট্রমা কেয়ার ইউনিটের দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন হাসপাতালের কর্মীরা। একই সঙ্গে তাঁরা মানছেন, এ ক্ষেত্রে উদ্যোগের অভাব রয়েছে। খড়্গপুর হাসপাতালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী ফেডারেশনের উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আশা জাগছে। আগেও অবশ্য তিনি একথা বলেছিলেন। আসলে ওঁর ইচ্ছে আছে বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু উদ্যোগের অভাবেই এখন চালু হল না ট্রমা ইউনিট।”

হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা খড়্গপুরের পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে অবশ্য জানান, এই উদ্যোগ ইউপিএ সরকারের। ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। কিন্তু বাম আমলে এবং তিন বছরের তৃণমূল সরকারের আমলে তা সম্পূর্ণ করার উদ্যোগ দেখা যায়নি। খড়্গপুরের প্রাক্তন পুররপ্রধান তথা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান জহরলাল পালের দাবি, বাম আমলে অপরিকল্পিতভাবে কাজ হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ট্রমা ইউনিট নিয়ে নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে। জহরলালবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেছেন তখন আমাদের বিশ্বাস শীঘ্রই এই ট্রমা ইউনিট চালু হবে।”

আশায় রয়েছেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্যও। তাঁর বক্তব্য, “২৮ মে পর্যন্ত নির্বাচনী বিধি লাগু থাকায় এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। ২৮ মে-র পরে ট্রমা ইউনিট নিয়ে আলোচনায় বসবো। আশা করছি দ্রুত তা চালু করা যাবে।”

ওটি কাণ্ডের তদন্তে প্রশ্ন শিলিগুড়িতে

নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি

ওটিতে চিকিৎসকের সহকারী হিসাবে বহিরাগতের ঢোকার অভিযোগের ১২ দিন পরেও তদন্ত রিপোর্ট তৈরি না হওয়ায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। সোমবার হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে দেখা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই প্রতিনিধি। সুপার তাদের নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি বলে অভিযোগ। সুপার অমরেন্দ্র সরকার বলেন, “আশা করছি শুক্রবার তদন্ত রিপোর্টের ব্যাপারে কিছু জানাতে পারব।” যুবকের বিরুদ্ধে রোগিণীর পরিবারকে বেশি দামে চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করায় প্রতারণার অভিযোগ আছে। এতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে অর্থপেডিক বিভাগের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও। রোগীর পরিবারের লোকেরা অভিযুক্তকে ওটি থেকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়। তবে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই পুরো ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট তৈরির কথা জানানো হলেও তা করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার ৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে কর্তৃপক্ষের গড়িমসি নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়। কেন ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না সে প্রশ্ন তুলে তারা সুপারের দফতরে বিক্ষোভ দেখান। কবে রিপোর্ট মিলবে তা নির্দিষ্ট করে সোমবার বলবেন বলে হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার জানান। গত ১৪ মে মেডিক্যাল কলেজে ভারতী দাস নামে এক রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য ৫ হাজার টাকার সরঞ্জাম ১৭ হাজার টাকায় সরবরাহের অভিযোগ ওঠে অভিযুক্ত যুবক নির্মল মণ্ডলের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, চিকিৎসক শুভাশিসরঞ্জন মিত্র-ই ফোন নম্বর দিয়ে রোগিণীর লোকদের নির্মলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE