Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত জলপাইগুড়ির দুই চিকিত্‌সক

সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীর চিকিত্‌সা করতে গিয়ে এই রোগের শিকার হলেন জলপাইগুড়ি হাসপাতালের দুই চিকিত্‌সক। চিকিত্‌সা করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গে এই প্রথম কোনও চিকিত্‌সক সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হলেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীর চিকিত্‌সা করতে গিয়ে এই রোগের শিকার হলেন জলপাইগুড়ি হাসপাতালের দুই চিকিত্‌সক। চিকিত্‌সা করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গে এই প্রথম কোনও চিকিত্‌সক সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হলেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

জ্বর হওয়ায় মঙ্গলবার দুজনের গলার কফ এবং সংক্রমিত জায়গার রসের নমুনা (সোয়াব) পরীক্ষার জন্য কলকাতায় ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এনটেরিক ডিজিসে’ পাঠানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায় সেই পরীক্ষার রিপোর্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পৌঁছয়। জানা গিয়েছে, দু’জনই সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

জলপাইগুড়ি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিত্‌সা শুরু হয়েছে দুই চিকিত্‌সকের। এই নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলায় সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন। এর আগে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত ধূপগুড়ির বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁরই চিকিত্‌সার দায়িত্বে ছিলেন ওই দুই চিকিত্‌সক।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত এক চিকিত্‌সক এদিন সকাল থেকে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার ‘অন কল’ ডিউটিতে ছিলেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীও দেখেন তিনি। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এনটেরিক ডিজিসের রিপোর্ট জানার পরেই তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার কথা জানার পরে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী এবং রোগীর বাড়ির লোকজনের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, মারাত্মক সংক্রমিত রোগ জেনেও কেন সোয়াব পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না পেয়ে ওই চিকিসত্‌ককে কাজে যোগ দিতে অনুমতি দেওয়া হল। ওই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, “দু’জন চিকিত্‌সকের শরীরে সোয়াইন ফ্লুর জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিত্‌সা শুরু হয়েছে। তাঁরা সুস্থ আছেন। আতঙ্কের কিছু নেই।”

হাসপাতাল সুপার পার্থ দে দাবি করেছেন, দু’জন চিকিত্‌সকের মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে স্বেচ্ছায় কাজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে বলা হয়। তিনি বলেন, “দুই চিকিত্‌সকের জ্বর হলেও শরীরে সোয়াইন ফ্লুর উপসর্গ ছিল না। তবু সতর্কতা হিসেবে তাঁদের সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। একজনের তিনদিন থেকে জ্বর নেই। তিনি স্বেচ্ছায় কাজে যোগ দেন।” স্বাস্থ্য কর্মী এবং রোগীর পরিজনদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সুপার দাবি করেন, “রোগীদের ভালর জন্য বাড়িতে বসে না থেকে ওই চিকিত্‌সক কাজে যোগ দেন। মাস্ক পরে কাজ করেন। এটাকে সমালোচনার চোখে দেখলে চিকিত্‌সকদের মনোবল ভেঙে যাবে। সন্ধ্যায় রিপোর্ট হাতে পাওয়া মাত্র তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই চিকিত্‌সক গত ৭ মার্চ থেকে জ্বরে ভুগছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, শুরুতে তাঁদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিত্‌সা করানোর কথা ভাবা হলেও, শরীরে সোয়াইন ফ্লুর উপসর্গ না থাকায় পরে বাড়িতে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়। গত পয়লা মার্চ রাতে ধূপগুড়ি হাসপাতাল থেকে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত যে ছাত্রকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়, ওই দুই চিকিত্‌সক তার চিকিত্‌সার দায়িত্বে ছিলেন। এখন ছাত্রটি সুস্থ হয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিত্‌সকদের উপহার দেওয়া ‘পাজল গেম’ খেলতে ব্যস্ত। তার পাশের শয্যায় রোগী দুই চিকিত্‌সকের চিকিত্‌সা চলছে। সুপার বলেন, “ছাত্রটি সুস্থ। দু’এক দিনের মধ্যেই ছুটি দেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jalpaiguri swine flu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE