সারাদিন অবিশ্রান্ত ভাবে রিম-ঝিম তালে বৃষ্টি হয়ে চলেছেǀ মাথার উপরে আকাশজুড়ে মেঘের ঘনঘটাǀ মধ্যচল্লিশের এই আমি, সহধর্মিনী এবং সন্তান সহযোগে এখন পুরোদস্তুর একজন সংসারি মানুষ। মাথার উপরে বাবা-মায়ের ভালবাসা আর শাসন কোনওটাই নেইǀ এই ধরাধামে তাঁদের অশরীরী আশীর্বাদ এখনও আছে কিনা আমি জানি নাǀ মহানগরের ভাগের বাড়ির ছোট্ট এক টুকরো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে টিপ টিপ শব্দ শুনছি। সেই সকাল থেকে একাǀ ছোট হলেও এই ব্যালকনিটাই আমাকে খোলা আকাশের এক পশলা ঘ্রান এনে দেয়ǀ এই ফ্ল্যাটবাড়ির পাঁচিলের ওপারের পড়শির আমগাছের বেশিরভাগটাই হেলে পড়েছে এদিকেǀ
সেই গাছের পাতায়-পাতায় শাখায়-শাখায় মৃদুমন্দ ছন্দে টিপ টিপ সুর বেজে চলেছে সেই সকাল থেকে। মাথার উপর দিয়ে ভেসে চলেছে মেঘ ǀ কালো রঙেরও কত বৈচিত্র থাকে তা এই আষাঢ়ের মেঘ না দেখলে বোঝা মুশকিলǀ মেঘের কোনও কোনও টুকরোতো মনে হচ্ছে মাথার ঠিক উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। ছোটবেলায় এমন মেঘ দেখে আমার খুব ইচ্ছে হতো গ্রামের বাড়ির আকাশমনি গাছটার মগডালে উঠে তুলো জড়ানো লাঠি দিয়ে মেঘগুলোকে ছুঁয়ে দেখিǀ
আজকের এই উড়ন্ত মেঘ আর তার বাদলা দিনের টিপ টিপ নৈঃশব্দ এক ঝটকায় আমাকে নিয়ে গেল অবুঝ শৈশব থেকে দুরন্ত যৌবনেǀ এমনি এক টিপ টিপ বৃষ্টিভেজা দিন। শহরের কলেজ থেকে শনিবারে বাড়ি ফিরেছি। তিন দিন বাড়িতে কাটানো হয়ে গেল, কিন্তু কণিকার সঙ্গে একবারও দেখা হল নাǀ তখন তো আর হাতে হাতে মোবাইল ফোন ছিল না, যে শুধু মুধু খোশগল্প করতে ইচ্ছে হলেই আঙুলের স্পর্শে পৌঁছে যাব ওর কাছেǀ ওদের বাড়িতে যাওয়া যায়। কিন্তু প্রত্যেকবার যাওয়ার আগে একটা যুৎসই কারণ বানিয়ে নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয় ওর বাড়ির লোককে। সেই সঙ্গে যেন কিছুটা কণিকাকেও। কারণ সেই অর্থে ও আমার বন্ধু ছাড়া কিছুই ছিল না, অন্তত ওর তরফ থেকেǀ আর একটা মেয়ে বন্ধুর বাড়িতে হাজির হতে কিছু বাহানা তো বানাতেই হতোǀ