Advertisement
E-Paper

Rupankar Bagchi: এ কোন শ্রাবণ, মন উচাটন! জানালেন রূপঙ্কর

ঠিক তখনই বৃষ্টি নামল ঝমঝমিয়ে। যেন মায়ের জ্বালা জুড়োতে এই বৃষ্টি নেমেছে! কানে বেজে উঠল সেতারে মেঘমল্লার! দিপুদা বাজাচ্ছে। দিপুদাকে পাড়ার লোকে ‘পাগল’ বলে।

রূপঙ্কর বাগচী

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ১০:২৭
রূপঙ্করের কলমে শ্রাবণের স্মৃতিরা

রূপঙ্করের কলমে শ্রাবণের স্মৃতিরা

ওই যে মেঘ ঈশান কোণে জমে উঠছে, তার দিকে যেই চোখ পড়ল, অমনি অভিমানী মেয়েটির চোখ দিয়ে জল গড়াল। জানলার গরাদে মুখটা চেপে ধরে কাজল কালো চোখে অশ্রু নামল। যদি সেই সময় রবি ঠাকুর লিখতেন— ‘নিবিড় মেঘের ছায়ায় মন দিয়েছি মেলে’... তা হলে সেই অত্যাশ্চার্যের বিপরীতে মির্জা গালিব কি লিখে ফেলতেন— ‘আহ্ কো চাহিয়ে এক উমর আসর হোনে তক’?

মা ডেকে উঠলেন, “মেঘলা, চান করেছিস?” উত্তর দিল না মেঘলা। মা আবার বললেন, “যা চানে যা, জ্বালিয়ে মারে মেয়েটা।”

ঠিক তখনই বৃষ্টি নামল ঝমঝমিয়ে। যেন মায়ের জ্বালা জুড়োতে এই বৃষ্টি নেমেছে! কানে বেজে উঠল সেতারে মেঘমল্লার! দিপুদা বাজাচ্ছে। দিপুদাকে পাড়ার লোকে ‘পাগল’ বলে। মেঘলা বুঝতে পারে না ,দিপুদা পাগল হয়ে কী করে এত ভাল সেতার বাজায়!

ঠিক এই সময় নচিকেতা চক্রবর্তী গেয়ে উঠলেন ‘শ্রাবণ ঘনায় দু’নয়নে’। অন্য দিকে ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি/ বৃষ্টির ছবি এঁকেছি’ গাইতে গাইতে অঞ্জন দত্ত রোদচশমাটা হঠাৎ করে খুলে ফেললেন।

এই রকম এক দিনে যদি মুহূর্তরা আমার বা আপনার বা মেঘলার ইচ্ছের টাইম মেশিনে চড়ত, তা হলে সেই ক্ষণেই বিভূতিভূষণ ‘আরণ্যক’-এর প্রথম লাইনটা লিখে ফেলতেন বা কাজি নজরুল ইসলাম সেই অনুক্ষণেই গেয়ে ফেলতেন, ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে ’।

লতা মঙ্গেশকরও সেই সময়ই হয়তো শচীনকর্তার কাছ থেকে শিখছেন ‘মেঘা ছায়ে আধি রাত ’।

মেঘলা শুয়ে পড়ল বিছানায়। চান করবে না আজ! রোজ রোজ চান করার কী আছে! খাবেও না আজ! মেঘলার কষ্ট হচ্ছে। কী জন্যে যে কষ্ট হচ্ছে, তা ঠিক ঠাহর করতে পারছে না সে। কিন্তু হচ্ছে তো বটেই। ডিপ্রেশন বা মনখারাপের আরেক নাম হতেই পারত ‘গহন মেঘের ছায়া ঘনায়, সে আসে ’, মান্না দে গাইতেন আর হয়তো সে আসত।

‘সে’-টি কে? মেঘলার প্রেমিক? নাঃ! মেঘলা তো সে ভাবে কাউকে কোনও দিন কামনা করেনি! তা হলে কি ‘সে’ আসলে কোনও প্রতীক? কোনও বিপ্লব? নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেতারে মেঘ রাগের ঝঙ্কার, না পণ্ডিত ভীমসেন যোশীর উচ্চ কোমল নিষাদ থেকে এক ঝলকে মন্দ্র কোমল নিষাদের স্পর্শ?

মেঘলা যখন খাটে এপাশ ওপাশ করছে, কান্না আসছে প্রবল কোনও কারণ ছাড়াই, আমি চাঁদনি চকের ফুটপাতে ছাতা মাথায় হাঁটছিলাম হয়তো ঠিক সেই সময়ই। আমার সামনে আমার এক খুব পরিচিত কেউ হেঁটে যাচ্ছিলেন, তাঁরও মাথায় ছাতা। দুপুরবেলা, প্রবল খিদে পেয়েছে। আমি জানতাম, মেয়েটি চাকরি করে, আমরা একসঙ্গে থিয়েটার করতাম। মেয়েটির ঘাড় ভেঙে চাওমিন খাব, এটাই ছিল প্ল্যান। আমার পকেটে তখন একটি গানের কাগজ, কবি সৈকত লিখেছেন ‘আজ শ্রাবণের বাতাস বুকে এ কোন সুরে গায় ’। গানটি সুর করবেন অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়। আমার ছাতা দিয়ে দিলাম এক টোকা সামনের ছাতায়। মেয়েটি ঘুরে বলল, “এ আবার কী?” আমি বললাম, “চাওমিন খাওয়াবি?” তখন অ্যানালগের যুগ! দূর থেকে ভেসে এল কিশোর কুমার গাইছেন ‘রিমঝিম গিরে শাওন’। ছাতায় ছাতা মিশে তখন বৃষ্টি-পারাবার। বুকের ভিতর বৃষ্টি পড়ে আর টলোমলো কাগজের নৌকা এগিয়ে যায় মেঘলা-দিপুদা-মল্লার-শাওন-ছাতা-চাওমিন ছাড়িয়ে কোন নিরুদ্দেশে...

এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ

Rupankar Bagchi Monsoon story আষাঢ়ের গল্প Monsoon Special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy