Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসার রোগীদের পাশে অটোচালক হারাধন

সামনে তেমন কাউকে পেলেই হলো। বিনা পয়সায় ওই রোগীকে হাসপাতাল, বাড়ি বা অন্য গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে তবেই স্বস্তি তাঁর। তিনি আগরতলার ডুকলি পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা হারাধন দাস বৈদ্য।

হারাধনবাবু ও তাঁর অটো। আগরতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

হারাধনবাবু ও তাঁর অটো। আগরতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

বাপি রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪০
Share: Save:

ক্যানসার রোগীর খোঁজে রাস্তায় ওৎ পেতে বসে থাকেন ওই অটোরিকশা চালক!

সামনে তেমন কাউকে পেলেই হলো। বিনা পয়সায় ওই রোগীকে হাসপাতাল, বাড়ি বা অন্য গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে তবেই স্বস্তি তাঁর। তিনি আগরতলার ডুকলি পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা হারাধন দাস বৈদ্য।

ভরা সংসার। কিন্তু প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়ির খরচের কথা ভাবেন না তিনি। শহরের নাগেরজলা, রাধানগর বা চন্দ্রপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে অটোরিকশায় অপেক্ষা করেন কোনও ক্যানসার রোগীর।

হারাধনবাবু বলেন, ‘‘এক দিন দেখি বাসস্ট্যান্ড দু’জন দাঁড়িয়ে। এক জনের গলায় কেমোথেরাপির দাগ। ওঁদের ধরে অটোরিকশায় তুলে নিই। হাসপাতালে পৌঁছনোর পর টাকা না নেওয়ায় অবাক হয়েছিলেন তাঁরা। প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন।’’ সেটাই সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেন হারাধনবাবু। ওই অটোরিকশা চালকের বক্তব্য, ‘‘ক্যানসার একটা পরিবারকে কী ভাবে শেষ করে দেয়, তা দেখেছি। এক দিকে শারিরীক যন্ত্রণা, অন্য দিকে আর্থিক। এ ভাবেই তা-ই ওঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।’’ এ কাজে তাঁর ‘দোসর’ অটোরিকশাটিও। সেটিতে পোস্টার লাগিয়েছেন হারাধনবাবু। লিখে দিয়েছেন তাঁর ফোন নম্বরও। কিন্তু তেমন ভাবে সাড়া না মেলায় হতাশ তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে বিশ্বাসই করতে চান না যে বিনা ভাড়ায় ক্যানসার রোগীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই।’’ হারাধনবাবু জানান, এখনও পর্যন্ত শ’খানেক রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছেছেন| তাঁর এই পরিষেবার কথা আরও বেশি ক্যানসার রোগী ও তাঁদের পরিজনদের কাছে পৌঁছে দিতে আগরতলার বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞাপন লাগানোর ইচ্ছা রয়েছে হারাধনবাবুর। বিনা খরচে সেই সুয়োগ দেওয়ার আর্জি নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে আগরতলা পুরনিগমের মেয়রের সঙ্গেও দেখা করতে চান তিনি।

এ কাজে সাহায্যের জন্য ত্রিপুরা ক্যানসার হাসপাতালের সুপার গৌতম মজুমদারের কাছেও তাঁর ফোন নম্বর দিয়ে রেখেছেন হারাধনবাবু। কোনও রোগীর প্রয়োজনে ওই নম্বরে ফোন করলেই হাজির হবেন তিনি।

পুরস্কারের আশাতেই কি এ কাজ করছেন? হারাধনবাবুর জবাব, ‘‘রোগীদের আশীর্বাদই আমার পুরস্কার। আর কিছু চাই না। আমার স্ত্রী, ছেলেও এ নিয়ে একমত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE