Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ললিত বিতর্কে জেটলির যুক্তি, সরব রাজকুমার

এক দিকে তাঁর কথার ‘ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করে বিদেশ সফরে গিয়েও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে-র ছেলে দুষ্মন্ত সিংহ ও ললিত মোদীর মধ্যে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তদন্ত ‘নিজের মতোই চলবে’ বলে জানালেন অরুণ জেটলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০২:৫০
Share: Save:

এক দিকে তাঁর কথার ‘ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে’ বলে অভিযোগ করে বিদেশ সফরে গিয়েও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে-র ছেলে দুষ্মন্ত সিংহ ও ললিত মোদীর মধ্যে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তদন্ত ‘নিজের মতোই চলবে’ বলে জানালেন অরুণ জেটলি। অন্য দিকে, বিজেপির এক সাংসদ জোর গলায় বললেন, ‘‘এক পলাতককে সাহায্য করা ঠিক নয়, সে যিনিই সাহায্য করুন না কেন।’’ বক্তার নাম রাজকুমার সিংহ— দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব।

গোটা ঘটনায় ললিত মোদী বিতর্কে বিজেপির অন্তর্কলহ আরও এক বার প্রকট হয়ে গেল বলে করছেন অনেকে। সম্প্রতি জেটলিকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ললিত মোদীর সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে বসুন্ধরা-পুত্রকে কার্যত ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। ললিতের সংস্থার থেকে দুষ্মন্ত ১১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তা নিয়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র তদন্তও চলছে। সংবাদ প্রতিবেদনে জেটলিকে উদ্ধৃত করে এ-ও বলা হয়, ‘‘ললিত মোদী ও দুষ্মন্তের সংস্থার আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ ভাবে বাণিজ্যিক। এটা দুই ব্যক্তির লেনদেন। এ বিষয়ে ভারত সরকারের কিছু করার নেই।’’ অর্থ মন্ত্রকের অধীন ইডি-কে খোদ অর্থমন্ত্রীই প্রভাবিত করছেন বলে অভিযোগ তোলে কংগ্রেস। এর পর গত কাল জয়পুরে গিয়ে বসুন্ধরার সঙ্গে বৈঠক করে তাঁর পাশে দাঁড়ান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে জেটলিকে তাঁরই ‘মন্তব্য’ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যার উত্তরে অর্থমন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘এমন কোনও শব্দ (বাণিজ্যিক লেনদেন) আমি ব্যবহার করিনি। এটা আমার আওতায় পড়ে না। কথার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা এ বিষয়ে যে ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে, তা তেমনই চলবে।’’

জেটলি ইতিমধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলনে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ললিত কাণ্ডের দায় একা সুষমার উপরেই বর্তাচ্ছে। তিনি নিজে এত দিন এই বিতর্কের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলছিলেন। কিন্তু গত কাল টুইট করে কৌশলে জেটলির দিকেও তিরটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন ললিত। তিনি লিখেছেন, ‘শ্রী অরুণ জেটলি, বিরোধী দলনেতা থাকার সময়ে আপনি কি লন্ডনের হোটেলে কয়েক ঘণ্টার জন্য ললিত মোদীর সঙ্গে দেখা করেছেন?’ অর্থাৎ জেটলির সঙ্গেও যে তাঁর দেখাসাক্ষাৎ ছিল, এমনই একটা ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন প্রাক্তন আইপিএল কর্তা।

এর আগে দলের মধ্যে থেকেই জেটলি-শিবিরের দিকে আঙুল উঠেছে। সুষমার হয়ে মুখ খুলে সাংসদ কীর্তি আজাদ বলছিলেন, ‘আস্তিনের সাপটি কে?’ এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আইপিএলের টাকা লুঠের প্রশ্নে একা ললিত মোদী দায়ী নন। অরুণ জেটলি-সহ সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অন্য সদস্যদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত।’’

দলের অনেকের মতে, সুষমা-ঘনিষ্ঠ কীর্তির মোকাবিলাতেই আজ মাঠে নামানো হল রাজকুমারকে। কারণ প্রাক্তন এই আমলা জেটলির ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব আজ দাবি তুলেছেন, ‘‘ললিত মোদীকে দেশে ফিরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চালানো উচিত।’’ ললিত-বিতর্কে ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। এই পদক্ষেপও যথার্থ বলে মনে করেন রাজকুমার। মারিয়া তাঁর ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন, ললিতের জীবনহানির আশঙ্কা নিয়েই লন্ডনে ওই বৈঠক হয়েছিল এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আর আর পাটিলকে তিনি সে কথা বলেছিলেন। বিজেপির তরফে বলা হচ্ছে, পুলিশ কমিশনারের এই ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট।

তবে দলের অন্দরের খবর, মারিয়াকে সরানোর কথা ভাবা হচ্ছে না। কারণ সে ক্ষেত্রে বিরোধীরা অভিযোগ তুলবে, সুষমা-বসুন্ধরার মতো রাজনৈতিক নেত্রীদের আড়াল করতে মারিয়ার মতো দক্ষ আইপিএস-কে শিখণ্ডী খাড়া করল বিজেপি। তবে বিরোধী আক্রমণের ঝাঁঝ যে বেড়েই চলবে, এ নিয়ে বিজেপির অন্দরেও এখন খুব একটা দ্বিমত নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE