গ্রেফতার মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লা। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তখন বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেবে জম্মু ও কাশ্মীরে।
শ্রীনগরে বৃষ্টি ভেজা সুনসান রাস্তায় তখন নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ি ছাড়া হুটার বাজিয়ে ছুটে চলা দুটো একটা অ্যাম্বুল্যান্স। রবিবার রাত থেকে মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। আলো ফুটতে না ফুটতে বন্ধ মোবাইলও। কাশ্মীরের বাইরে থাকা স্বজনেরা উদ্বেগে। কাশ্মীরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরই বা উদ্বেগ কম কী! কাশ্মীর থেকে জম্মু— যেখানে কার্ফু নেই, প্রশাসন সেখানে জারি করেছে ১৪৪ ধারা।
সোমবার বেলা ১১টার পরে বাকি দেশ জেনে গিয়েছে, রাজ্য থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর। আলাদা হচ্ছে লাদাখ। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ রদ হওয়ার পরে যে কোনও ভারতীয় জমি কিনে বাড়ি, কারখানা বা হোটেল করতে পারবেন ভূস্বর্গে। বিজেপির সদস্যরা রাজ্যসভায় গলা উঁচিয়ে বলছেন, কাশ্মীরকে এত দিনে সত্যি সত্যি ‘হিন্দুস্তান’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হল। কিন্তু কেমন আছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা— ২৪ ঘণ্টায় তার কোনও খবরই পাওয়া গেল না!
“কেন্দ্রের একতরফা সিদ্ধান্তে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ কার্যত বিলোপের ফলে ভারত এখন জম্মু ও কাশ্মীরে দখলদারি শক্তিতে পরিণত হল।” —মেহবুবা মুফতি
***
“ভারত সরকারের এই একতরফা সিদ্ধান্তে ১৯৪৭-এ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে চাওয়া জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হল।” —ওমর আবদুল্লা
বন্ধ দোকানপাট, বাজার, ব্যাঙ্ক, পেট্রল পাম্প। সোমবার থেকে স্কুল-কলেজও বন্ধ। রবিবার মধ্যরাতে নেট সংযোগ স্তব্ধ হওয়ার আগেই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মফতি এবং ওমর আবদুল্লা কোনওক্রমে জানাতে পেরেছেন, তাঁরা গৃহবন্দি হয়েছেন। সোমবার দুপুরে কোনও বিশেষ ব্যবস্থায় মেহবুবার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে বলা হয়, ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্ধকারতম দিন আজ। ১৯৪৭-এ যে দ্বিজাতিতত্ত্বে সায় দিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের নেতৃত্ব ভারতভুক্তিতে সায় দিয়েছিলেন, তা থেকে সরে গেল দিল্লি। কেন্দ্রের একতরফা সিদ্ধান্তে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিলোপের পরে ভারত এখন জম্মু ও কাশ্মীরের দখলদারি শক্তিতে পরিণত হল।’ বিকেলে মেহবুবাকে গ্রেফতার করা হল। ওমর আবদুল্লাকেও। কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া অনন্তনাগের সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামিকে রবিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। হুরিয়ত নেতাদের বাড়িতে বাড়িতেও কড়া নজরদারি।
ফাঁকা: সুনসান জম্মুর রাস্তায় টহল সেনার। সোমবার। ছবি: পিটিআই।
দিল্লির ৫, পৃথ্বীরাজ রোডে জম্মু ও কাশ্মীর হাউসের লনে বাড়তি পুলিশ। যদিও পুলিশ কর্তারা বলছেন— এটা এমনিই, কোনও নির্দেশ মেনে নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, শ্রীনগরে পরিবার কেমন আছে, সে দিকেই মন পড়ে রয়েছে। ফোন করেও পাননি। দিল্লির ডাক্তার ওমাইর ভাটও উদ্বিগ্ন শ্রীনগরে বাবা-মায়ের ফোন না পেয়ে। ফেসবুকে লিখেছেন, ঘুম ও খাওয়া মাথায় উঠেছে। মনে অশান্তি।
জম্মু কাশ্মীর পিপল্স মুভমেন্টের নেত্রী, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী শেহলা রশিদ রবিবার রাতে যে ভিডিয়ো বার্তাটি প্রচার করেন, তাতে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠার ছবিটি বেশ ধরা পড়েছে। শেহলা জানাচ্ছেন, নানা ধরনের খবরে বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করছেন। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি হয়েছে বাজারে। গাড়িতে বাড়তি পেট্রল-ডিজেল ভরে নেওয়ারও লম্বা লাইন। অনেককে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হচ্ছে স্বজনদের কাছে। কারও অস্ত্রোপচারের দিন পড়েছে সামনে। কেউ বা অন্তঃসত্ত্বা। কী ভাবে যাবেন, উদ্বেগে।
কিন্তু এ সবই রবিবার রাতের সংবাদ। সোমবার কাশ্মীর ছিল বিচ্ছিন্ন, বাকি বিশ্ব থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy