Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তেজনায় জল ঢেলে ইস্তফা জিতনের

আস্থা ভোট নিয়ে টান টান উত্তেজনায় জল ঢেলে দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জিতনরাম মাঁঝি। একই সঙ্গে আগামী আট-ন’মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতীশ কুমারের অভিষেকের ‘কাউন্ট ডাউন’ শুরু হয়ে গেল। তবে চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার আগে অরবিন্দ কেজরীবালের পথে হেঁটেই আজ নীতীশ বলেছেন, “ও ভাবে ইস্তফা দিয়ে চলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। আমায় ক্ষমা করবেন।”

স্বপন সরকার
পটনা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

আস্থা ভোট নিয়ে টান টান উত্তেজনায় জল ঢেলে দিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন জিতনরাম মাঁঝি। একই সঙ্গে আগামী আট-ন’মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতীশ কুমারের অভিষেকের ‘কাউন্ট ডাউন’ শুরু হয়ে গেল। তবে চতুর্থ বার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার আগে অরবিন্দ কেজরীবালের পথে হেঁটেই আজ নীতীশ বলেছেন, “ও ভাবে ইস্তফা দিয়ে চলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। আমায় ক্ষমা করবেন।”

রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে আজ বিকেলে দেখা করেন নীতীশ। রবিবার বিকেল ৫টায় শপথ নেবেন তিনি। রাজ্যপাল তিন সপ্তাহের মধ্যে আস্থা ভোট নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাজেট অধিবেশন ডাকার ব্যাপারেও উদ্যোগী হতে বলেছেন। নীতীশকে আজ ঢাকা থেকে ফোনে শুভেচ্ছা জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নীতীশের শপথে হাজির থাকবেন তিনি।

নাটকের শুরু সকাল সওয়া দশটা নাগাদ। হঠাৎ করেই জিতমরামের কনভয় বিধানসভার দিকে না গিয়ে রাজভবনের পথ ধরে। জিতনরাম রাজ্যপালের হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দেন। জানিয়ে দেন, তিনি আর আস্থা ভোট গ্রহণে আগ্রহী নন। রাজভবন থেকে তিনি ফিরে যান ১ নম্বর অ্যানে মার্গে, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিবাস’-এ।

বিধানসভা ভবনে তখন বিভিন্ন দলের বিধায়কদের ভিড়। জিতনরামের ইস্তফার খবর আসতেই পুলিশ থেকে শুরু করে বিধানসভার কর্মী, নেতা-বিধায়কেরা সংবাদমাধ্যমের কাছে খবরের সত্যতা জানতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর ৭ নম্বর সার্কুলার রোডে নীতীশের বাড়িতে জমতে থাকে ভিড়। নীতীশ তখন বাড়িতে জেডিইউ-সহ জোটের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে ব্যস্ত। বৈঠক সেরে তিনি বেরোতেই আবির, স্লোগান, ফুল-মালায় উৎসব শুরু করেন কর্মীরা।

২৪ ঘণ্টা আগে প্রকাশ্যে সমর্থনের বিনিময়ে মন্ত্রিত্বের টোপ দিয়েছিলেন জিতনরাম। তবে সেটা শেষ পর্যন্ত কাজে লাগল না। উল্টে নীতীশের কটাক্ষ, ‘‘অলৌকিক ঘটনা। কাল রাত পর্যন্ত ‘হাই ভোল্টেজ’ নাটকের পরে সকালে ঘোড়া হাঁফিয়ে গিয়ে ময়দানের বাইরে চলে গেল!”

কেন? পদত্যাগী মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “বিধায়কদের নিরাপত্তার কারণেই ইস্তফা দিলাম। যে ভাবে জানে মেরে ফেলার হুমকি আসছিল তাতে দেখলাম, বিধানসভায় আজ কোনও অঘটন ঘটে যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীকে যেখানে হুমকি দেওয়া হয় সেখানে বিধায়ক তো কোন ছার।” তাঁর মন্তব্য, “এই কারণেই গোপন ভোট চেয়েছিলাম। কিন্তু স্পিকার নীতীশ কুমারের ইশারায় কাজ করেছেন।” ইস্তফার পরেও জিতনরাম দাবি করেন, প্রয়োজনীয় সমর্থন তাঁর ছিল। তাঁর বক্তব্য, “আমার সঙ্গে জেডিইউয়ের ৪০ থেকে ৫০ জন বিধায়ক ছিলেন। তবে তাঁরা ভয়ে সামনে আসতে পারেননি। গোপন ব্যালটে ভোট হলেই আমার শক্তি প্রমাণ হয়ে যেত।” জিতনরাম অবশ্য বলেছেন, নীতীশ তাঁকে সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি তাঁকে শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু কিছু লোকের পরামর্শে তিনি ‘বিনা দোষে’ তাঁকে সরিয়েও দিলেন!

তবে ‘রবার স্ট্যাম্প’ হিসেবে তাঁকে ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছিল বলে জিতনরাম যে অভিযোগ করেছেন, তা নস্যাৎ করেছেন নীতীশ। সেই সঙ্গে বলেছেন, “বিজেপির সব চক্রান্তই ব্যর্থ করবেন বিহারবাসী।” নীতীশকে পাল্টা বিঁধে বিজেপি নেতা সুশীল মোদীর বক্তব্য, “আমরা এক জন মহাদলিত নেতার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি সমর্থন না নিয়ে আগেই ইস্তফা দিয়েছেন। কেন, সেটা তিনিই ব্যাখ্যা করবেন।”

চূড়ান্ত রাউন্ডে জয়ের পর নীতীশ আজ জানান, অনেকেই তাঁকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কাল রাতেও সাড়ে ৯টা নাগাদ মমতা তাঁকে ফোন করে আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার জন্য আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। নীতীশ বলেন, “মমতাজির সঙ্গে আমার মাঝে-মধ্যেই কথা হয়। তাঁকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” তবে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন নীতীশের জয়কে স্রেফ মোদী-বিরোধী শিবিরের জয় হিসেবে দেখতে রাজি নন। ডেরেকের বক্তব্য, “নীতীশের জয় আসলে আম-আদমির জয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jitan ram manjhi swapan sarkar nitish kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE