Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অর্থনীতির লোক কই! বিজেপি রোলব্যাকেই

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর কারণ হল মোদী সরকার তথা বিজেপির অন্দরমহলে প্রকৃত তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদের অভাব। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বসার পরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরবিন্দ পানাগড়িয়াকে নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ করে নিয়ে এসেছিলেন।

নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

নির্মলা সীতারামন। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১১
Share: Save:

বাজপেয়ী জমানায় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা-র নামই হয়ে গিয়েছিল ‘রোলব্যাক সিনহা’।

২০০২-এ কড়া আর্থিক সংস্কারের পথে হেঁটে বাজেটে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন। রান্নার গ্যাস, কেরোসিন, রেশনের চিনির দাম বাড়িয়েছিলেন। তার সঙ্গে ধনীদের আয়কর ছাড় বাড়িয়ে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার এবং সারে ভর্তুকি কমিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের পাশাপাশি দলের মধ্যেও চাপের মুখে সিংহভাগ কঠিন সিদ্ধান্ত পরে প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছিল যশবন্তকে। তাতেই তাঁর ‘রোলব্যাক সিনহা’ নাম হয়।

এ বার শিল্পমহলের চাপের মুখে বাজেটের অধিকাংশ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিজেপি সরকারের সেই ‘রোলব্যাক’-এর ধারাই অব্যাহত রাখলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বাজেটে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে লগ্নি থেকে আয়ে বাড়তি সারচার্জ বসিয়েও তা প্রত্যাহার করলেন। দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভেও বাড়তি করের বোঝা তুলে নিয়েছেন তিনি। আজ আয়কর দফতর এই সংক্রান্ত নির্দেশিকাও
জারি করেছে।

মোদী সরকারের প্রথম জমানাতেও অরুণ জেটলি বাজেটে কঠিন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে পরে প্রত্যাহার করেছেন। কখনও তিনি কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তোলার উপরে কর বসিয়ে প্রত্যাহার করেছেন। কখনও ব্যাঙ্ক সঙ্কটে পড়লে আমানতকারীদের সঞ্চয়ের টাকা কাজে লাগানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছেন। পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক বসিয়ে পরে তা কমিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর কারণ হল মোদী সরকার তথা বিজেপির অন্দরমহলে প্রকৃত তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদের অভাব। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বসার পরে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অরবিন্দ পানাগড়িয়াকে নীতি আয়োগের উপাধ্যক্ষ করে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি বেশি দিন থাকেননি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদ থেকে বিদায় নেন রঘুরাম রাজন। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম থাকতে চাননি। তাঁদের বদলে এখন সরকারের আর্থিক নীতির পিছনে প্রধান মস্তিষ্ক হিসেবে উঠে এসেছেন অশ্বিনী মহাজন, এস গুরুমূর্তির মতো স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতারা।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানের লগ্নি বা এফপিআই-তে সারচার্জ প্রত্যাহার করা নিয়ে মহাজন বলেন, ‘‘শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নিকারীরা ব্ল্যাকমেল করে এই সুরাহা আদায় করেছেন। কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সেই ভাবেই দেখা উচিত। দেশের অর্থনীতি বিদেশি লগ্নির উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়লে এমনটাই হবে।’’ ‘স্বদেশি’ অর্থনীতিবিদদের মতে, শেয়ার বাজারে এই সব লগ্নিকারীরা ফায়দা কামিয়ে টাকা তুলে নেন। সেই লগ্নিতে আয়ে কর বসানোটাই যুক্তিযুক্ত।

অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ায় পানাগড়িয়া সওয়াল করেছিলেন, আর্থিক ছাড় বা উৎসাহ ভাতা নয়। অর্থনীতির রোগ সারাতে সংস্কার হোক। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সাহসী সংস্কারের পথে হাঁটেননি। তার বদলে ১৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি সয়েও শেয়ার বাজারের আয়ে বাড়তি কর প্রত্যাহার করেছেন। যাতে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতির দর্শন দেখানোর লোক না থাকায় শুধু শেয়ার বাজারের মন জুগিয়ে চলার এই রকম ‘ব্যান্ড-এড’ লাগানোর সহজ পন্থাই নিতে হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Budget Roleback Model BJP Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE