Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর সামনেই বিদ্রোহ সঙ্ঘের শীর্ষ শ্রমিক নেতৃত্বের

বিজ্ঞান ভবনের মঞ্চে বসে নরেন্দ্র মোদী। পাশে অরুণ জেটলি ও অন্যান্য মন্ত্রী-আমলা। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই মোদী সরকারকে নিশানা করছেন বিএমএস-এর সভাপতি বৈজনাথ রাই। সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বলছেন, মোদী সরকার নিজের খুশি মতো কাজ করছে।

সোমবার জাতীয় শ্রম সম্মেলনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।

সোমবার জাতীয় শ্রম সম্মেলনের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০৩:১২
Share: Save:

বিজ্ঞান ভবনের মঞ্চে বসে নরেন্দ্র মোদী। পাশে অরুণ জেটলি ও অন্যান্য মন্ত্রী-আমলা। ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই মোদী সরকারকে নিশানা করছেন বিএমএস-এর সভাপতি বৈজনাথ রাই। সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বলছেন, মোদী সরকার নিজের খুশি মতো কাজ করছে। অনেক কিছু ঘোষণা করছে। বাস্তবে যার রূপায়ণ হচ্ছে না।

মোদী-জমানায় অভূতপূর্ব এই ঘটনাই ঘটল সোমবারের জাতীয় শ্রম সম্মেলনে। এই আক্রমণের মুখেও পিছু হটেননি মোদী। বলেছেন, শ্রম সংস্কার হবেই। তবে জমি বিলে হাত পোড়ানো মোদীর আশ্বাস, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সরকার শ্রম আইনে সংশোধন করবে।

সংঘাতের বাতাবরণেই প্রধানমন্ত্রী নিজেকে শ্রমিক দরদী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। বলেন, ‘‘আমার উপর শ্রমিকদের সব থেকে বড় অধিকার রয়েছে। আমি নিজেই ওই জায়গা থেকে এসেছি।’’ মোদীর মন্তব্য, ‘‘শ্রমিকদের দুর্দশা দেখতে যাওয়ার জন্য ক্যামেরা নেওয়ার দরকার নেই। আমার ভিতরে আগুন রয়েছে। আমি এদের জন্য কিছু করতে চাই।’’ শ্রমিক নেতাদের খোঁচা দিতেও ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, ‘‘শিল্প ও শিল্পপতিদের সুবিধা দেওয়া এক নয়। শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের কল্যাণের মধ্যেও সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে।’’

শ্রম সম্মেলনের মঞ্চে মোদীর এই সব বক্তব্যকে ‘নির্বাচনী ভাষণ’ হিসেবেই আখ্যা দিয়েছেন বাম-কংগ্রেসি শ্রমিক সংগঠন। তাঁদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের কোনও সমস্যা নিয়ে মুখ খোলেননি। দাবিদাওয়া প্রসঙ্গও এড়িয়ে গিয়েছেন।

মোদী সরকার শ্রম আইন সংস্কারের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেগুলি নিয়ে শ্রম সম্মেলনে আলোচনা হবে। বিএমএস-ও যে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে এর বিরোধিতা করবে, শুরুতেই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। বৈজনাথ বলেন, মোদী সরকারের ভুল নীতির ফলে আমজনতা সমস্যায় পড়ছেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা ভেবেই শ্রম আইনে বদল হচ্ছে। রাজস্থান সরকারের শ্রমিক বিরোধী আইনে কেন্দ্র সিলমোহর দিয়েছে। ফলে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ সরকারও এখন সেই ভুল রাস্তায় চলতে উৎসাহী হয়ে উঠেছে। তবে অনেকেই মনে করেন, অতীতে মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে যে ভাবে মুখ খুলতো ইনটাক, বিএমএস-ও এখন সেই পথেই চলেছে। শ্রমিকদের মধ্যে নিজেদের টিঁকিয়ে রাখতেই সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠনের মরিয়া চেষ্টা।

তবে মোদী এ দিন শ্রম সংস্কারের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তুলে ধরেছেন সরকারের একেকটি পদক্ষেপ। মোদী আজ চিনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, সাম্যবাদের নীতিতে চিনে ২ কোটি অ্যাপ্রেন্টিস রয়েছে। জাপানে ১ কোটি। আর ভারতে মাত্র ৩ লক্ষ। এটা বাড়িয়ে ১২ লক্ষ করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক ইউনিয়নগুলির পাল্টা যুক্তি, প্রথমে স্থায়ী কর্মী নিয়োগের বদলে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ ছিল। এখন বেসরকারি সংস্থাগুলিকে অ্যাপ্রেন্টিস দিয়েই কম বেতনে কাজ করিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সরকার।

মোদী ও জেটলি দু’জনেরই যুক্তি, বিনিয়োগ এলেই আর্থিক বৃদ্ধি হবে। তা হলেই কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। শ্রমিকদের বাড়তি বেতন, সুবিধার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু বৈজনাথ রাইয়ের দাবি, শ্রমিকদের ক্ষতি করে আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে না। বৈজনাথকে সমর্থন করেছেন গুরুদাস দাশগুপ্ত, এ কে পদ্মনাভন, অশোক ঘোষের মতো বামপন্থী শ্রমিক নেতারাও। মোদী বলেছেন, শ্রমিকদের সম্মান দিতে হবে। শিল্পপতিদেরও উচিত শ্রমিকদের উৎসাহ দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে ‘নাটুকেপনা’ বলে উড়িয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিক সম্মেলনে দু’টি ঘোষণা করেছেন মোদী— ন্যাশনাল কেরিয়ার সার্ভিস পোর্টাল ও এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জকে ঢেলে সাজা। ইএসআই হাসপাতালের মানোন্নয়নের জন্য ‘অপারেশন ইন্দ্রধনুষ’-এর ঘোষণা করেছেন মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE