সুনীতা যাদব। ছবি: সংগৃহীত।
কর্তব্যের কাছে কোনও ভিআইপি যে বড় নয় সেই সাহসিকতা দেখিয়ে সম্প্রতি সকলের নজর কেড়েছেন গুজরাতের সুরতের মহিলা কনস্টেবল সুনীতা যাদব। নেটাগরিকরা তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন। অনেকে তাঁকে ‘লেডি সিঙ্ঘম’ বলেও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত মাতামাতি, সেই সুনীতা কিন্তু নিজের কর্তব্যকেই আগে রাখছেন। কোন ‘লেডি সিঙ্ঘম’-এর তকমা নয়, কর্তব্যটাই যে তাঁর কাছে প্রধান সেটা স্পষ্টই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
করোনার জেরে সুরতে কার্ফু চলছিল। অভিযোগ, সেই কার্ফু উপেক্ষা করে গত ৮ জুন বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী কুমার কানানির ছেলে প্রকাশ কানানি বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। সে সময় ভারাচা রোড এলাকায় সহকর্মীদের নিয়ে টহল দিচ্ছিলেন সুনীতা। তখন তিনি প্রকাশ ও তাঁর বন্ধুদের আটকালে বচসা শুরু হয়। প্রকাশ-সহ তিন জনকে কিছু ক্ষণের জন্য আটক করে পুলিশ। তাঁর এই সাহসিকতার জয়জয়কার হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া-সহ গোটা দেশে।
তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতি করার কারণ নেই বলে এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন সুনীতা। ইন্ডিয়া টু়ডে টিভিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে সুনীতা বলেছেন, “আমি কোনও লেডি সিঙ্ঘম নই। আমি সাধারণ মানের এক পুলিশকর্মী। কর্তব্য পালন করেছি মাত্র।” এর পরই তিনি যোগ করেন, “আমাকে নিয়ে যে এত মাতামাতি করা হচ্ছে তার কারণ হল, আগে খুব কম পুলিশকর্মীই এমনটা করার সাহস দেখিয়েছেন। তবে লোকের মুখে প্রশংসা শুনে ভালই লাগছে।”
আরও পড়ুন: খেতের ফসল নষ্ট করে মার পুলিশের, কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা দলিত দম্পতির
তবে তাঁর এই কাজের জন্য ‘রোষের’ মুখে পড়তে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুনীতা। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, সে দিনের ঘটনার পর থেকে হুমকি আসছে তাঁর কাছে। খাকি উর্দির যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে, এমনটাই এত দিন ভাবতেন বলে জানিয়েছেন সুনীতা। কিন্তু এই ঘটনা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছে যে র্যাঙ্ক বা পদমর্যাদাই আসল। এ প্রসঙ্গে সুনীতা বলেন, “আগে ভাবতাম পুলিশের ইউনিফর্ম যথেষ্ট ক্ষমতাবান। কিন্তু এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, পদমর্যাদাটাই আসল কথা।” আর সেই পদমর্যাদা নিয়েই পুলিশে ফিরে আসার কথা ভাবছেন সনীতা। তিনি বলেন, “আইপিএস-এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। উঁচু পদ নিয়েই পুলিশের কাজে ফিরে আসতে চাই।” পাশাপাশি সুনীতা আরও জানান, আইপিএস হওয়ার লক্ষ্য দীর্ঘ দিন ধরেই। সেনা অফিসারও হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু কারণে তা হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি তাঁর। তবে যদি আইপিএস অফিসার না-ও হতে পারেন, তা হলে আইনজীবী কিংবা সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই এগোবেন বলে ওই সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন সুনীতা।
সুনীতাকে ইতিমধ্যেই অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তাঁর সুরক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সূত্রের খবর, সুনীতা কাজ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শীর্ষ আধিকারিককে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন। কিন্তু তা গ্রাহ্য হবে কি না সে বিষয় স্পষ্ট নয় বলেই ওই সূত্রের খবর। সুরতের পুলিশ কমিশনার আর বি ব্রহ্মভট্ট সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী এই মুহূর্তে সুনীতা ইস্তফা দিতে পারেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy