মোদীকে চিঠি সনিয়ার। —ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার বিজ্ঞাপন বাবদ খরচে রাশ টানতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্জি জানালেন কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী। তাঁর মতে, বিজ্ঞাপন বাবদ প্রতিবছর কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী কয়েক মাস তা বন্ধ রাখলে ওই টাকা করোনা খাতে খরচ যেতে পারে। নতুন সংসদভবন নির্মাণ-সহ সংসদভবনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পও আপাতত বন্ধ রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন সনিয়া।
করোনায় মোকাবিলায় কী কী করা যেতে পারে, তা নিয়ে রবিবারই বিরোধী নেতাদের ফোন করে পরামর্শ চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার জবাবেই এ দিন তাঁকে চিঠি লেখেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তিকালীন সভাপতি সনিয়া গাঁধী। তাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঁচটি পরামর্শ দেন তিনি। সনিয়া জানান, সমস্ত সাংসদের বেতনের ৩০ শতাংশ কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন তিনি। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
শুরুতেই আগামী দু’বছরের জন্য সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল এবং সমস্ত রকম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখার আর্জি জানান সনিয়া। তাঁর দাবি,রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার খরচ বাদ দিলেও এই মুহূর্তে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন বাবদ বছরে ১২৫০ কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় সরকার। তা বন্ধ রাখলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকোপে অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যে প্রভাব পড়েছে, ওই টাকায় তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। তবে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন নিয়ে কোনও আপত্তি করেননি সনিয়া।
Congress President and CPP Chairperson Smt. Sonia Gandhi writes to PM Modi suggesting various measures to fight the COVID-19 pandemic. pic.twitter.com/77MzCYiokl
— Congress (@INCIndia) April 7, 2020
আরও পড়ুন: করোনার ধাক্কা কর্মক্ষেত্রে, লকডাউনের জেরে বেকারত্বের হার বাড়ল ২৩ শতাংশ
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা সনিয়া গাঁধীর চিঠি।
নতুন সংসদভবন নির্মাণ এবং সংসদ চত্বরের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা-ও বন্ধ রাখার কথা বলেন কংগ্রেস নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিশ্চিত, এখন যে ঐতিহাসিক ভবনগুলি রয়েছে, সেখানেই সংসদের কাজ দিব্যি চলতে পারে। এমন কোনও তাড়া নেই যে এই সঙ্কট কেটে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। ওই টাকায় বরং নতুন হাসপাতাল পরিকাঠামো তৈরি, ডায়গনস্টিক সেন্টার নির্মাণ, সেই সঙ্গে যাঁরা সামনে থেকে করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন তাঁদের নিরাপত্তার সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’’
সাংসদদের বেতনের ৩০ শতাংশ কেটে নেওয়ায় সমর্থন জানালেও, বাজেটের মোট ব্যয় বরাদ্দও ৩০ শতাংশ কমানো হলে ভাল হত বলে জানান সনিয়া। এতে বছরে আড়াই লক্ষ কোটি টাকা বাঁচবে এবং সেই টাকায় পরিযায়ী শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক, কৃষক এবং মাঝারি, ছোট এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে।
একই ভাবে খরচ বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী, সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রী এবং আমলাদের বিদেশ যাত্রাও আপাতত স্থগিত রাখতে হবে বলে জানান সনিয়া। দেশের স্বার্থে এবং জরুরি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী অনুমতি নিয়ে তবেই বিদেশ যাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ফুটপাতেও করোনা হানা, কলকাতায় গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রাথমিক ইঙ্গিত?
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকা সত্ত্বেও করোনার মোকাবিলায় সম্প্রতি ‘পিএম কেয়ারস’ তহবিল গড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ‘পিএম কেয়ারস’ তহবিলে জমা পড়া প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন সনিয়া। তাঁর যুক্তি, এতে কোথায় কত টাকা খরচ হচ্ছে তার হিসাব থাকবে। গোটা প্রক্রিয়াটা আরও স্বচ্ছ হবে এবং বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়বে। খামোকা দু’টো আলাদা তহবিল গড়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সনিয়া বলেন, ব্যবহার না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় তহবিলে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। তার সঙ্গে ‘পিএম কেয়ারস’ তহবিলের টাকা যোগ হলে প্রান্তিক মানুষের খাদ্যসঙ্কট দূর করা যাবে।
কোভিড-১৯ ভাইরাসের সঙ্গে যুঝতে প্রত্যেক ভারতীয় অনেক ত্যাগ করেছেন, যখন যা নির্দেশ এসেছে পালন করেছেন, তাই সরকারেরও তাঁদের কথা ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করেন সনিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy