Advertisement
০৫ মে ২০২৪

চিন সীমান্তে ভারতের মহাসড়ক: সেনা বলছে সুবিধা হবে ড্রাগনের

চিন সীমান্ত বরাবর ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক তৈরি করছে ভারত সরকার। যে অরুণাচল প্রদেশকে চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে, সেই অরুণাচলেই চিন সীমান্তের গা ঘেঁষে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে এই রাস্তা, যা মায়ানমারের গায়ে গিয়ে শেষ হচ্ছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর আপত্তিতে থমকে গিয়েছে কাজ।

তাওয়াং থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাসড়ক।

তাওয়াং থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত প্রস্তাবিত মহাসড়ক।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ১৫:৩১
Share: Save:

চিন সীমান্ত বরাবর ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক তৈরি করছে ভারত সরকার। যে অরুণাচল প্রদেশকে চিন নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে, সেই অরুণাচলেই চিন সীমান্তের গা ঘেঁষে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে এই রাস্তা, যা মায়ানমারের গায়ে গিয়ে শেষ হচ্ছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর আপত্তিতে থমকে গিয়েছে কাজ। এই রাস্তা তৈরি হলে অরুণাচলে আরও সহজে ঢুকে আসতে পারবে ড্রাগন, বলছেন সেনাকর্তারা।

চিনের সেনাবাহিনী যে পন্থা নিয়েছে, ভারতীয় সেনা ঠিক তার উল্টো পথে হাঁটছে। তিব্বত এবং নেপালের মধ্যে দিয়ে বড় বড় রাস্তা বানিয়েছে চিন। ভারত সীমান্তের গায়ে এসেই শেষ হচ্ছে চিনের সেই সব রাস্তা। সীমান্তবর্তী এলাকাকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে রেলপথেও জোড়ার নীতি নিয়েছে বেজিং। কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে সীমান্তে দ্রুত সেনা পাঠানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে চায় চিন।

ভারতের সেনা ঠিক উল্টো পদ্ধতিতে বিশ্বাসী। সীমান্তে রাস্তাঘাট এবং পরিবহণ পরিকাঠামো খুব উন্নত করতে রাজি নয় সেনা। ভারতীয় সেনা মনে করে, চিনের সঙ্গে যদি কখনও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তা হলে এই মহাসড়ক ভারতের জন্য ব্যুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। ওই মহাসড়ক বেয়ে চিনা সেনা তরতর করে ঢুকে পড়বে ভারতের অনেক ভিতর পর্যন্ত। আর পরিকাঠামো খারাপ থাকলে চিনা সেনার গতি রোধ করার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে ভারত।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিন্তু এই তত্ত্বে বিশ্বাস রাখছে না। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের উন্নতি এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে পরিকাঠামোর ঢালাও উন্নয়নে জোর দেওয়ার নীতিতেই এখন বিশ্বাস রাখতে চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শুধু চিন নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদও সরকারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ। এলাকার উন্নয়নই সাধারণ মানুষকে জঙ্গিদের থেকে বিচ্ছিন্ন করবে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মহাসড়ক তৈরি হলে সেনাবাহিনীর পক্ষেও তা সুবিধাজনক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবনতি হলে গোটা অরুণাচলের সীমান্ত বরাবর বিপুল সেনা মোতায়েন করতেও সময় লাগবে না ভারতের, মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু সেনাবাহিনী ঠিক বিপরীত তত্ত্বেই বিশ্বাসী। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধে যে ভাবে চিনা সেনা তাওয়াং জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নিয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে চায় না ভারতীয় সেনা। সেই সময় রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ভাল হলে চিনা সেনা আরও বেশি দূর ঢুকে পড়ত বলে সেনাবাহিনী মনে করে। সেই যুদ্ধে ভারতের তরফ থেকে অরুণাচলে কোনও প্রতিরোধই তৈরি করা হয়নি চিনের বিরুদ্ধে। চিনা বাহিনী নাকি ভেবেছিল নিজেদের এলাকায় চিনা বাহিনীকে অনেকটা ঢুকতে দিয়ে সীমান্ত ঘিরে ফেলবে ভারত। সাপ্লাই লাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেবে লাল ফৌজকে। রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ পরিকাঠামো অনুন্নত হওয়ায় চিনা বাহিনীর পক্ষে খুব দ্রুত নিজেদের এলাকায় ফিরে যাওয়াও সম্ভব হবে না বলেও নাকি আশঙ্কা করেছিল বেজিং। তাই তাওয়াং থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বাহিনী। রাস্তাঘাট ভাল হলে চিনারা হয়তো আরও বেশি দূর ঢুকে পড়ত। মনে করে ভারতীয় সেনা।

ভারতীয় সেনার স্ট্র্যাটেজিস্টরা মনে করছেন, চিন এবং ভুটান সীমান্তের কাছে অবস্থিত তাওয়াং থেকে মায়ানমার সীমান্তের বিজয়নগর পর্যন্ত ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক তৈরি হলে আপাতদৃষ্টিতে তা ভারতীয় সেনার পক্ষে সুবিধাজনক। কিন্তু একই ভাবে চিনের সেনার পক্ষেও তা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনকে ভারতের শাসনে চলে আসার পরামর্শ, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। ১৯৬২ সালের সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির অনেক ফারাক, বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। চিনা ফৌজকে ঠেকানোর ক্ষমতা সে সময় ভারতের ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় সেনা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পাঁচ বাহিনীর অন্যতম এবং বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির একটি। মহাসড়ক বেয়ে ড্রাগন ফৌজ ঢুকে পড়বে আর ভারতীয় সেনা প্রতিরোধ করতে পারবে না, এই আশঙ্কাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একেবারেই প্রশ্রয় দিতে নারাজ।

শুধু মন্ত্রক নয়, সেনাবাহিনীর তত্ত্বের বিরোধিতায় সরব উত্তর-পূর্বের সাধারণ মানুষও। তাওয়াং থেকে দিরাং পর্যন্ত তৈরি হওয়ার পর মহাসড়কের কাজ থমকে যাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। যে সব এলাকার উপর দিয়ে এই মহাসড়ক যাওয়ার কথা, সেই এলাকার মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ। অরুণাচলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর কাছে দরবার করেছেন অরুণাচলের মানুষ। রিজিজু জানিয়েছেন, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। উত্তর-পূর্বের উন্নয়নকে কোনও যুক্তিতেই আটকে রাখা যাবে না বলেও কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE