Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে-বাইরে চিন্তা বাড়ল দিল্লির

লোকসভা ভোট চলাকালীন এই হামলা ভারতের ভোট রাজনীতিতেও নানা ভাবে ছায়া ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

শোকার্ত: প্রিয়জনকে হারিয়ে কান্না। ছবি এপি।

শোকার্ত: প্রিয়জনকে হারিয়ে কান্না। ছবি এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

ভিতরে এবং বাইরে— দু’দিক থেকেই ভারতে ত্রাস সৃষ্টি করেছে শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিক বিস্ফোরণ।

লোকসভা ভোট চলাকালীন এই হামলা ভারতের ভোট রাজনীতিতেও নানা ভাবে ছায়া ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কূটনীতিকদের মতে, জঙ্গি হামলা নিয়ে উদ্বেগ তো রয়েইছে। উপরন্তু ‘ঘরের কাছের’ দেশে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের আক্রান্ত হওয়ার জেরে ভারতে যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি না-হয়, তা মাথায় রাখতে হচ্ছে কেন্দ্রকে।

কূটনৈতিক রীতি মেনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে যা যা করা উচিত, সাউথ ব্লক তা করেছে নিয়ম মেনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের নির্বাচনী সফরের ব্যস্ততার মধ্যেও ফোন করে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন। সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর বলেছে, ‘‘এই ধরনের হামলা আমাদের অঞ্চল ও গোটা বিশ্বের মানবতার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরও এই কথা জানিয়েছেন।’’

বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমারও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা বরাবর করে এসেছে ভারত। আন্তর্জাতিক শিবিরের কাছে ধারাবাহিক ভাবে যৌথ প্রতিরোধের দাবি করেছে। সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের কোনও ক্ষমা নেই।’ যা দেখে ভোটের মরসুমে অনেকে বিরোধী নেতাও বুঝছেন, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মোড়কে ফের পাকিস্তান-বিরোধী জাতীয়তাবাদের জিগিরকেই ঝালিয়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার।

শ্রীলঙ্কার নাশকতার পিছনে কে বা কারা রয়েছে, এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই আক্রমণের নিন্দার পাশাপাশিই সাম্প্রদায়িক হ্যাশট্যাগ ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। লোকসভা ভোটের প্রচারে যখন ধর্মীয় বিভাজন অন্যতম সংলাপ হয়ে উঠেছে, সেই সময় ঘরের পাশেই এমন সাম্প্রদায়িক হিংসা তাতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। “গোটা বিষয়টিই বিপজ্জনক,” বলছেন প্রাক্তন কূটনীতিবিদ রণেন সেন। তাঁর কথায়, “আমরা এর আগে সিংহলি-তামিল লড়াইয়ের জন্য অনেক ভুগেছি। শ্রীলঙ্কায় আজ যা ঘটল, তা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের দেশেই বহু স্পর্শকাতর খ্রিস্টানবহুল এলাকা রয়েছে। কেরল, ওড়িশা, উত্তর-পূর্বের আদিবাসী এলাকায় বঞ্চনা, ক্ষোভ বারুদের স্তূপ হয়ে রয়েছে। এই ঘটনার ফলে আবার ধর্মীয় মেরুকরণের আগুন জ্বলবে না তো?”

ক’দিন আগেই শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ডামাডোল চিন্তায় ফেলেছিল ভারতকে। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহের সঙ্গে দিল্লির সুসম্পর্ক। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপালা সিরিসেনা তাঁকে গদিচ্যুত করে চিন-ঘনিষ্ঠ মহিন্দা রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী করায় রক্তচাপ বেড়েছিল সাউথ ব্লকের। বিক্রমসিংহে অবশ্য গদি ফিরে পান। কিন্তু জাতিগত সংঘর্ষের উদ্বেগ আলাদা। সে ক্ষেত্রে ওই উত্তেজনার আঁচ সীমান্ত পেরোলে কী হবে, সেই চিন্তায় ভুগতে হয় প্রতিবেশী দেশকে। এলটিটিই জমানার ক্ষত আজও দগদগে। এখনও সাম্প্রদায়িক আক্রমণের অভিযোগ ওঠে শ্রীলঙ্কায়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে বৌদ্ধ-মুসলিম সংঘর্ষ বেধেছিল দ্বীপরাষ্ট্রে। গত বছর থেকে শুরু করে এ দিনের হামলার আগে পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টানদের উপরে হামলার শতাধিক অভিযোগ উঠেছে।

এ দিনের ঘটনা কেন শ্রীলঙ্কাতেই ঘটানো হল, তা নিয়েও চলছে বিস্তর কাটাছেঁড়া। দিল্লিবাসী এক বিদেশি কূটনীতিকের আশঙ্কা, এটি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে বন্দুকবাজের হামলার বদলা নয়তো? ওই হামলা হয়েছিল জুম্মার নমাজের দিনে। আজ ছিল ইস্টার। কিন্তু খ্রিস্টান-বিরোধী আক্রমণের জন্য ইউরোপ-আমেরিকা বাদ দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বাছা হবে কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

অনেকের মতে, তামিল যুদ্ধের পর এই মুহূর্তে নিরাপত্তার দিক থেকে কিছুটা ঢিলেঢালা এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। নজরদারিটাও কিছুটা কমে এসেছিল। ন্যাশনাল তৌহিথ জামাথ নামে একটি মৌলবাদী মুসলিম সংগঠন শ্রীলঙ্কার ভারতীয় দূতাবাস ও বিভিন্ন গির্জায় ফিদায়েঁ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ক’দিন আগে সতর্কবার্তা জারি করেছিল পুলিশ। তবে এত ছোট একটি সংগঠন আদৌ এত বড় মাপের নাশকতা চালাতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার। গোয়েন্দাদের মতে, এই হামলার সঙ্গে আইএস-যোগের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়াও যাচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sri Lanka Blast Lok Sabha Election 2019 Chritianity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE