Advertisement
০১ মে ২০২৪

যুদ্ধবিমানের ককপিট আজ তিন ভারত-কন্যারও

তিন কন্যারই চোখে এখন আকাশের হাতছানি। সকাল হলেই তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। পায়ের তলায় চলে আসবে বোমারু বিমানের ককপিটে ওঠার সিঁড়ি!

স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রশিক্ষণ। হায়দরাবাদ এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে (বাঁ দিক থেকে) আভানি চতুর্বেদী, মোহনা সিংহ এবং ভাবনা কান্থ। ছবি বায়ুসেনার সৌজন্যে।

স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রশিক্ষণ। হায়দরাবাদ এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে (বাঁ দিক থেকে) আভানি চতুর্বেদী, মোহনা সিংহ এবং ভাবনা কান্থ। ছবি বায়ুসেনার সৌজন্যে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৯:১৪
Share: Save:

তিন কন্যারই চোখে এখন আকাশের হাতছানি। সকাল হলেই তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। পায়ের তলায় চলে আসবে বোমারু বিমানের ককপিটে ওঠার সিঁড়ি!

মোহনা সিংহ, আভানি চতুর্বেদী ও ভাবনা কান্থ। ভারতীয় বায়ুসেনায় যুদ্ধবিমানের প্রথম তিন মহিলা পাইলট। আগামিকাল তাঁরা হায়দরাবাদের এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমি থেকে পাইলট প্রশিক্ষণ শেষ করে বেরোবেন। গ্র্যাজুয়েশন প্যারেডে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের পাইলটের স্বীকৃতি

মিলবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের কাছ থেকে।

লক্ষ্মণরেখা পার হওয়ার রাস্তাটা অবশ্য সহজ ছিল না। গত ২৫ বছর ধরেই মহিলা পাইলট রয়েছেন বিমানবাহিনীতে। কিন্তু হেলিকপ্টার বা পণ্যবাহী বিমান ছাড়া আর কিছুই ওড়ানোর সুযোগ মিলত না। সুখোই বা মিরাজের মতো যুদ্ধবিমান তো দূরের কথা। নরেন্দ্র মোদী সরকারের জমানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্রীকর ও বাঙালি বায়ুসেনা-প্রধান অরূপ রাহা ছক ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক হয়, এ বার যুদ্ধবিমানের ককপিটও খুলে দেওয়া হোক মহিলাদের জন্য। শেষ ধাপে ছ’জন মহিলা ক্যাডেট দৌড়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ইতিহাস তৈরির সুযোগ আদায় করে নিলেন মোহনা, আভানি ও ভাবনা।

বিহারের দ্বারভাঙ্গার মেয়ে ভাবনা বলছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই মুক্ত পাখির মতো আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতাম। বায়ুসেনাতে যোগ দেওয়া সে কারণেই। যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে সুযোগ পাওয়াটা জীবনের সব থেকে বড় ঘটনা। তবে এ তো সবে শুরু। এখন চাই দেশের জন্য যুদ্ধ করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে।’’

বায়ুসেনার কর্তারা বলছেন, এমন নয় যে মহিলা বলে শারীরিক বা মানসিক সক্ষমতার মাপকাঠি শিথিল করা হয়েছে। তবু প্রতিটি মাপকাঠিতেই উতরে গিয়েছেন এই তিন কন্যা। প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে বিপদ এসেছে, মুহূর্তের সামান্য ভুলে মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তা-ও পেরিয়ে এসেছেন তাঁরা।

এই প্রসঙ্গে আভানি বললেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, ‘‘এক দিন দ্বিতীয় বারের জন্য আকাশে ওড়ার আগে মাটিতে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সে দিন চড়া রোদ ছিল। টেক অফ পয়েন্টে গিয়ে সবুজ সঙ্কেতও পেয়ে গিয়েছি। হঠাৎ শুনি বিপদঘন্টি। ককপিটের উপরে যে স্বচ্ছ ঢাকনা থাকে সেই ‘ক্যানপি’ খোলা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে বিমান থামাই। পরে ভাবছিলাম, বিমান থামাতে এক মুহূর্ত দেরি হলে বা ক্যানপি খোলা অবস্থায় আকাশে উড়লে ভয়ঙ্কর ফল হতো।’’

তিন কন্যার মধ্যে একমাত্র মোহনার বাবাই বায়ুসেনার অফিসার। ঠাকুর্দাও ছিলেন তা-ই। ইলেকট্রনিক্স-কমিউনিকেশনে বি-টেক করেও তাই বায়ুসেনায় যোগ দেন মোহনা। বললেন, ‘‘বায়ুসেনার পাইলট হওয়ার স্বপ্নটা আসলে বাবা-ঠাকুর্দাই মনের মধ্যে গেঁথে দিয়েছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্যটাই বজায় রাখতে চেয়েছি।’’

মোহনা, আভানি ও ভাবনাদের স্বপ্ন পূরণের দরজা খোলার ঘোষণাটি হয়েছিল গত ৮ মার্চ, বিশ্ব নারী দিবসে। বায়ুসেনা-প্রধান অরূপ রাহা সে দিন যুদ্ধবিমানে মহিলা পাইলট নিয়োগের কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘‘বায়ুসেনার অন্দরে এই তিন জনকে শুধুমাত্র যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবেই দেখা হবে। মহিলা পাইলট হিসেবে নয়।’’ এই তিন কন্যাও মনে করেন, সক্ষমতার মাপকাঠি যখন এক, তখন মহিলা হিসেবে তাঁদের আলাদা চোখে দেখা উচিত নয়। নিজেদের পুরুষদের সমকক্ষ হিসেবেই ভাবতে চান তাঁরা।

বায়ুসেনা সূত্রের খবর, তিন জনেই প্রথম ধাপে ‘পিসি সেভেন বেসিক ট্রেনার’ বিমান ৫৫ ঘণ্টা আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এর পর ‘কিরণ মার্ক-টু’ বিমানে দ্বিতীয় ধাপের প্রশিক্ষণও শেষ। হায়দরাবাদ এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ এখানেই শেষ। এ বার তাঁদের ‘অ্যাডভান্সড জেট ট্রেনার’-এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে। শব্দের থেকেও দ্রুতগামী যুদ্ধবিমান চালানোর সময়, বেশ কিছু পরিস্থিতিতে পাইলটদের শরীরে মাধ্যাকর্ষণের ন’গুণ পর্যন্ত চাপ পড়ে। ‘অ্যাডভান্সড জেট ট্রেনার’-এ ভাবনা-মোহনাদের শরীরে মাধ্যাকর্ষণের পাঁচ গুণ চাপ পড়বে।

যুদ্ধবিমান ওড়ানোর চূড়ান্ত পর্যায়ের সেই প্রশিক্ষণ নিতে তিন কন্যা হায়দারাবাদ থেকে এ বার কর্নাটকের বিদারে যাবেন।

আজ পর্যন্ত কোনও মহিলার পা পড়েনি সেখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

training Women Pilot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE