Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

পাক পরমাণু কেন্দ্রগুলি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ভারত!

পাকিস্তানের পরমাণু পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল ভারত। ১৯৮৪ সালেই পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে বোমা বর্ষণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে। এমনই বিস্ফোরক তথ্য সামনে এল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রকাশিত গোপন নথি থেকে।

ভারতীয় বায়ুসেনার এই মিগ-২৯ ফাইটারগুলিকে নিয়েই সে সময় সব চেয়ে চিন্তায় ছিল আমেরিকা। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতীয় বায়ুসেনার এই মিগ-২৯ ফাইটারগুলিকে নিয়েই সে সময় সব চেয়ে চিন্তায় ছিল আমেরিকা। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ১৫:৫২
Share: Save:

পাকিস্তানের পরমাণু পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল ভারত। ১৯৮৪ সালেই পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে বোমা বর্ষণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে। এমনই বিস্ফোরক তথ্য সামনে এল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রকাশিত গোপন নথি থেকে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর হত্যাকাণ্ডের পর সাউথ ব্লক থেকে এই গোপন তথ্য জোগাড় করেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা। ভারত যদি সে বছর হামলা চালাত, তা হলে পরবর্তী বহু বছরের জন্য পরমাণু গবেষণা সম্পূর্ণ থেমে যেত পাকিস্তানে, এমনও মনে করছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

১৯৭১ সাল। সেনাকর্তাদের সঙ্গে পাকিস্তান সীমান্তে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

দু’দশকেরও বেশি আগের কথা। পাক অধিকৃত কাশ্মীর লাগোয়া কাহুতা এবং ইসলমাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত পিনসটেক নিউ ল্যাবরেটরিজ ছিল সে সময় পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ দুই পরমাণু কেন্দ্র। মূলত এই দুই পরমাণু কেন্দ্রকে কাজে লাগিয়েই নিজেদের পরমাণু অস্ত্রাগার বাড়িয়ে তুলছিল পাকিস্তান। ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী সিদ্ধান্ত নেন, গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিই। সেই অনুযায়ী তোড়জোড়ও শুরু হয়ে যায়। ভারতীয় বায়ুসেনাকে কাজে লাগিয়েই কাহুতা এবং পিনসটেক ল্যাবে হামলা চালানোর পরিকল্পনা তৈরি করেছিল নয়াদিল্লি। পাকিস্তান তো দূরের কথা, মার্কিন গোয়েন্দারাও ইন্দিরার সেই পরিকল্পনার কথা জানতে পারেননি। কিন্তু ১৯৮৪-র ৩১ অক্টোবর ইন্দিরা গাঁধীকে হত্যা করা হয়। তার জেরে যে উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ভারতে, মার্কিন গোয়েন্দারা সেই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং সাউথ ব্লক থেকে অনেক গোপন নথি হাতিয়ে নেন। সেই সব নথি থেকেই সিআইএ জানতে পারে, পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা করেছিল ভারত।

বোমা বর্ষণে জাগুয়ার। ছবি: সংগৃহীত।

বছরের পর বছর ধরে জমতে থাকা বেশ কিছু গোপন নথি সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রকাশ্যে এনেছে। ১৯৮৪ সালের নভেম্বরের কিছু নথি থেকে ভারতের এই পরিকল্পনার কথা সামনে এসেছে। এর থেকেই স্পষ্ট যে ইন্দিরার মৃত্যুর পর পরই এই সব গোপন তথ্য মার্কিন গোয়েন্দাদের হাতে পৌঁছেছিল। এই সব তথ্য হাতে পাওয়ার পর মার্কিন প্রশাসন পরিস্থিতির বিশদ কাটাছেঁড়া শুরু করে। মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, ভারত আকাশপথে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২৯ বা মিগ-২৩ এবং জাগুয়ার যুদ্ধবিমান হামলা চালাবে বলে নাকি স্থির হয়েছিল। সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলি থেকে ইসলামাবাদ পৌঁছতে যে কোনও ফাইটার জেটের মাত্র আধ ঘণ্টা সময় লাগে। কাহুতা পৌঁছনো যায় আরও কম সময়ে। তাই ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে থাকা মিগ-২৩ আর জাগুয়ারের স্কোয়াড্রনগুলির পক্ষে পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই পরমাণু কেন্দ্রে বিধ্বংসী বোমা বর্ষণ করা যে একেবারেই কঠিন বিষয় নয়, তা আমেরিকা বুঝতে পারছিল। পাকিস্তানকে সম্ভবত সে বিষয়ে সতর্কও করেছিল আমেরিকা। কিন্তু পাক বিমানবাহিনীর হাতে সে সময়ে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কোনও ভাবেই ভারতের মিগ-২৯ ফাইটারের মোকাবিলায় সক্ষম ছিল না। সিআইএ-র নথিতেই এ কথা লেখা হয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনা পাক এয়ার ফোর্সের চেয়ে আকারে এবং দক্ষতায় অনেক এগিয়ে বলেও মার্কিন নথিতে স্বীকার করা হয়েছে।

১৯৮৩ সাল। পশ্চিম হিমালয়ের আকাশে মহড়ায় ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২৩ সুপারসনিক ফাইটার। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

প্রকাশ্যে আসা গোয়েন্দা নথি থেকে জানা গিয়েছে যে আমেরিকা সে সময় পাক এয়ার ফোর্সের ‘কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সিস্টেমের দুর্বলতা নিয়েও খুব চিন্তিত ছিল। ভারতীয় বায়ুসেনা যদি কাহুতা এবং পিনসটেক পরমাণু কেন্দ্রে হামলা চালায়, তা হলে সেই হামলা পাকিস্তান কোনও ভাবেই রুখতে পারবে না বলে মার্কিন প্রশাসন মনে করছিল সে সময়। সিআইএ-র ‘ইন্টেলিজেন্স অ্যাসেসমেন্ট’-এ সে সময় লেখা হয়েছিল, কাহুতা এবং পিনসটেকে ভারত হামলা চালালে পাকিস্তানের এত ক্ষতি হবে যে আগামী বহু বছরের জন্য পাকিস্তানের পরমাণু গবেষণা থমকে যাবে।

আরও পড়ুন: মস্কো-উদ্বেগে জিয়াকে জোট বার্তা দেন ইন্দিরা

ভারতীয় বায়ুসেনা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানে হামলা আর চালায়নি। কেন হামলা চালায়নি, তার কোনও উল্লেখ সিআইএ নথিতে রয়েছে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ইন্দিরা গাঁধীর অকস্মাৎ মৃত্যুর জেরেই ভারত আর সে পথে এগোয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE