Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চব্বিশ বছর পরে মুম্বই হানার রায়, টাডা আদালতে দোষী সালেম-সহ ৬

আবু সালেম ছাড়া বাকিদের নাম হল, মুস্তাফা দোসা, ফিরোজ আব্দুল রশিদ খান, তাহের মার্চেন্ট, রিয়াজ সিদ্দিকি এবং করিমুল্লা খান। প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়েছে আব্দুল কায়ুম শেখ।

ভয়ঙ্কর: সে দিনের বিস্ফোরণের টুকরো ছবি।—ফাইল চিত্র

ভয়ঙ্কর: সে দিনের বিস্ফোরণের টুকরো ছবি।—ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০৩:৩৯
Share: Save:

চব্বিশ বছর আগের এক মার্চের দুপুর। দেড়টা থেকে তিনটে চল্লিশ মিনিটের মধ্যে পর পর তেরোটা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল দেশের বাণিজ্য নগরী। তখনকার বম্বে। ২৫৭ জনের প্রাণ কেড়েছিল সেই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ। গুরুতর আহত হয়েছিলেন সাতশোরও বেশি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সাতাশ কোটির সম্পত্তি। ১২ মার্চের সেই বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে আজ আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন আবু সালেম-সহ ছ’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মুম্বইয়ের বিশেষ টাডা ( টেররিস্ট অ্যান্ড ডিসরাপটিভ অ্যাক্টিভিটিস প্রিভেনশন অ্যাক্ট) আদালত। সাজা ঘোষণা আগামী সোমবার, ১৯ জুন।

আবু সালেম ছাড়া বাকিদের নাম হল, মুস্তাফা দোসা, ফিরোজ আব্দুল রশিদ খান, তাহের মার্চেন্ট, রিয়াজ সিদ্দিকি এবং করিমুল্লা খান। প্রমাণের অভাবে মুক্তি পেয়েছে আব্দুল কায়ুম শেখ। সিবিআই জানিয়েছে, দোষীদের মধ্যে সালেম-সহ তিন জন জেরার সময়ই নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। একমাত্র রিয়াজ সিদ্দিকি ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে হত্যা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও দেশদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে। রিয়াজকে শুধু আবু সালেমকে অস্ত্র পাচারে সাহায্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষ আদালতের বিচারক জি এ সানাপ। এই মামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী দাউদ ইব্রাহিম, তাঁর ভাই আনিস ইব্রাহিম, মুস্তাফা দোসার ভাই মহম্মদ দোসা এবং টাইগার মেমন এখনও পলাতক।

আজকের এই রায় অবশ্য মুম্বই বিস্ফোরণের বিচার পর্বের দ্বিতীয় অধ্যায়। প্রথম পর্ব শেষ হয়েছিল ২০০৭ সালে। ১২৩ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১০০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বিশেষ টাডা আদালত। যাদের মধ্যে টাইগারের ভাই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি হয়ে গিয়েছে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। একমাত্র মেমনের ফাঁসি আটকানোর আর্জি শোনার জন্যই প্রথা ভেঙে ভোর রাত তিনটেয় খুলেছিল শীর্ষ আদালতের দরজা।

২০০৭ সাল থেকে এই মামলায় বাকি যে সাত জনের বিচার শুরু হয়েছিল তাদের প্রত্যেককেই ২০০৩ থেকে ২০১০-এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রথম দফার বিচার পর্ব ২০০৭-এ শেষ হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফার বিচার প্রক্রিয়া ওই সালেই শুরু হয়। কিন্তু আবু সালেম, দোসা এবং সিবিআইয়ের আলাদা তিনটি আর্জি সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে থাকার জন্য ২০১২ সাল পর্যন্ত গোটা বিচার প্রক্রিয়াটাই আটকে ছিল। ২০১২ সালের পর থেকে ফের শুরু হয় শুনানি।

আরও পড়ুন:কাশ্মীরে ফের দেহ বিকৃতি, লস্কর হানায় হত ৬ পুলিশ

সিবিআই আদালতকে প্রথমেই জানিয়েছিল, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিশোধ নিতেই মুম্বই বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিলেন দাউদ ও তার সঙ্গীরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আদালতকে আরও জানায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বের কোনও দেশে এত পরিমাণ আরডিএক্স ব্যবহার হয়নি, যতটা হয়েছিল এই ধারাবাহিক বিস্ফোরণে। আর সেই বিস্ফোরক ভারতে আনার দায়িত্বে ছিল দোসা। দুবাই হয়ে পাকিস্তানে তার কিছু সঙ্গীকে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেছিল সে। ১২ তারিখের বিস্ফোরণের আগে মোট ১৫ বার বৈঠক করা হয়েছিল বলেও আদালতকে জানিয়েছে সিবিআই। ২০০৫ সালে পর্তুগাল থেকে প্রত্যপর্ণ করা হয়েছিল আবু সালেমকে। ভারতে আনার পরে প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ ফেলতে বাধ্য হয় সিবিআই। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে প্রত্যর্পণ করা হয় দোসাকে।

যে পথে বিচার

• ১২ মার্চ, ১৯৯৩: মুম্বইয়ের ১৩টি জায়গায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ। নিহত ২৫৭, আহত প্রায় আটশো। প্রধান ৩ অভিযুক্ত দাউদ ইব্রাহিম, টাইগার মেমন, ইয়াকুব মেমন।

• ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৩: বেআইনি অস্ত্র রাখার দায়ে ধৃত সঞ্জয় দত্ত। জামিনের পরে আবার গ্রেফতার।

• নভেম্বর, ১৯৯৩: সঞ্জয়-সহ ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট। পরে সিবিআইকে মামলা হস্তান্তর।

• এপ্রিল, ১৯৯৪: ২৬ জন অভিযুক্তের মুক্তি টাডা আদালতে। বাকিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন। পরে ছাড় আবু আজমি ও আজমেদ মেহের বক্সকে।

• ১৬ অক্টোবর, ১৯৯৫: সুপ্রিম কোর্টে জামিন সঞ্জয়ের।

• ১৩ জুন, ২০০৬: পর্তুগাল থেকে প্রত্যর্পণের পরে সালেমের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা শুরুর সিদ্ধান্ত।

• ১২ সেপ্টেম্বর, ২০০৬: দোষী সাব্যস্ত টাইগার, ইয়াকুব ও তাদের পরিবারের আরও দু’জন। ইয়াকুব-সহ ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২০ জনের যাবজ্জীবন।

• মার্চ, ২০১৩: ইয়াকুবের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত। যাবজ্জীবন স্থগিত দু’জনের। ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড লাঘব করে যাবজ্জীবন। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড সঞ্জয়ের।

• ১৬ মে, ২০১৩: সঞ্জয়কে আত্মসমর্পণের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। ২০১৬-য় ইয়েরওয়াড়া জেল থেকে মুক্তি।

• ১১ এপ্রিল, ২০১৪: ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ রাষ্ট্রপতির।

• ৩০ জুলাই, ২০১৫: ইয়াকুবের ফাঁসি।

• ১৬ জুন, ২০১৭: টা়ডা কোর্টে দোষী সাব্যস্ত আবু সালেম-সহ ছ’জন। ছাড় এক অভিযুক্তকে। ফেরার দাউদ ও টাইগার।

১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে বিস্ফোরণের জন্য আনা একে-৫৬ রাইফেল, কিছু গ্রেনেড অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে দিয়েছিল সালেম। পরে সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে দু’টি রাইফেল সরিয়ে নেয় তারা। কিন্তু বিস্ফোরণের পরে তল্লাশি চালিয়ে সঞ্জয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কিছু অস্ত্র। বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়ায় বলিউডের এই অভিনেতার নামও।

দোষীদের কী শাস্তি হতে পারে? সিবিআই কৌঁসুলিরা জানাচ্ছেন, সকলের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্যই আবেদন জানাবেন তাঁরা। যা প্রাণদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। যদিও প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আবু সালেমের ফাঁসি হওয়া সম্ভব নয় বলেই জানালেন সিবিআইয়ের বিশেষ আইনজীবী দীপক সালভি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE