Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আগামী বছর লগ্নি সম্মেলন কাশ্মীরে

সূত্রের খবর, কেন্দ্র মনে করছে, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যে লগ্নিকারীদের ডাকা হলে বর্হিবিশ্বে ভুল বার্তা যেতে পারে। আবার, নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে সম্মেলনের আয়োজন করা হলে উপত্যকায় আগুন জ্বলার আশঙ্কা।

কাশ্মীর। ফাইল চিত্র।

কাশ্মীর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫০
Share: Save:

জম্মু-কাশ্মীরে পিছিয়ে গেল বিনিয়োগকারী সম্মেলন। আগামী এপ্রিলের আগে ওই সম্মেলনের আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে কেন্দ্রকে জানিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। সরকারি ভাবে সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন বলে দাবি করা হলেও বিরোধীদের বক্তব্য, আর্থিক মন্দা ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণেই সম্মেলন পিছনোর সিদ্ধান্ত।

সূত্রের খবর, কেন্দ্র মনে করছে, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ির মধ্যে লগ্নিকারীদের ডাকা হলে বর্হিবিশ্বে ভুল বার্তা যেতে পারে। আবার, নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে সম্মেলনের আয়োজন করা হলে উপত্যকায় আগুন জ্বলার আশঙ্কা।

গত ৪৬ দিন ধরে উপত্যকায় বিধিনিষেধ জারি। সরকারের দাবি, প্রতিদিন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। খোলা স্কুল-কলেজ, দোকানপাট। স্বাভাবিক যান চলাচলও। প্রশ্ন, সব কিছুই যদি স্বাভাবিক, তা হলে কাশ্মীরের অর্থনৈতিক ছবি পাল্টাতে ১২-১৪
অক্টোবর যে বিনিয়োগ সম্মেলনের ঘোষণা মোদী সরকার করেছিল, তা কেন পিছিয়ে দেওয়া হল?

রাজ্য প্রশাসনের যুক্তি, সম্মেলনের আয়োজন করতে রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য দফতরের আরও সময়ের প্রয়োজন। তাই তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সম্মেলন নিয়ে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন রাজ্য প্রশাসনিক পরিষদের আধিকারিকেরা। সিদ্ধান্ত হয়, লগ্নি সম্মেলন আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পিছোনো হবে।

গত দেড় মাস ধরে উপত্যকায় বিধিনিষেধ বলবৎ থাকায় সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসা থমকে থাকায় বাড়ছে ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণ। কমেছে রফতানিও। রাজ্যের অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভর বাসমতি চাল, কেশর, হস্তশিল্প-হ্যান্ডলুম পণ্য ও ফল ব্যবসার উপরে। লাগাতার নিষেধাজ্ঞায় রফতানি ধাক্কা খাওয়ার পাশাপাশি, গোলমালের ভয়ে রাজ্য ছেড়েছেন প্রায় ৮০ শতাংশ ভিন্‌ রাজ্যের শ্রমিক। মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজ্যের নির্মাণ শিল্প ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ।

অর্থনীতির বেহাল দশা কাটাতে একের পর এক পদক্ষেপ করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাতেও নতুন লগ্নিতে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিনিয়োগকারীরা। মন্দার কালো মেঘের মধ্যে অশান্ত কাশ্মীরে যে কেউ বিনিয়োগ করবেন না, তা বুঝতে পারছে সরকারও। বণিক সভাগুলির মতে, লগ্নির মূল শর্তই হল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কিন্তু কাশ্মীরের যা পরিস্থিতি, তাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অন্তত আগামী চার থেকে ছ’মাস বাড়তি সেনা রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী। তাই বিনিয়োগ সম্মেলন না করে তা ছ’মাস পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসনও।

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতাদের ধারণা, কাশ্মীর স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগ আসা মুশকিল। কিছু হোটেল, পর্যটন সংস্থা শুরু থেকেই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। সরকার ঘনিষ্ঠ শিল্প সংস্থাগুলি বাধ্য হয়ে বিনিয়োগে রাজি হবেন। বড় শিল্প নির্মাণের সম্ভাবনা কম। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের যুক্তি, কাশ্মীরেই প্রথম ভূমিসংস্কার করেছিলেন ফারুক আবদুল্লা। ফলে রাজ্যে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির পরিমাণ কম। তাই বড় শিল্পের জন্য এক লপ্তে জমি পাওয়া মুশকিল। উপরন্তু, সাধারণ মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপে থাকলে জমি অধিগ্রহণ আরও সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে। ফলে ওই বিনিয়োগ সম্মেলন কতটা সফল হবে তা নিয়ে রীতিমতো সন্দিহান বিরোধীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

global investors’ summit jammu and kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE