—ফাইল চিত্র।
ঠিক ১৫ বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে দিল্লির পুরনো আমলাদের। ২০০৪-এর লোকসভা ভোট। দেশ জুড়ে ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর প্রচার তুঙ্গে। বিজেপি নেতৃত্ব প্রায় নিশ্চিত, অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ-সরকার ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় আসছে।
সেই সময়েই ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সমস্ত সরকারি মন্ত্রকে নির্দেশ গিয়েছিল, নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কাজের রূপরেখা ছকে ফেলতে হবে। যাতে ক্ষমতায় ফিরে নতুন সরকার কাজ শুরু করে দিতে পারে। ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর প্রচারের বেলুন চুপসে গিয়েছিল ভোটের বাক্সে। বাজপেয়ী সরকার ক্ষমতায় ফেরেনি। প্রবীণ আমলারা বলছেন, তার পরের দুই লোকসভা ভোটে ফল প্রকাশের আগে নতুন সরকারের কর্মসূচি তৈরি করে ফেলার নির্দেশ আর আসেনি।
মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে ইউপিএ-সরকার ২০০৯-এ লোকসভা ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় ফেরে। কিন্তু ভোটের আগে মনমোহন সিংহ আগেভাগেই নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেননি। প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি তৈরি হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা ভোটের ফল প্রকাশের পর। ২০১৪-র ভোটের আগেও সেই ধারাই বজায় ছিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
১৫ বছর পরে নরেন্দ্র মোদী ফের তাঁর দফতর, নীতি আয়োগের মাধ্যমে সমস্ত মন্ত্রকে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কাজের নীল নকশা তৈরি করে রাখতে। নির্দেশ পেয়ে শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক শিল্পনীতি তৈরি করতে বসেছে। যে সব ক্ষেত্রে অর্থনীতির ঘোড়া দ্রুত গতিতে ছুটবে, যে সব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বেশি করে তৈরি হবে, সেগুলিতে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
কংগ্রেসের নেতারা মুচকি হাসছেন। তাঁদের যুক্তি, ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর প্রচার যে ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছিল, ঠিক একই ভাবে এ বারও বিজেপির ‘ফির এক বার, মোদী সরকার’-এর দাবিও কেউ কানে তুলবে না। মোদীর হার অনিবার্য।
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, বাজপেয়ী জমানায় ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’-এর প্রচারে শুধু শহরের আর্থিক উন্নতির দিকেই প্রচারের আলো ফেলা হয়েছিল। গ্রামের দুরবস্থা ধামাচাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। মানুষ তা মেনে নেননি। আর মোদী জমানায় গ্রামের চাষিদের ঋণের বোঝার সঙ্গে নোট বাতিল-জিএসটির ধাক্কায় শহরের মানুষও কুপোকাত। অর্থনীতিতে মন্দা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মন্তব্য, ‘‘মোদী প্রতিদিন বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করছেন। অর্থমন্ত্রী ব্লগ লিখে সেই ভাষার পক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছেন। মাঝখান থেকে সরকার অর্থনীতির কথা ভুলে গিয়েছে। পরবর্তী সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। সুখের কথা হল, মোদী-জেটলির তৈরি মন্দা থেকে অর্থনীতিকে বের করতে আনতে তৈরি কংগ্রেস।’’
মোদী অবশ্য আত্মবিশ্বাসী। বুধবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমার এই আত্মবিশ্বাস সওয়া’শো কোটি দেশবাসীর আত্মবিশ্বাস থেকে আসে। পুরো বিশ্বাস, বিজেপি আগের থেকে অনেক বেশি আসনে জিতে আসবে। এনডিএ-শরিকরাও বেশি আসনে জিতে আসবে। যে সব রাজ্যে আমাদের উপস্থিতি কম ছিল, সেখানে আমাদের উপস্থিতি বাড়বে।’’ নতুন সরকারের কর্মসূচি তৈরির নির্দেশ দেওয়ার প্রশ্নে মোদীর বক্তব্য, ‘‘ইস্তাহারেও এর প্রতিফলন রয়েছে। ২০১৪-য় আমি নতুন ছিলাম। গদিতে আসার পরে প্রথম দিকে আমার পক্ষে মুশকিল ছিল। এখন চাই না, ভোটের ফলে সরকারি দফতরের কাজে প্রভাব পড়ুক। বরং আরও বেশি গতিতে কাজ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy