Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিলান্যাস মিটতেই ভোটের দিন ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

এত দিন অহল্যার প্রতীক্ষার মতো উদ্‌গ্রীব হয়ে দিন গুনছিল দেশের মানুষ। একটাই প্রশ্ন সর্বত্র, কবে হতে পারে ভোটের ঘোষণা। মার্চ মাস পড়তেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার জোগাড়।

লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। রবিবার দিল্লিতে।

লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। রবিবার দিল্লিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৭
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর শিলান্যাস-উদ্বোধন পর্বও শেষ হচ্ছিল না, ভোটের দিনও ঘোষণা হচ্ছিল না। অবশেষে আজ রবিবার, লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিল নির্বাচন কমিশন।

এত দিন অহল্যার প্রতীক্ষার মতো উদ্‌গ্রীব হয়ে দিন গুনছিল দেশের মানুষ। একটাই প্রশ্ন সর্বত্র, কবে হতে পারে ভোটের ঘোষণা। মার্চ মাস পড়তেই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার জোগাড়। এক দিকে লাগাতার যুদ্ধ-জিগির, অন্য দিকে খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনে ফি দিন কেন্দ্র ও রাজ্যের উচ্চগ্রামে পারস্পরিক সাফল্যের তরজা জল্পনার পারদ বাড়াচ্ছিল। সুযোগ নিতে তৎপর ছিল সাট্টা বাজারও। নিত্যদিন নতুন চ্যালেঞ্জ— বলুন, আজ কি ঘোষণা হবে, না হবে না!

গত সাত-দশ দিন ধরে একের পর নতুন প্রকল্প, ঘোষিত প্রকল্প, কখনও বা পুরনো প্রকল্পই নতুন করে ক্লান্তিহীন ভাবে শিলান্যাস করে যাচ্ছিলেন মোদী। ছুটে বেড়াচ্ছিলেন এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সরকারের মুখপাত্র জানিয়ে দিচ্ছিলেন, পরের দিনের কর্মসূচির ফিরিস্তি। এই পরিস্থিতিতে এ দিন সকালে কমিশন ভোট ঘোষণার কথা জানাতেই ক্রিকেট ম্যাচের উত্তেজনা ছেড়ে টিভির সামনে বসে পড়ে আমজনতা।

আরও পড়ুন: সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ, প্রথম পাতা ফাঁকা রেখেই কাগজ ছাপল কাশ্মীরে

নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র এ দিন জানায়, ঠিক ছিল সোমবার ভোট ঘোষণা হবে। কিন্তু হঠাৎই আজ সকালে শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ আসে যে, আজকের মধ্যেই ভোট ঘোষণা করতে হবে। ফলে যে ভাবে আজ দিন ঘোষণা হল, তাতে বিশৃঙ্খলার ছাপ ছিল সর্বত্র। প্রস্তুতিতেও ছিল ঘাটতি। ইভিএম-ভিভিপ্যাট ব্যবহারের সূত্র স্পষ্ট করতে বলতে পারেননি কমিশন কর্তারা। ভোট ঘোষণার তিন ঘণ্টা পরেও দেশের কোথায় কবে ভোট, তা জানাতে পারেনি কমিশন।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়েছিল ৫ মার্চ। এ বার প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ৪ মার্চই নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে। কিন্তু শিলান্যাসের চোটেই সেটা পিছিয়ে যায় বলে অভিযোগ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা অশোক গহলৌতের। দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের হস্তক্ষেপেই দেরিতে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কমিশন।’’ পাল্টা যুক্তিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরার দাবি, ‘‘গতবার লোকসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩১ মে। এ বার চলতি লোকসভার মেয়াদ শেষ হবে ৩ জুন। ফলে হাতে অতিরিক্ত চার দিন ছিল। কোনও রহস্য নেই।’’

• প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। ১৮-১৯ বছরের ভোটার দেড় কোটি।

• ১০ লক্ষ ভোটকেন্দ্র।

• সমস্ত ভোটকেন্দ্রে ভিভিপ্যাট। ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রে প্রতীকের পাশে প্রার্থীর ছবি। ইভিএমের সুরক্ষায় জিপিএস। ইভিএম নিয়ে অভিযোগের দায়িত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।

• ভোটার স্লিপে থাকবে ব্রেল।

• সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য দিতে হবে প্রার্থীদের। সামাজিক মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের আগাম অনুমোদন লাগবে। তার খরচ দেখাতে হবে। এই বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত অভিযোগের দায়িত্বে আলাদা অফিসার।

• নিজের নাম মিলিয়ে নেওয়া এবং ভোট সংক্রান্ত তথ্য জানতে ভোটদাতাদের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ‘১৯৫০’। টাকাপয়সার লেনদেন ও অন্যান্য অভিযোগও জানানো যাবে এই নম্বরে। অভিযোগ জানানো যাবে কমিশনের ‘সি-ভিজিল’ অ্যাপেও। প্রয়োজনে নিরাপত্তার স্বার্থে অভিযোগকারীর নাম গোপন রাখা হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাবে কমিশন। ভুয়ো খবর ও আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার আটকাতে বিশেষ ব্যবস্থা সামাজিক মাধ্যমে।

• রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত লাউডস্পিকার নয়।

• প্রচারের উপকরণ হতে হবে পরিবেশবান্ধব।

• গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ভিডিয়ো তুলে রাখা হবে।

• ভোটারদের মোবাইল জমা রাখার কাউন্টার খোলার কথা ভেবে দেখা হচ্ছে।

• জম্মু-কাশ্মীরে এখন বিধানসভা ভোট নয়। কবে ভোট হবে, তা দেখবে তিন সদস্যের পর্যবেক্ষক টিম।

কবে বিরোধীদের তরফে আরও প্রশ্ন আছে। সাত দফা ভোটের প্রথম দফায় ৯১টি কেন্দ্রে নির্বাচন। মোট আসনের প্রায় কুড়ি শতাংশ আসনে ঠিক এক মাসের মাথায় ভোট হয়ে যাবে। বিরোধীদের দাবি, বিজেপির সুবিধে করে দিতেই ওই ভাবে ভোট ফেলা হয়েছে। ঠিক যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে সাত দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

বিরোধীদের যুক্তি, ক্ষমতা ধরে রাখতে ওই তিন রাজ্য পাখির চোখ করেছে বিজেপি। মোদী-অমিত শাহেরা বুঝতে পারছেন তিন রাজ্যের ১৬৫টি আসনে ভাল ফল হলে মসনদে ফিরে আসা কঠিন হবে না। বিরোধীদের ব্যাখ্যা, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে গতবারের ফল ধরে রাখা, পশ্চিমবঙ্গের আসন সংখ্যা বাড়ানোই এখন লক্ষ্য বিজেপির। সে কারণে তিন রাজ্যের প্রতিটি কেন্দ্র পিছু যাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়, তার জন্য সাত দফায় ভোট হতে চলেছে বলে দাবি বিরোধীদের। যেমন রাজ্যে প্রথম তিনটি দফায় যে ১০টি আসনে ভোট হবে, তার ৮টিই উত্তরবঙ্গে, যেখেনা বিজেপি ফল ভাল করার আশা দেখছে বলে দাবি। আবার মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে ভোট রাখা হয়েছে একেবারে শেষ পর্যায়ে। যদিও এই সব অভিযোগ উড়িয়ে সুনীল অরোরার দাবি, ‘‘নকশাল প্রভাবিত এলাকা, দুর্গমতা ও জনঘনত্বের কথা মাথায় রেখে যাতে নির্বিঘ্নে ভোট করা সম্ভব হয়, সে কারণে সাত দফায় ভোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE