Advertisement
০৫ মে ২০২৪

বাঙালি ভোটারেই ভরসা রাখছে কংগ্রেস, বিজেপি 

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র প্রদ্যোৎবাবু আদতে তিনসুকিয়ার মার্গারিটার মানুষ। সে জেলায়ও প্রচুর বাঙালির বাস।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
নগাঁও শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০২
Share: Save:

পোস্টারটা চোখে অন্য রকম ঠেকল! এ তো পেটকাটা নয়, বাংলা ‘র’। অসমের ভোটে দিব্যি বাংলা পোস্টার।

‘শক্তিশালী কন্ঠ হব সবার/উন্নতির অংশীদার হইবে সবাই।’ পোস্টারে হাতজোড় করে হাসছেন কংগ্রেস প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈ। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় একমাত্র এই লামডিং এলাকাতেই দোকানপাটে বাংলা চোখে পড়ে। লামডিং থেকে লংকা—অবিভক্ত নগাঁওয়ের বাঙালিপট্টি। জেলা বিভাজনের পরে হোজাই জেলায় হিন্দু-মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হলেও ভাষার আধিক্যে বাংলাই এগিয়ে। নগাঁও লোকসভা কেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ বাঙালি ভোট টানতে এ বার কংগ্রেসের তুরুপের তাস ‘বাঙালি প্রেম’।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র প্রদ্যোৎবাবু আদতে তিনসুকিয়ার মার্গারিটার মানুষ। সে জেলায়ও প্রচুর বাঙালির বাস। প্রদ্যোৎবাবু বাংলা ভালই জানেন। বিভিন্ন সভায় বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাঙালিদের হাততালি কুড়োচ্ছেন তিনি। নগাঁওয়ে বাঙালি ভোটার চার লক্ষেরও বেশি। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এখানে হিন্দু-বাঙালিদের কাছে ‘খড়কুটো’। কোনও কাজ না করার অভিযোগ বার বার উঠলেও বর্তমান সাংসদ, বিজেপির রাজেন গোঁহাই চার বার এখান থেকে সাংসদ হয়েছেন। এ বার ‘বিতর্কিত’ রাজেনবাবুকে সরিয়ে রূপক শর্মাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কংগ্রেসের দাবি, রূপক শর্মা বাঙালি-বিরোধী। কিন্তু স্থানীয় একটি ক্লাবের যুব সদস্যরা জানালেন, ‘‘রাজেনবাবু তো বটেই, রূপক শর্মাও বিভিন্ন বাঙালি ক্লাব ও বাঙালি সংগঠনকে প্রচুর সাহায্য দিচ্ছেন।’’ বাঙালি যুবকদের বিভিন্ন কমিটিতে নেওয়া হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

তবু এরই মধ্যে লামডিং, লংকা এলাকায় প্রদ্যোৎবাবুর ‘বাংলা প্রচার’ বাঙালিদের মনোযোগ টানছে। লামডিঙের বাসিন্দা অজিত দে’র কথায়, ‘‘প্রদ্যোৎবাবুর আভিজাত্য, বাংলা ভাষণ আর ভদ্রলোক ভাবমূর্তি নিঃসন্দেহে ভোট টানবে।’’ নগাঁওয়ের সঙ্গীতশিল্পী কুমার দত্ত বলেন, ‘‘এখানকার বাঙালিরা বরাবর বাঙলার মণীষীদের আঁকড়ে ধরে বাঁচেন। বিজেপি ও আরএসএস নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করায় বিজেপির দিকেই পাল্লা ভারি থাকে। এই প্রথম বাংলা ভাষাকে হাতিয়ার করে লড়তে নেমেছে কংগ্রেস।’’

বাঙালি ভোট টানতে প্রদ্যোতবাবুর অন্যতম সহায়, কলকাতায় ছাত্র পরিষদের সম্পাদক থাকা অসমের কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ মজুমদার। অভিজিৎবাবুর দাবি, ‘‘১৯৯৭ সালে অগপ ‘ডি-ভোটার’ চালু করে বাঙালিদের হেনস্থা শুরু করে। এখন অগপ-বিজেপির আমলে এনআরসির জেরে বাঙালি আরও কোণঠাসা। নাগরিকত্ব আইন সংশোধনীর মাধ্যমে মোদী সরকার বাঙালিদের আদতে ‘বাংলাদেশি’ বলে স্বীকৃতি দিতে চাইছে।’’ তাঁর কথায়, শুধু হিন্দু-বাঙালিই নয়, এ বার এআইইউডিএফ নগাঁওয়ে প্রার্থী না দেওয়ায় মুসলিম ভোটও ভাগ হবে না। তাই প্রদ্যোৎবাবুর জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তবু প্রশ্ন থাকে, হিন্দু-বাঙালিদের ভোট কংগ্রেস পাবে তো?

এই একই বাঙালি ভোটের ভরসায় নগাঁওয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে লড়তে নেমেছেন সহদেব দাস। তাঁর দাবি, নগাঁওয়ের ৩০ শতাংশ বাঙালির নাম এনআরসির খসড়ায় বাদ পড়েছে। আতঙ্কিত বাঙালির ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই তাঁর ভরসা বাঙালিরা। তাঁর মতে, বিজেপি মুখে দরদ দেখালেও আদতে তাদের নীতির জেরে বাঙালি-বিরোধী মনোভাবই জোরদার হচ্ছে। কিন্তু যেখানে এত বাঙালি সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রচারে আনছে না কেন দল? মুহূর্তে ত্রস্ত সহদেববাবু জানান, ‘‘দিদি নগাঁওয়ে এসে আগুনঝড়া বক্তৃতা দিলে এখানকার বাঙালিরা আরও চাপে পড়বে। তাই আমরা দিদিকে প্রচারে আনতে ভরসা পাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE