Advertisement
০২ মে ২০২৪

অভিযুক্ত প্রার্থী বহু, মোদীর প্রতিজ্ঞাই সার

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

পাঁচ বছর আগের কথা। ২০১৪-র ১৪ এপ্রিল। প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার আগে নরেন্দ্র মোদী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত সাংসদ-বিধায়কদের বিশেষ আদালতে টেনে নিয়ে যাবেন তিনি। দোষীদের জেলে পাঠাবেন এক বছরের মধ্যে।

পাঁচ বছর পরে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণের সময়ে দেখা গেল, সব দলের প্রার্থী-তালিকাতেই অপরাধের রেকর্ড-থাকা নেতা-নেত্রীরা বর্তমান। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে সেই তথ্য পার্টির ওয়েবসাইটে তুলে ধরতেও রাজনৈতিক দলগুলির ঘোর অনীহা।

দু’দিন আগে অসরকারি সংগঠন এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস) মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, অপরাধের রেকর্ড থাকা কোনও ব্যক্তি প্রার্থী হলে নিজেদের ওয়েবসাইটে তা জানানোর কথা রাজনৈতিক দলগুলির। মনোনয়ন জমার পরে প্রার্থী তথা দলকে তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধের মামলার খতিয়ান স্থানীয় সংবাদপত্রে তিন বার বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের মনোনয়ন পর্ব শেষে জাতীয় দলগুলির ২২০ জন প্রার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ৮১ জনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের মামলা রয়েছে। ৪৭ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর ফৌজদারি মামলা। অথচ বিজেপি হোক কংগ্রেস, বিএসপি হোক বা এনসিপি— কোনও দলের ওয়েবসাইটেই সেই তথ্য দেওয়া হয়নি। একমাত্র তেলঙ্গানা রাজ্য বিজেপি-র ওয়েবসাইট ছাড়া আর কোথাও সেই তথ্য নেই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি, সে বিষয়েও মুখ খুলতে নারাজ বিজেপি, কংগ্রেস, বিএসপি, এনসিপি-র নেতারা। যদিও সিপিএম নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘ওয়েবসাইটে তথ্য দিতে হবে না কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে স্থানীয় সংবাদপত্রে আমরা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।’’

পাঁচ বছর আগে গাঁধীনগরের জনসভায় মোদী বলেছিলেন, ‘‘আমাকে রাজনৈতিক ব্যবস্থাটা পরিচ্ছন্ন করতে একটা মাত্র সুযোগ দিন। আমি অভিযুক্ত সাংসদ-বিধায়কদের জন্য বিশেষ আদালত তৈরি করব। তা-ও এক বছরের মধ্যে। এক বছর পরে, অপরাধীরা জেলে যাবে।’’ সাংসদ-বিধায়কদের পরে পঞ্চায়েত স্তরেও এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। কিন্ত গত পাঁচ বছরের খতিয়ান বলছে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিচ্ছন্ন করতে সুপ্রিম কোর্টকেই কার্যত উদ্যোগী হয়ে প্রতিটি রাজ্যকে বিশেষ আদালত তৈরির নির্দেশ দিতে হয়েছে। ওই আদালত তৈরির মামলা চলার সময়েই গত ডিসেম্বরে তথ্য এসেছে, দেশে বর্তমান ও প্রাক্তন সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে এখন ৪,১২২টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। তার মধ্যে বর্তমান সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ২,৩২৪টি।

শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল, কারও বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা থাকলে তাঁর প্রার্থী হওয়া আটকাবে কি না, তা নিয়ে সংসদই আইন আনতে পারে। কিন্তু মোদী সরকার নতুন কোনও আইন আনার চেষ্টা করেনি। এখন কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলেই তাঁর নির্বাচনে লড়ার ক্ষেত্রে বাধানিষেধ রয়েছে। এই প্রশ্নে অবশ্য সব রাজনৈতিক

দলেরই মত, এ দেশে বিরোধী দলের নেতাদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়। কাজেই একমাত্র দোষী সাব্যস্ত হলে তবেই ভোটে লড়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত। মুখ্য নির্বাচন

কমিশনার সুনীল অরোরার কাছে এডিআর আর্জি জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে প্রার্থীদের অপরাধের খতিয়ান যাতে রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের ওয়েবসাইটে দেয়— এটুকু অন্তত নির্বাচন কমিশন কার্যকর করুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE