দিনভর মোবাইলে মুখ গুজে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে মগ্ন নতুন প্রজন্মকে আকছার দেখা যায়। কিন্তু এ বারে তাতে পারদর্শী হলে মিলতে পারে সরকারি চাকরিও!
‘আপনি কি সরকারের জন্য কাজ করতে চান?’ এই মর্মে ঘটা করে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারি ওয়েবসাইট ‘মাই গভ’-এর পক্ষ থেকে এই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে, দফতরে, সংস্থায়, প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের পারদর্শী ব্যক্তিদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। তার জন্য বায়োডেটাও চাওয়া হয়েছে নাগরিকদের কাছ থেকে।
কারা এই সরকারি চাকরি পেতে পারেন?
সরকারি ব্যাখ্যায়, যাঁরা সফল ভাবে টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কেডিন, কোরা, হোয়াটসঅ্যাপ চালাচ্ছেন ও তাতে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন অথবা নিজের ব্লগের মাধ্যমে জনতার মতামতকে একজোট করছেন, এমন ব্যক্তিকেই বলা হবে ‘সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ’। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাঁর যত বেশি, তার ভিত্তিতে স্থির করা হবে, তাঁকে কোথায় নিয়োগ করা হবে।
সরকার যে শুধু ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র জন্য আবেদনপত্র চেয়েছে এমন নয়, গবেষক, সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, অ্যাপ ডেভেলপারদেরও সরকারি চাকরিতে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বাকি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি নেই, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পারদর্শী হলেই চলবে।
ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে ‘মাই গভ’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, এমন নাগরিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে বাছাই করে পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক জনকে। এ বারে সরকার এই প্ল্যাটফর্মকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু বিজেপি সূত্রের মতে, এর পিছনে একটি সুচিন্তিত কৌশলও রয়েছে। সেটি যতটা না সরকারি কাজে নাগরিকদের সামিল করার জন্য, তার চেয়েও বেশি রাজনৈতিক।
গত লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে পৌঁছে দেওয়ার পিছনে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি বড় ভূমিকা ছিল। আর তার নেপথ্যে ছিলেন রাজনৈতিক কৌঁসুলি প্রশান্ত কিশোর। মোদীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে প্রশান্ত এই কাজটি করতেন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের পর প্রশান্ত অনেকটা রাজনৈতিক নেতাদের ধাঁচেই শিবির বদল করেছেন। বিহারে নীতীশ কুমারকে সেই নরেন্দ্র মোদীর দলের বিরুদ্ধেই লড়িয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। এখন তিনি রাহুল গাঁধীর পথপ্রদর্শক।
প্রধানমন্ত্রী সবসময় নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মন্ত্রী, সাংসদদের পরামর্শ দেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বেশি সক্রিয় হতে। কিন্তু পরের লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য মোদীরও চাই আর এক জন প্রশান্ত কিশোর। যিনি নতুন নতুন ভাবনায় নতুন করে মেলে ধরতে পারবেন মোদীকে। গতবার মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সরকারে আসার কাজের থেকেও পরের বারের কাজটি আরও কঠিন। কারণ, মোদীকে সরকারের কাজের খতিয়ান জনতার সামনে তুলে ধরে লড়াইটি করতে হবে। দলের বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যে টিম রয়েছে, তা দিয়ে যে কাজটি হওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে এখন থেকেই হন্যে হয়ে নতুন মুখ খুঁজছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিজেদের সঙ্গে জোড়া যায়।
আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সক্রিয় যুবকরাই। ফলে আরও বেশি যুবককে কাছে টানাও সরকারের লক্ষ্য। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আট হাজারের বেশি আবেদনপত্রও সরকারের ঝুলিতে জমা হয়েছে। সমস্ত আবেদন খতিয়ে দেখাও শুরু করেছে সরকার। আবেদন করার জন্য আরও ১৫ দিন সময় রয়েছে। কে বলতে পারে, কার ভাগ্যে ছিড়তে পারে শিকে!
আরও পড়ুন: কার্ফু উঠল, থমথমে দশা কেটে আজ অনেকটা স্বাভাবিক বেঙ্গালুরু
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy