Advertisement
১৩ মে ২০২৪
Narendra Modi

পাল্টা জবাবের হুঙ্কার মোদীর

কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কারণ হিসেবে সেনা-গোয়েন্দাদের তরফ থেকে উঠে আসছে সেই পুরনো তত্ত্ব।

জয়সলমেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। পিটিআই।

জয়সলমেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৫৬
Share: Save:

বিনা প্ররোচনায় নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের জেরে উত্তপ্ত কাশ্মীর সীমান্ত। তার মধ্যে রাজস্থানের জয়সলমেরে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের হামলায় নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণ হারানোর তীব্র নিন্দা করে দিল্লিতে ইসলামাবাদ নিযুক্ত কূটনীতিককে ডেকে পাঠাল বিদেশ মন্ত্রক। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির অবশ্য দাবি, পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসুক দুই দেশ।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতি বছরই সীমান্তে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দীপাবলি কাটান নরেন্দ্র মোদী। শনিবার তাঁর দিন কেটেছে জয়সলমেরের লঙ্গেওয়ালা পোস্টে। সেখানেই জওয়ানদের সামনে তিনি বলেন, “ভারত (আলোচনার মাধ্যমে) বোঝা এবং বোঝানোর নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু কেউ যদি (আমাদের) পরীক্ষা করে দেখতে চায়, তা হলে জবাবও তেমনই জোরালো হবে।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “প্রয়োজন পড়লেই ভারত দেখিয়েছে যে, তার হাতে (আক্রমণের) যোগ্য জবাব দেওয়ার শক্তি আছে। তার জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিও আছে।…আজকের ভারত সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের মদতদাতাদের ঘরে ঢুকে মেরে আসে। (তাই) পৃথিবী বুঝেছে যে, সুরক্ষার প্রশ্নে এই দেশ সামান্যতম আপস করতেও তৈরি নয়।”

এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সরাসরিপাকিস্তানের নাম করেননি। কিন্তু বার্তা স্পষ্ট। কেন্দ্রের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরেই বিনা প্ররোচনায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান। শুধু শুক্রবারেই তাদের ছোড়া গোলা-গুলি-মর্টারে প্রাণ হারিয়েছেন চার সেনা, বিএসএফের এক সাব-ইন্সপেক্টর এবং ছয় গ্রামবাসী। ভারতীয় সেনার দাবি, পাল্টা হানায় প্রাণ গিয়েছে অন্তত আট পাক সেনার। ধ্বংস হয়েছে তাদের বহু ঘাটি, অস্ত্রাগার। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা তাই নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও প্রশ্ন উঠছে, মোদী মুখে যা-ই বলুন, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানের তৎপরতা কমছে কোথায়? এলাকার নিরীহ মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা কী ভাবে নিশ্চিত করবে তাঁর সরকার?

আরও পড়ুন: নেহরু-স্মরণ মোদীর, চলছে বিতর্ক-জল্পনা

শুক্রবারের সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে নয়াদিল্লিতে পাক হাইকমিশনের ‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার’ জাভেদ আলিকে শনিবার ডেকে পাঠিয়ে ঘটনার ঘোর নিন্দা করেছে সাউথ ব্লক। সরকারি সূত্রে খবর, পাকিস্তান হাইকমিশনে কড়া প্রতিবাদপত্র দাখিল করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান ডেস্কের যুগ্ম-সচিব জে পি সিংহ। এ দিন সন্ধ্যায় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নিরপরাধ ভারতীয় নাগরিকদের পাকিস্তানি সেনার এ ভাবে নিশানা করাকে কঠোরতম ভাষায় নিন্দা করছে ভারত। এটা আরও জঘন্য যে, এ দেশের এই উৎসবের মরসুমকে শান্তি বিঘ্নিত করা এবং জম্মু-কাশ্মীরে হিংসা ছড়ানোর জন্য বেছে নিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস জারি রাখা এবং জঙ্গি অনুপ্রবেশে পাকিস্তানের ধারাবাহিক মদত জুগিয়ে যাওয়াকেও তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে, পাকিস্তানকে আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে নিজেদের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে না-দেওয়ার প্রতিশ্রুতি যেন তারা মেনে চলে।’ উল্লেখ্য, একই রকম পাল্টা অভিযোগে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকে গত কাল দু’বার ডেকে পাঠিয়েছিল পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক। বিনা প্ররোচনায় ভারতীয় ভূখণ্ডে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদের পাল্টা দাবি, ভারতীয় সেনাই প্রথম গুলি চালায়।

কেন্দ্রীয় সূত্রের মতে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কারণ হিসেবে সেনা-গোয়েন্দাদের তরফ থেকে উঠে আসছে সেই পুরনো তত্ত্ব। তা হল, ও পার থেকে গুলি-গোলা ছুড়ে অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে সেই সুযোগে জঙ্গিদের সীমান্ত পার করিয়ে ভারতে ঢোকানোর চেষ্টা। কাশ্মীরে তুষারপাত শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ডিসেম্বরে বরফ আর ঠাণ্ডার কারণে জঙ্গিদের ভারতে ঢোকানো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে পাক সেনার পক্ষে। সূত্রের মতে, তাই এই ১০-১৫ দিনের মধ্যে তা করতে মরিয়া পাক সেনা। মছিল এবং কেরান সেক্টরে জঙ্গিদের অন্তত ১৫-২০টি ‘লঞ্চ প্যাড’ এখনও সক্রিয়। যেখানে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০ জন জঙ্গি অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এই জঙ্গিদের ঢোকানোর জন্যই মর্টার এবং গুলি ছোড়া বাড়িয়েছে পাকিস্তান। সেনার বিবৃতিতে দাবি, কেরান, উরি, নওগাম, দিওয়ারের মতো বিভিন্ন সেক্টরের একাধিক স্থানে প্ররোচনা ছাড়াই নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হচ্ছে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। উদ্দেশ্য একটিই, জঙ্গি অনুপ্রবেশ বাড়ানো।

ফি বছরের রুটিন অনুপ্রবেশ তো আছেই। সূত্রের খবর, সেই সঙ্গে আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য অতিরিক্ত কারণ দু’টি। প্রথমত কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পরে সেখানে গোলমাল তৈরিতে পাকিস্তান আরও বেশি মরিয়া। আর দ্বিতীয়ত, সীমান্তে চিনের সঙ্গে ভারত যখন প্রবল জটে আটকে, তখন তার সুবিধাও নিতে চাইছে তারা।

প্রতিক্রিয়ায় সরব কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির টুইট, “নিয়ন্ত্রণ রেখার দু’পারে হতাহতের ঘটনায় মর্মাহত। ভারত এবং পাকিস্তান নেতৃত্বের উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আলোচনা শুরু করা। (অটলবিহারী) বাজপেয়ী এবং (পারভেজ) মুশারফ সংঘর্ষ বিরতির প্রশ্নে যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন, সেখান থেকেই আবার আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।” দলের মুখপাত্র সুহেল বুখারি বলেছেন, উপত্যকায় শান্তি এবং সুস্থিতি ফেরাতে আলোচনা ছাড়া গতি নেই। পিপলস কনফারেন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ লোনের কথায়, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণ ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।’’

আঞ্চলিক দলগুলি আলোচনার কথা বললেও পাকিস্তান যে বরাবরই ভারতের প্রতি এমন শত্রুতার মনোভাব দেখিয়েছে, এ দিন তা বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লঙ্গেওয়ালা পোস্টের লড়াইয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “(তখন) পাকিস্তানি সেনা বাংলাদেশের নির্দোষ নাগরিকদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছিল। অত্যাচার করছিল মা-বোনেদের উপরে। নিজেদের সেই কদর্য রূপ থেকে পৃথিবীর নজর ঘোরাতে সেই সময়ে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে আক্রমণ করেছিল তারা।… কিন্তু আমাদের সেনা যে কড়া জবাব দিয়েছিল, তাতেই মনোবল ভেঙে গিয়েছিল শত্রুর।” তেমন কড়া জবাব দেওয়া কিংবা

‘ঘরে ঢুকে মারার’ কথা কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি ফের ভাবছে কি না, তার ইঙ্গিত স্বাভাবিক ভাবেই দেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE