Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নজরে আছেন, সরকার সর্বত্রগামী

ক্ষমতায় ফেরার পর একের পর এক পদক্ষেপে নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই ‘নজরদার রাষ্ট্র’ হয়ে ওঠার পথে এগোচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বাজেট অধিবেশনে প্রথমে আধার সংশোধনী বিল পাশ করিয়েছে সরকার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

সাবধান! বড়দা সব দেখছেন।

সত্তর বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত লন্ডনে বসে ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’ উপন্যাস লিখেছিলেন জর্জ অরওয়েল। যেখানে ‘বিগ ব্রাদার’ নেতা প্রতি মুহূর্তে নাগরিকদের উপর নজর রাখে।

ক্ষমতায় ফেরার পর একের পর এক পদক্ষেপে নরেন্দ্র মোদী সরকার সেই ‘নজরদার রাষ্ট্র’ হয়ে ওঠার পথে এগোচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বাজেট অধিবেশনে প্রথমে আধার সংশোধনী বিল পাশ করিয়েছে সরকার। তারপর পেশ হয়েছে ডিএনএ টেকনোলজি বিল। cটেলিযোগাযোগ মন্ত্রক সংসদে জানিয়েছে, ইন্টারনেট পরিষেবায় নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তিপরিসরের (প্রিভেসি) অধিকারকে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের পদক্ষেপে সেই মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। যেমন, ডিএনএ টেকনোলজি বিলে বিচারাধীন বা সন্দেহভাজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার সুযোগ রয়েছে। যাতে অপরাধীদের ধরতে সুবিধা হয়। কিন্তু বিচারাধীন মানেই অপরাধী নয়। একই ভাবে ক্রাইম রেকর্ডস বুরো ‘ফেসিয়াল রেকগনিশন সিস্টেম’-এ ছবি, ভিডিয়ো-সহ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবে। যাতে অপরাধী, সন্দেহভাজন, অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ এখনই এই ব্যবস্থা চালু করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হায়দরাবাদে গিয়ে সেই ব্যবস্থা উদ্বোধন করেছেন।

কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের যুক্তি, ‘‘এই সব পদক্ষেপ নজরদার রাষ্ট্রকেই প্রতিষ্ঠা দেবে। দেশে তথ্য সুরক্ষা আইন চালু করা দরকার ছিল। যাতে তথ্যের অপব্যবহার, আম নাগরিকের তথ্যকে কাজে লাগিয়ে নজরদারি রোখা যায়।’’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও মোদী সরকার মোবাইলের সিম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার-সংযোগ চালু রাখতে আধার আইনে সংশোধন করেছে। আয়কর রিটার্ন ফাইলের সঙ্গেও আধার যোগ করা হচ্ছে।

সিপিএম পলিটবুরো নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘এই সরকারের অভিমুখ যে নজরদার বড় দাদা হয়ে ওঠা, তার প্রমাণ হল, এরা নাগরিক অধিকার নস্যাৎ করে দিতে সব ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলে। ভোটের সময়েও দেখা গিয়েছে, রুটিরুজির সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা টেনে আনা হচ্ছে।’’

সরকারেরও যুক্তি, সব পদক্ষেপই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য। একই যুক্তিতে গত বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দশটি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাকে দেশের যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও সময়, যে কোনও কম্পিউটারে নজরদারি চালানোর ক্ষমতা দিয়েছিল।

এ বার ইন্টারনেট ব্যবহারে কেন্দ্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রেও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের যুক্তি, বেআইনি আড়ি পাতা ঠেকাতেই নতুন ব্যবস্থা। বাস্তব হল, কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিকে না জড়িয়েই আড়ি পাতা যায় বা ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি চালানো যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE