Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদীকে শপথে আমন্ত্রণ জানালেন নীতীশ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করলেন নীতীশ কুমার। গত কালই সরকারি ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। তারই জের টেনে আজ সকালে মোদীকে ফোন করেন নীতীশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও পটনা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৪
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করলেন নীতীশ কুমার। গত কালই সরকারি ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। তারই জের টেনে আজ সকালে মোদীকে ফোন করেন নীতীশ। তাঁর আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেননি প্রধানমন্ত্রী। বরং বিহারের ‘তদারকি মুখ্যমন্ত্রী’র সচিবালয় সূত্রের দাবি, মোদী জানিয়েছেন, শুক্রবারের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি হাজির থাকার ‘চেষ্টা’ করবেন। যদি না পারেন, তা হলে তাঁর প্রতিনিধি হয়ে নিশ্চয় কেউ যাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর নাম যে হেতু নরেন্দ্র মোদী, তাই কারও কারও ধারণা, শুক্রবার অল্প সময়ের নোটিসে পটনা হাজির হয়ে যেতে পারেন তিনি। এবং কেড়ে নিতে পারেন প্রচারের যাবতীয় আলো।

এখন প্রশ্ন হল, মোদী যদি সত্যি সত্যিই নীতীশের শপথে হাজির হয়ে যান, তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করবেন? মোদী আসবেন ধরে নিয়ে একটা সময় পটনা যাবেন না বলেই ঠিক করে ফেলেছিলেন তিনি। তার পরে মোদী আসছেন না জেনে মত পাল্টেছেন। শুক্রবার তাঁর যাবতীয় কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও একই রকম সঙ্কটে পড়তে পারেন বলে অনেকের মত। অস্বস্তি কিছু কম হবে না নীতীশের জোটসঙ্গী লালু প্রসাদেরও।

তা হলে, নীতীশ ওই পথে হাঁটছেন কেন? বিহারের রাজনীতিকদের মতে, রাজ্যে সরকার চালাতে গেলে প্রতি পদে যে কেন্দ্রের সহায়তা দরকার, তা নীতীশ বিলক্ষণ জানেন। মোদী ক্ষমতায় আসার পরে দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ রাখেননি মমতা। কিন্তু পরে সরকার চালানোর প্রয়োজনে (এবং কারও কারও মতে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের চাপে) তাঁকেও মোদীর সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে হয়েছে। তাই ভোটের ময়দানে যতই আকচাআকচি থাক, বিহারের ভোট যতই মোদী-নীতীশ দ্বৈরথের চেহারা নিক, সরকার গড়ার মুহূর্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শ পালন করতে চান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।

‘ভোট গয়ি, বাত গয়ি’ নীতি নিয়ে নীতীশ যেমন এগোচ্ছেন, কম যান না মোদীও। সকালে নীতীশের সঙ্গে ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই বার্তাই দিয়েছেন তিনি। বিহারের মুঙ্গেরে, গঙ্গার উপরে ২৭৭৪ কোটি টাকা খরচ করে রেল ও সড়ক সেতুর দীর্ঘ দিনের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। আর এর মাধ্যমেই মোদী বুঝিয়ে দিলেন, হারলেও উন্নয়নের তাসটি কিন্তু তিনি ছাড়ছেন না।

কারণ, বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গের ভোটের দিকেই নজর মোদীর। নীতীশের সঙ্গে মমতার ঘনিষ্ঠতাও তাঁর নজর এড়াচ্ছে না। তাই আজ শুধু বিহার নয়, গোটা পূর্ব ভারতের উন্নয়নের জন্য একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চট, হ্যান্ডলুম, কৃষিপণ্যের মতো ছোট ও মাঝারি শিল্পের রফতানিতে সুদে ভর্তুকির সিদ্ধান্ত নিয়ে পূর্ব ভারতের মন জয়ের চেষ্টা করলেন তিনি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘বিহারে দল পরাজিত হয়েছে বটে, কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধিতা যতই থাক, কোনও ভাবেই উন্নয়নের পথে তা প্রতিবন্ধক হবে না।’’

বিজেপি সূত্রের মতে, পূর্বের রাজ্যগুলিতে দল এখনও সে ভাবে প্রভাব খাটাতে পারেনি। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, বিহারে জিতে সেটিকেই দলের পুবের প্রবেশ দ্বার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু জাতপাতের অঙ্কে সে রাজ্যে হার বড় ধাক্কা। সেই বিপর্যয় পিছনে ফেলে উন্নয়নের তাসটিই খেলে যেতে চান মোদী। যাতে পশ্চিমবঙ্গের ভোটে প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়। আজ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি নিজের সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ানোর কাজটি সেরে রাখতে চাইলেন। বার্তা দিতে চাইলেন যে, ভোটের ফল যা-ই হোক, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি অটল।

তবে মোদীকে নীতীশের ফোন ঘিরে আজ পটনায় জল্পনা শুরু হয়ে যায়। তবে সে সব উড়িয়ে দিয়ে জেডিইউ রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসছেন কিনা সেটা বড় কথা নয়, এই আমন্ত্রণ জানানো ও তা গ্রহণ করাটাই রাজনৈতিক সৌজন্য।’’ শুধু মোদী নয়, এনডিএ-র শরিক থাকাকালীন যে সব বিজেপি নেতার সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল, সেই অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, নিতিন গডকড়ী, বেঙ্কাইয়া নায়ডুকেও আজ একের পর এক ফোন করে আমন্ত্রণ জানান নীতীশ। ফোন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ‘বিহারিবাবুদেরও’।

নীতীশের আমন্ত্রণ হাতিয়ার করে মোদী কোনও চমক দেন কিনা, তা জানতে অপেক্ষা আর একটা দিনের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE